ফের কি মহানগরে ফিরছে ‘গয়া গ্যাং’?
সম্প্রতি কলকাতা ও আশপাশ জুড়ে পরপর এটিএম জালিয়াতির ঘটনা তুলে দিল এই প্রশ্নটাই।
সর্বশেষ ঘটনাটিতে বরাহনগরে বেশ কয়েক হাজার টাকা খুইয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি। একের পর এক জালিয়াতির ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গোয়েন্দাদেরই একাংশ। বলছেন, মহানগরে ফের সক্রিয় হচ্ছে এটিএম জালিয়াতির চক্র। আর এই জালিয়াতির কথা শুনলেই পুলিশের মাথায় ভেসে ওঠে গয়া গ্যাংয়ের নাম। এটিএমে কারসাজি করে যারা জালিয়াতির অভিনব পন্থা উদ্ভাবন করেছিল। এ বারেও তারাই ফের নতুন কায়দা নিয়ে হাজির হচ্ছে কি না, প্রশ্ন উঠছে পুলিশের অন্দরেই।
কী এই গয়া গ্যাং?
লালবাজারের খবর, বছর কয়েক আগে কলকাতায় একের পর এক এটিএম জালিয়াতি হচ্ছিল। তদন্তে নেমে গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা জানতে পারে, সবক’টিই একই দলের কাজ। সদস্যেরা সকলেই বিহারের গয়ার বাসিন্দা। শুধু তা-ই নয়, রীতিমতো জালিয়াতি চক্রের প্রশিক্ষণ শিবিরও চলে সেখানে! তা থেকেই দলটার নাম দেওয়া হয় ‘গয়া গ্যাং’। তদন্তে উঠে এসেছিল, দলের সব সদস্যই রীতিমতো শিক্ষিত। আর তাদের শিক্ষকদের ‘ডিগ্রি’ দেখে তো তাজ্জব বনে যান গোয়েন্দা অফিসারেরাই। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, ‘‘জালিয়াতির শিক্ষকেরা কেউ এম-টেক তো কেউ এমবিএ পাশ। কারসাজি শেখাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রীতিমতো নকল এটিএম কাউন্টারও তৈরি হয়েছিল!’’
কী ভাবে জালিয়াতি করত এই গ্যাং?
পুলিশ বলছে, এটিএমের কী-প্যাডে আঠা লাগিয়ে রেখে কাউন্টারের বাইরে তক্কে তক্কে থাকত জালিয়াতেরা। গ্রাহক কার্ড পাঞ্চ করে পিন দেওয়া মাত্রই মেশিনের পর্দা কালো হয়ে যেত। কিন্তু আদতে মেশিন চালুই থাকত। মেশিন খারাপ ভেবে গ্রাহক বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই ভিতরে ঢুকে আঠা তুলে দেওয়া হতো। তাতে ফের সক্রিয় হয়ে যেত মেশিন এবং যেহেতু পিন দেওয়া ছিল, ফলে অনায়াসেই টাকাও তুলে নিত পারত জালিয়াতেরা। লাগাতার এই ধরনের ঘটনার পরে জালিয়াতি চক্র দমনে উঠেপড়ে লাগে লালবাজারের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। ধরপাকড়ের পাশাপাশি ব্যাঙ্কগুলির এটিএমে কী ভাবে কারসাজি রোধ করা যায়, তা-ও খুঁজে বার করেছিল ওই শাখার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল। ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ে একাধিক বার বৈঠকও করেছিল লালবাজার।
সম্প্রতি বরাহনগরের ঘটনায় একটি এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ। কিন্তু কয়েক বার চেষ্টাতেও মেশিন থেকে টাকা বেরোচ্ছিল না। সে সময়ে এক অপরিচিত যুবক এগিয়ে এসে তাঁকে সাহায্য করার ছলে বৃদ্ধের এটিএম কার্ড ও পিন হাতিয়ে নেয়। তা ব্যবহার করে কয়েক হাজার টাকা লোপাট করেছে জালিয়াতেরা। পরে জানা যায়, মেশিনে আঠা লাগিয়ে রাখায় টাকা তুলতে পারেননি ওই বৃদ্ধ। তার ফলেই সাহায্য করার অজুহাতে বৃদ্ধের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল জালিয়াত চক্রের সদস্য এক যুবক।
অনেকেরই প্রশ্ন, ২০১২ সালে পাকড়াও হওয়া গয়া গ্যাংয়ের সদস্যরাই কি তবে জেলের বাইরে এসে ফের জাল বিছোতে শুরু করেছে? কারণ, এমন কায়দায় জালিয়াতির উদ্ভাবক তো তারাই!
গয়া গ্যাং যে নতুন কারসাজি নিয়ে ফিরে এসেছে, এখনই তেমনটা মেনে নিতে চাইছেন না লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁদের এক জনের ব্যাখ্যা, গয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে এই জালিয়াতির কায়দার অনেকটাই ফারাক। গয়া গ্যাংয়ের কারসাজি সামনে আসার পরে ব্যাঙ্কগুলি এটিএমের প্রযু্ক্তিতে বদল এনেছে। ফলে কী-প্যাডে আঠা লাগিয়ে আর জালিয়াতি করা যাবে না। বরাহনগরে আঠা লাগিয়ে রাখা হয়েছিল মেশিনটিকে সাময়িক ভাবে বিকল করার জন্য। আদতে পুরোটাই হয়েছে হাতসাফাইয়ের মাধ্যমে। যে কায়দা দক্ষিণ শহরতলির একটি ঘটনাতেও দেখা গিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, গয়া গ্যাংয়ের সদস্যেরা জেল থেকে বেরিয়ে কি নতুন কায়দা নিতে পারে না?
ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমনে অভিজ্ঞ এক গোয়েন্দাকর্তার মন্তব্য, ‘‘সেটা তো এই ধরনের জালিয়াতির ধরপাকড়ের পরেই নিশ্চিত হয়ে বলা সম্ভব।’’
পুলিশের পরামর্শ, এটিএম জালিয়াতি রুখতে গোয়েন্দাদের তৎপরতার পাশাপাশি গ্রাহকদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। তাই এটিএম কাউন্টারে গিয়ে মেশিন বিকল দেখলে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়াই ভাল। অপরিচিত কারও সাহায্য নেওয়া কখনওই উচিত নয়। যদি কেউ আগ বাড়িয়ে সাহায্য করতে আসে, তা হলে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy