Advertisement
০২ মে ২০২৪
ন্যাশনাল মেডিক্যাল

গ্রুপ ডি-কে থামান, বলছেন জুনিয়রেরা

শুধু পুলিশ নয়, পর্যাপ্ত ট্রলিও চাই। চাই অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ, ইমার্জেন্সি রিসাসিটেশন ইউনিট এবং দালালমুক্ত হাসপাতাল। চাই গ্রুপ ডি (চতুর্থ শ্রেণি)-র কর্মীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি। তবেই তাঁরা নিরাপদে থাকবেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

শুধু পুলিশ নয়, পর্যাপ্ত ট্রলিও চাই। চাই অক্সিজেন, জীবনদায়ী ওষুধ, ইমার্জেন্সি রিসাসিটেশন ইউনিট এবং দালালমুক্ত হাসপাতাল। চাই গ্রুপ ডি (চতুর্থ শ্রেণি)-র কর্মীদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি। তবেই তাঁরা নিরাপদে থাকবেন। সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা এই দাবিদাওয়ার কথাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের। জানিয়েছেন, পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো তো জরুরি বটেই, কিন্তু পাশাপাশি পরিকাঠামো না বাড়ালে এই হামলা ঠেকানো যাবে না। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের জন্য তাঁদের দোষী বানানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে তাঁরা কাজ বন্ধ রেখেছিলেন, সেটি বদলাতে কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

স্বাভাবিক ভাবেই এই সব দাবির কথা আড়ালেই রাখতে চেয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, নিজেদের দোষ আড়াল করতে উল্টো সুর গাইছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এখন আর কোনও অভাবের অজুহাত দেখানোর জায়গা নেই। হাসপাতালে সব আছে। পরিকাঠামো নেই বলে রোগী পরিষেবা পাচ্ছেন না, আর তাই ডাক্তারদের উপরে হামলা হচ্ছে, এ কথা বললে তা সর্বৈব ভুল বলা হবে।’’

জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য অবশ্য এর উল্টো। তাঁরা বলছেন, লক্ষ লক্ষ টাকার ফ্রি ওষুধ আছে হাসপাতালে। কিন্তু মুমূর্ষু রোগীকে শুইয়ে পরীক্ষা করার জায়গাটুকু নেই। ট্রলি থাকে না। স্ট্রেচার থাকে না। কোনও মতে একটা ট্রলি জুটলেও তা ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কোনও লোক পাওয়া যায় না।’’

যে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতের পরিজনের হাতে এক জুনিয়র ডাক্তারের মার খাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাত থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি চলেছিল, এ দিন সেই হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘আমাদেরই সামনে দালালেরা দৌরাত্ম্য চালায়। আমরা রোগীকে শোয়ানোর ট্রলি পাই না, গ্রুপ ডি কর্মীদের কেউ কেউ ট্রলি এনে ১০০ টাকা দাবি করেন। এতে রোগীর বাড়ির লোকজন মারমুখী হয়ে ওঠেন। তাঁরা ভাবেন আমরাও বোধহয় এর সঙ্গে যুক্ত। বহু বার কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।’’

বৃহস্পতিবার অন্য একাধিক মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরাও তাঁদের সমর্থন জানানোর জন্য ন্যাশনাল মেডিক্যালে হাজির হন। তাঁরাও এ দিন দাবি তুলেছেন, শুধুমাত্র জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে দায় চাপানোর খেলা বন্ধ হোক। এসএসকেএমের এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘আমরা জানিয়েছি, প্রতি দিন ‘ভ্যাকেন্ট বেড লিস্ট’ প্রকাশ করা হোক। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে। মুমূর্ষু রোগীকে ‘বেড নেই’ বলে ফেরত পাঠানোর মুহূর্তে যে উত্তেজনা তৈরির আশঙ্কা থাকে, তা অনেকটাই বন্ধ করা যাবে।’’

তবে হাসপাতালে এমন ‘নেই-রাজ্য’-এর কথা যে তাঁরা আগে সামনে আনেননি, তা নয়। মাস কয়েক আগে এই ন্যাশনাল মেডিক্যালেই চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে যখন কর্মবিরতি শুরু হয়, তখনও জুনিয়র ডাক্তারেরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। নিজেদের দাবিদাওয়া লিখিত ভাবেই পেশ করেছিলেন তাঁরা। সেই সময়ে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে এই দিকগুলিতে নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও তার পরে পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তনই হয়নি।

গত মাসেই এসএসকেএমে মার খেয়েছিলেন এক জুনিয়র ডাক্তার। সেই ঘটনার পরে গত ২৯ জুন একটি কনভেনশনের আয়োজন করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তৈরি হয় ‘জুনিয়র ডক্টরস ইউনিটি’ নামে একটি মঞ্চও। সেই মঞ্চের তরফেই রাজনৈতিক রং নির্বিশেষে এ বার তাঁদের পরিকাঠামো আদায়ের আন্দোলন চলবে বলে জানানো হয়েছে।

এসএসকেএমের এক জুনিয়র ডাক্তার এ দিন বলেন, ‘‘বারবার বলেও ইমার্জেন্সিতে একটা ইসিজি মেশিনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই কোনও রোগী এসে বুকে ব্যথা বললেই আমরা কার্ডিওলজি-তে পাঠিয়ে দিই। তাঁর বুকে ব্যথার সঙ্গে হার্টের সমস্যার আদৌ যোগ আছে কি না, তা না জেনেই। সেই রোগীর পরিবার হয়তো তখন অ্যাম্বুল্যান্স বা ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়েছেন। এ দিকে ইমার্জেন্সিতে ট্রলি নেই। হাঁটিয়ে বা পাঁজাকোলা করে রোগীকে ইমার্জেন্সি থেকে কার্ডিওলজি পর্যন্ত নিয়ে যেতে গিয়ে কত জনের অবস্থা যে আরও খারাপ হয়েছে, কত জন যে মারা গিয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। এর পরে রোগীর বাড়ির লোক আমাদের উপরে চড়াও হলে কোন পুলিশ আমাদের বাঁচাবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical college Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE