ফলাফল আসতে শুরু করার পরে বড়বাজারের একটি তৃণমূল কার্যালয়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
বিশ্বকাপ পর্যায়ের কোনও খেলার ফাইনাল কি এতটা টানটান হয়? যতটা টানটান শিরদাঁড়ায় বৃহস্পতিবার ভোট গণনার প্রতিটা মুহূর্ত বিশ্লেষণ করে গেলেন?
প্রশ্ন শুনে কম্পিউটারের পর্দা থেকে চোখ না সরিয়েই পদস্থ আমলার জবাব, ‘‘আমার স্ত্রী প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কেমন বুরোক্র্যাট, ভোটের ফল আগাম আঁচ করতে পার না? সম্ভবত এই পরিস্থিতির প্রস্তুতি ছিল না বলেই উত্তরটা দিতে পারিনি।’’
প্রায় গোটা দিন রাজ্যের একাধিক আসনে এক বার এগিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী, তো এক বার বিজেপি। চমকে দেওয়া ন্যূনতম ব্যবধানে একাধিক কেন্দ্রে এই দড়ি টানাটানি চলেছে। কার্যত পোড় খাওয়া সেফোলজিস্টদের মতোই তার বিশ্লেষণে দিনভর ব্যস্ত ছিলেন প্রশাসনের একাধিক পদস্থ কর্তা।
কিন্তু এর পর কী?
প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, এ বার তাঁদের কাজটা আরও কঠিন হবে। কারণ, প্রবল মেরুকরণের আবহে এক দিকে যখন রাজ্যের শাসকদলের আসনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, গোটা দেশের সঙ্গে এ রাজ্যেও তখন ততটাই তা বেড়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির। সেই শক্তিবৃদ্ধিই এখন এসে গিয়েছে প্রশাসনিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এত আসনসংখ্যা থাকায় এ রাজ্য একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পেতেই পারে। ফলে কেন্দ্রের প্রশাসনিক কাজকর্মে এ বার রাজ্যের অফিসারদের ডাক পড়তে পারে হামেশাই। চলতি পরিস্থিতিতে অতীতের মতো যা ‘এড়িয়ে’ যাওয়াও হবে বেজায় মুশকিল। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এক কথায় উভয়সঙ্কট। কার কথা শুনতে হবে, কারটা নয়, তা স্থির করতেই রক্তচাপ বাড়বে প্রথমে। পরেরটা তো পরে!’’
গত প্রায় আট বছরে সামাজিক এবং জনমোহিনী প্রকল্প কিছু কম হয়নি রাজ্যে। সেগুলির উপভোক্তার সংখ্যার নিরিখে এই ফলাফল দেখে বিস্মিত প্রশাসনের প্রায় সকলেই। এক কর্তার কথায়, ‘‘উন্নয়নই যে শেষ কথা নয়, তা বোঝা গেল। বাকি অনেক কিছুই এর পিছনে কাজ করেছে নিশ্চিত ভাবে। সেটা বুঝে নিতে হবে।’’
অনেকে আবার একেবারেই তাপ-উত্তাপহীন। চায়ের পেয়ালায় নিশ্চিন্ত চুমুকের ফাঁকে ভোট-ফলের দিকে চোখ দিয়েও এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘আমরা কাজ করতে এসেছি। এ সবে আমাদের কিছু আসে যায় না। ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ
পালন করব বরাবরের মতোই।’’ এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেখানে উপস্থিত নিজের সতীর্থের প্রশ্নভরা দৃষ্টি উপেক্ষা করেই তিনি ফের বলেন, ‘‘অনেকে বলতে পারেন, প্রশাসনেও এবার রং বদল শুরু হবে। আমি বলি, কুর্সিতে যিনিই থাকুন, সার্ভিস বুক অনুযায়ী ঊর্ধ্বতনের নির্দেশ পালনে বাধ্য যে কোনও অফিসার।’’
এর উল্টো দিকে সাধারণ কর্মীদের কারও কপালে ভাঁজ, কারও মুখে চাপা হাসি, কেউ আবার বেশ গম্ভীর ছিলেন এ দিন। কুর্সির নির্দেশ সরাসরি না এলেও তার প্রভাব তাঁদের উপরে পড়ে হামেশাই। এ দিন প্রায় সব সরকারি কার্যালয়ে হাজিরার হার অন্য দিনের তুলনায় ছিল বেশ কম। তবুও নবান্নে উপস্থিত কর্মীদের একটা বড় অংশ নিজেদের স্মার্ট ফোনে লাইভ ভোট-ফল দেখতে ব্যস্ত ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। ভোট-ফলাফলের পারদ ওঠানামার সঙ্গে তাঁদের উত্তেজনাও তাল মিলিয়েছে দিনভর। অবসরে মাটির ভাঁড়ে চা হাতে কেউ বলেছেন, ‘‘জানতাম এমনটাই হবে।’’ কেউ তা শুনে রীতিমতো ঝাঁঝিয়ে উঠেছেন। কেউ আবার পারিপার্শ্বিক একাধিক বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল!’’ যদিও ফলাফলের দাপটে এ দিন জায়গা পায়নি বকেয়া মহার্ঘভাতা এবং বেতন কমিশনের চর্চা। তার জায়গায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের নানা সম্ভাবনার চর্চা চলেছে একেবারে খোলাখুলি।
আর পুলিশ?
নবান্নের নিরাপত্তায় কর্মরত এক পুলিশকর্মী অবশ্য চাপাস্বরে বলেছেন, ‘‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy