নিজের নামের ই-মেল নিজেই পেয়ে চমকে উঠেছিলেন দেশের প্রথম সারির একটি কর্পোরেট সংস্থার চেয়ারম্যান। তাতে লেখা ছিল, ‘উইকি ট্রেডার’ নামে এক সংস্থার কর্মচারী তাঁকে ১৮ হাজার ডলার কমিশন দিতে চেয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে সেই কর্মচারীর ই-মেল আইডি খোলা হয়েছে ওই কর্পোরেট সংস্থার চেয়ারম্যানের নামেই!
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শীর্ষকর্তার অভিজ্ঞতা আবার ভিন্ন। তাঁর ই-মেল আইডি জাল করে বিভিন্ন লোকের কাছে মেল পাঠানো হয়েছে! সেখানে নানা কুৎসা ছড়িয়ে অপদস্থ করা হয়েছে ওই কর্তাকে।
দু’টি ঘটনাতেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। এখনও কেউ ধরা পড়েনি। কিন্তু এই সব ঘটনায় আরও বড় আশঙ্কা করছেন সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশকর্তারা। তাঁরা বলছেন, এত দিন আমজনতাকে নিশানা করত হ্যাকারেরা। এ বার তাঁরা সরাসরি হানা দিচ্ছে দেশের প্রথম সারির সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের দিকেও।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই দুই কর্পোরেট কর্তার নাম করে পাঠানো ই-মেলে একাধিক লিঙ্ক (ওয়েবসাইট অ্যাড্রেস) দেওয়া ছিল। সেগুলিই আসল ‘বিষ’। ওই সব লিঙ্কে ক্লিক করলেই কম্পিউটারে ঢুকে প়ড়বে ভাইরাস। যা দিয়ে সেই কম্পিউটার-ব্যবহারকারীর যাবতীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে তো নেওয়া যাবেই, হ্যাকারেরা তাঁদের ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে ওই কম্পিউটার। টেরটিও পাবেন না সেই ব্যবহারকারী।
সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং রাজ্য সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, এ ভাবে ভুয়ো ই-মেল পাঠিয়ে প্রতারণার ছক নতুন নয়। কিন্তু শহরের নামী পরিচিত লোকেদের নাম করে ই-মেল পাঠালে তার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়। ফলে লোকে ওই ই-মেলের লিঙ্কে ক্লিক করবেন। তাতেই কাজ হাসিল হবে দুষ্কৃতীদের। ট্রোজানের মতো ভাইরাস দিয়ে তারা ই-মেল আইডি, পাসওয়ার্ড, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেবে। লুঠে নেবে টাকা, নানা দুষ্কর্ম করবে। পরিচয় ভাঁড়ানোর ফলে সমাজের মান্যগণ্য লোকেদের সম্মানহানি হবে। ‘‘এটা কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার,’’— বলছেন বিভাসবাবু।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার আর্থিক ও প্রশাসনিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এই হামলা যথেষ্ট আশঙ্কার বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারেরা। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কর্পোরেট সংস্থার কর্তাদের কম্পিউটারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আর্থিক লেনদেনের পাসওয়ার্ড থাকে। সেগুলি এক বার হাতে চলে এলে হ্যাকারেরা সংস্থার বড় ক্ষতিও করতে পারে।’’ তদন্তকারীদের কথায়, আমজনতার ক্ষেত্রেও এমন আশঙ্কা রয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও এ ভাবে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে হ্যাকারেরা। সে ক্ষেত্রে নানা অদ্ভূতুড়ে খবর বা যৌন উত্তেজক ছবি-ভিডিওকে হাতিয়ার করা হচ্ছে।
তা হলে এই পরিস্থিতিতে
দাওয়াই কী?
পুলিশ ও সাইবার অপরাধ দমনে অভিজ্ঞ অফিসারেরা বলছেন,
• ই-মেলে কোনও লিঙ্ক দেখলেই তড়িঘড়ি ক্লিক করবেন না। আগে সেটি যাচাই করুন।
• কোনও সংস্থার শীর্ষকর্তা তাঁর অপরিচিত ব্যক্তিকে সরাসরি ই-মেল পাঠান না। আর্থিক লেনদেনের প্রস্তাবও দেন না।
•সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ক্ষেত্রেও লিঙ্ক দেখলে ক্লিক করবেন না।
•সন্দেহজনক মেল দেখলে ‘স্প্যাম’ হিসেবে চিহ্নিত করুন।
• সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বন্ধুত্ব করার আগে যাচাই করুন।
•সন্দেহভাজন বন্ধুকে ‘ব্লক’ করে দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy