Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Kali Puja

Kali Puja 2021: বাজি বন্ধ হতেই বাজার চাঙ্গা প্রদীপের, চিন্তা জোগান নিয়ে

পর্যাপ্ত মাটি না পাওয়ায় ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই অল্প সময়ের মধ্যে আদৌ কত বেশি মাটির প্রদীপ তৈরি সম্ভব, সেটাই ভাবাচ্ছে শিল্পীদের।

আয়োজন: পছন্দ করে মাটির প্রদীপ কিনছেন এক মহিলা। শনিবার, যদুবাবুর বাজারে।

আয়োজন: পছন্দ করে মাটির প্রদীপ কিনছেন এক মহিলা। শনিবার, যদুবাবুর বাজারে। নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:১৮
Share: Save:

মাটির প্রদীপের আলোয় ঝলমল উৎসবের আঙিনার চিরকালীন ছবিতে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিয়েছিল চিনা আলো। তবে গত কয়েক বছরে অল্প অল্প করে ফিরতে শুরু করেছিল মাটির প্রদীপও। আর এ বছর রাজ্যে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ ঘোষণা হতেই ছক্কা হাঁকিয়েছে মাটির প্রদীপ! কারণ এ বছরে তার চাহিদা এক ধাক্কায় বেড়েছে কয়েক গুণ। চিনা আলোর বদলে প্রদীপের আলোতেই উৎসব পালন করতে চান অনেকে। কিন্তু মাটির দামও বেড়ে যাওয়ায় অল্প সময়ে পর্যাপ্ত প্রদীপ তৈরি করা যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ে প্রদীপ শিল্পীরা।

দিন তিনেক আগে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কালীপুজো ও দীপাবলিতে দু’ঘণ্টার জন্য পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানোয় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা জানালেও সে পথে হাঁটেনি কলকাতা হাই কোর্ট। বরং রাজ্যে উৎসবের মরসুমে সব ধরনের বাজি পোড়ানোর উপরে শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। আলোর উৎসবে সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ হওয়ায় হু হু করে বাড়ছে মাটির প্রদীপের চাহিদা। খুচরো থেকে পাইকারি— সব স্তরের ব্যবসায়ীরাই এখন প্রদীপের খোঁজে ভিড় করছেন শিল্পীদের কাছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মাটি না পাওয়ায় ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এই অল্প সময়ের মধ্যে আদৌ কত বেশি মাটির প্রদীপ তৈরি সম্ভব, সেটাই ভাবাচ্ছে শিল্পীদের।

শিল্পীদের একাংশের দাবি, গত কয়েক মাসে মাটির দাম এক ধাক্কায় বেড়েছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। কয়েক মাস আগেও এক গাড়ি মাটির দাম ছিল ন’হাজার টাকা। অথচ এখন তার দাম দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। এমনকি, টাকা দিলেও যে সেই মাটি সহজে মিলছে, তা নয়। পাশাপাশি, উৎসবের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ করেই মাটির চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।

কলকাতা পুর এলাকার ৫ নম্বর গোরাপদ সরকার লেনের বাসিন্দা, প্রদীপ শিল্পী কৈলাস প্রজাপতি (হনুমান) বলছেন, ‘‘বাজি ফাটানো নিষিদ্ধ হওয়ায় এবং চিনা আলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কমায় সকলেই এখন মাটির প্রদীপের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু মাটির দাম যেমন বেড়েছে, তেমনই মাটিও ঠিকমতো মিলছে না। তাই এই কয়েক দিনে যে বেশি করে প্রদীপ তৈরি করে বিক্রি করব, সেই উপায়ও নেই। ঘরে যেটুকু মাটি রয়েছে, তা দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।’’ শহরের আর এক প্রদীপ শিল্পী লাল্টু প্রজাপতি বললেন, ‘‘চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভেবেছিলাম, এ বছরে হয়তো লাভের মুখ দেখব। কিন্তু মাটির দামও বেড়েছে। সেই সঙ্গে হাতে সময়ও বিশেষ নেই। এই ক’দিনে কী করে চাহিদা পূরণ করব, জানি না।’’

মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর প্রদীপের দামও বেশ কিছুটা বেড়েছে বলেই জানালেন শিল্পীরা। গত বছর একশোটি প্রদীপের দাম ৬০-৭০ টাকা হলেও এ বছরে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এমনকি, ৩০০ টাকা দরেও বিকোচ্ছে ১০০টি প্রদীপ। রঙিন প্রদীপের দাম আরও বেশি— একশোটির দাম দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা বা তারও বেশি। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল আর্ট পট মেকার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট মোহনলাল প্রজাপতি বললেন, ‘‘সবাই তো মাটির প্রদীপের খোঁজ করছেন এ বছর। আর আদালত বাজি পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরে ব্যবসায়ীদের ফোনে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি। এই ক’দিনে চাহিদা অনুযায়ী প্রদীপ সরবরাহ করতে পারব কি না, সেটাও এখনও কথা দিতে পারছি না।’’

ইতিমধ্যেই বড়বাজার, কুমোরটুলি, দক্ষিণদাঁড়ি-সহ শহরের বিভিন্ন বাজারে প্রদীপের পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে চাহিদা অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

বড়বাজারের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘‘গত বছরে করোনার জন্য তো প্রদীপ সে ভাবে বিক্রিই হয়নি। এ বছর হাই কোর্টের রায়ে একটু কপাল খুলেছে আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE