Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Examination

হতাশ না হয়ে এগোতে হবে, বলছেন মনোবিদেরা

মনোবিদ ও মনোরোগের চিকিৎসকেরা এই পরামর্শ দিলেও পরীক্ষার্থীদের কিন্তু উৎকণ্ঠা যাচ্ছে না। তাদের মনে এখন হাজারো প্রশ্ন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

কেউ বলছেন, জীবন একটা পরীক্ষাতেই থেমে থাকবে না। আরও অনেক পরীক্ষা বাকি আছে। তাতে ভাল করতে হলে এগিয়ে যেতে হবে। কারও আবার বক্তব্য, করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষা যে হয়নি, সেটাই স্বাভাবিক ভেবে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে। মনোবিদ ও মনোরোগের চিকিৎসকেরা এই পরামর্শ দিলেও পরীক্ষার্থীদের কিন্তু উৎকণ্ঠা যাচ্ছে না। তাদের মনে এখন হাজারো প্রশ্ন।

সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থী রাহুল সেনগুপ্ত এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী সিদ্ধার্থ বসু জানাচ্ছে, তারা পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় ভাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে সন্দিহান দু’জনেই। ওদের মতো লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর এখন প্রশ্ন, যে পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে, তাতে মেধার প্রতি সুবিচার হবে তো?

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম মনে করেন, এই উৎকণ্ঠা খুবই স্বাভাবিক। তাঁর মতে, এ যেন ম্যারাথন দৌড়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে জানতে পারা যে, ম্যারাথনই বাতিল হয়ে গিয়েছে। জয়রঞ্জন বলেন, “আমার পরামর্শ হল, ওদের ভাবতে হবে যে, আরও কিছুটা দৌড় বাকি রয়েছে। এই ভেবেই দৌড়টা শেষ করতে হবে। মনে রাখা ভাল, কেউ একা নয়, সকলেই কিন্তু একই পরিস্থিতিতে পড়েছে। এবং সবাইকেই এই ম্যারাথন দৌড় শেষ করতে হবে। এখানে হতাশ হওয়ার কোনও জায়গা নেই।”

আর এক মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব মনে করেন, পরীক্ষা বাতিল হওয়ার দরুণ পরীক্ষার্থীদের মনে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে পারেন মা-বাবারাই। তিনি বলেন, “পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, হা-হুতাশ করছেন তাদের মা-বাবারাও। সন্তানের মনেও তা প্রভাব ফেলছে। মা-বাবাদের উচিত, এই হা-হুতাশ বন্ধ করে ছেলেমেয়েদের এটা বুঝিয়ে বলা যে, পরীক্ষা হল না ঠিকই, কিন্তু অন্য কোনও পদ্ধতিতে মূল্যায়ন ঠিকই হবে। আর এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সেটাই মেনে নিতে হবে। পরিস্থিতিকে মেনে নেওয়াটা শেখাতে হবে মা-বাবাকেই। সেই সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ভাবতে হবে, তার যদি মেধা ও পরিশ্রমের কমতি না থাকে, তা হলে সে পরবর্তী পরীক্ষায় ভাল ফল করবেই।”

শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করেন মনোবিদ সুগত ঘোষ। তিনি জানালেন, পরীক্ষা বাতিল হওয়া পরীক্ষার্থীরাই শুধু নয়, বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়ারাও তাঁর কাছে নানা মানসিক সমস্যা নিয়ে আসছে। সুগতবাবুর মতে, সকলেই যে হেতু পরীক্ষা না-দিয়েই কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছে, তাই পরিস্থিতি সকলের ক্ষেত্রে একই রকম। তিনি বলেন, “ধরা যাক, কোনও সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাঁতার না-জানা সবাইকে প্রথমেই জলে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার সবাইকেই কিন্তু পুলের রড ধরে হাত-পা ছুড়তে হবে। এ বার তাদের মধ্যে যারা ভাল করে হাত-পা ছুড়তে পারবে, তারাই আগে সাঁতার শিখে যাবে। অর্থাৎ, পরিস্থিতিকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।”

তবু পরীক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন কিছু থেকেই যাচ্ছে। তাই দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাকি পড়ুয়াদের জন্যও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন সাউথ পয়েন্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বললেন, “শুধু সাউথ পয়েন্টের পড়ুয়ারাই নয়, যে কোনও স্কুলের পড়ুয়ারা আমাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের মাধ্যমে মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারবে।”

গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ়, টাকি হাউসের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক বললেন, “একাদশ শ্রেণিতে কী কী বিষয় নিলে ভাল হয়, তা জানতে কোনও পড়ুয়া যদি কাউন্সেলিং করাতে চায়, তা হলে সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Psychology Examination COVID 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE