আগামী ১ এপ্রিল থেকে কলকাতায় ইউনিট এরিয়া পদ্ধতিতে সম্পত্তিকর আদায় শুরু করছে কলকাতা পুর-প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ‘দ্য কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬’ পাশ হয়েছে। নতুন আইন বলে কলকাতা পুরসভাকে ওই পদ্ধতিতে সম্পত্তিকর আদায়ের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বিল পাশের পরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘সম্পত্তিকর সরলীকরণ এবং ইনস্পেক্ট-রাজ দূর করতে এই সংশোধনী আনা হল। এই পদ্ধতিতে শহরবাসী নিজেরাই নিজেদের সম্পত্তির মূল্যায়ন করতে পারবেন।’’ বিধানসভার বাইরে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১০ সালে পুরসভার ক্ষমতায় বসে শহরবাসীর সুবিধার্থে পুরকর সরলীকরণের নির্দেশ দেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই কাজ চলছিল। আজ তা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হতে চলেছে।’’
ইউনিট এরিয়া পদ্ধতি কী? পুরসভা সূত্রের খবর, এত দিন কলকাতা শহরে সম্পত্তির পরিমাণ দেখে কর নির্ধারণ হয়ে চলেছে। নতুন পদ্ধতিতে কলকাতা শহরকে সাতটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এ, বি, সি, ডি, ই, এফ এবং জি জোন। যে এলাকা যত বেশি উন্নত, তা প্রথম জোন অর্থাৎ এ গ্রুপে। তেমনি ভাবে তার থেকে কম বি— এই ভাবে একেবারে অনুন্নত এলাকা জি জোনে থাকবে। সেই কথাই এ দিন শোনা গিয়েছে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মুখে। বিধানসভায় তিনি বলেছেন, ‘‘বাস রাস্তা থেকে বাড়ি কত দূরে, কতটা এলাকা নিয়ে বাড়ি, কী কী পরিষেবা মিলছে, তার ভিত্তিতে ইউনিট এরিয়ায় কর ধার্য হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগেই কলকাতায় ‘ইউনিট এরিয়া’ পদ্ধতিতে সম্পত্তি কর আদায় প্রক্রিয়া চালু করার প্রচেষ্টা শুরু করে তৃণমূল বোর্ড। নতুন ওই ব্যবস্থায় করের কাঠামো কী হতে পারে, তা নিয়ে দফায় দফায় শহরে বিশিষ্ট নাগরিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে ডেকে তাঁদের মতামত নেওয়ার কাজ চালায় পুর-প্রশাসন। মেয়র শোভনবাবু জানান, সেখান থেকে বোঝা যায়, নতুন কর কাঠামো ব্যবস্থায় অনেকের সম্পত্তিকর ভীষণ বেড়ে যাবে। কোনও ক্ষেত্রে এক ধাপে তা অনেকটাই কমে যাবে। প্রথম ক্ষেত্রে বাড়তি করের চাপে কাহিল হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল এক শ্রেণির মানুষের। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পুরসভার আয় অনেকটাই কমে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেই দুই ধাক্কা সামলাতে ইউনিট এরিয়া পদ্ধতির সঙ্গে ‘ক্যাপ-ইন’ প্রথা যুক্ত করা হল।
ক্যাপ-ইন কী? মেয়র জানান, নতুন পদ্ধতিতে কারও কর অনেকটা বাড়লেও পুরসভা একটা নির্দিষ্ট শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে। কারও ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতিতে কর অনেকটা কমলে সে ক্ষেত্রে কমানোর পরিমাণও নির্দিষ্ট শতাংশ হবে। উদাহরণ দিয়ে মেয়র বলেন, পুরনো পদ্ধতিতে কারও কর ছিল ১০০ টাকা। ইউনিট এরিয়া চালু হওয়ায় তা ১০০ শতাংশ বেড়ে ২০০ টাকা হতে পারে। কিন্তু পুরসভা ততটা বাড়াবে না। হয়তো ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ১২০ টাকা নেবে। একই ভাবে কারও সম্পত্তিকর ছিল ১০০ টাকা। নতুন পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশ কমে হয়ে গেল ৫০ টাকা। সে ক্ষেত্রেও অতটা না কমানো হবে না। ২০ শতাংশ কমিয়ে ৮০ টাকা করা হবে। এটাই ক্যাপ-ইন।
পুরনো কর ব্যবস্থার পরিবর্তন জরুরি কেন? পুরসভার এক আমলার কথায়, পুরনো ব্যবস্থায় সম্পত্তিকর নির্ধারণের সবটাই করে থাকেন কর মূল্যায়ন দফতরের ইনস্পেক্টরেরা। এটি খুব জটিল প্রক্রিয়া হওয়ায় তা নিয়ে সমস্যা একটা ছিলই। কাউকে ‘খুশি’ করে কেউ কেউ ছাড়ও পেয়ে যেতেন বলে পুরসভা সূত্রেরই খবর। তাতে কেউ করে ব্যাপক ছাড় পেয়ে যেতেন, কেউ বা টাকা না দেওয়ায় মোটা করের বোঝা মাথায় নিতেন। সবই কর মূল্যায়নে নিযুক্ত অফিসারের মর্জির উপরে নির্ভর করত। সংগ্রহকারী একাংশ অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও জমা পড়েছে পুর-প্রশাসনের কাছে। এ দিন পুর-আইন সংশোধনের ফলে সে সব সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করছেন মেয়র।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে ইউনিট এরিয়া পদ্ধতিতে সম্পত্তিকর আদায় চালু করা হবে। এখন যাঁরা পুরনো পদ্ধতিতে কর দেন, তাঁরাই ক্যাপ-ইনের সুযোগ পাবেন। আর যাঁদের সম্পত্তি এখনও মূল্যায়ন (অ্যাসেসমেন্ট) হয়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতিতে কর আদায় করা হবে। যাদবপুর, গার্ডেনরিচ, বেহালা এবং জোকার বেশ কিছু সম্পত্তি এখনও ‘আন-অ্যাসেস্ড’ হয়ে আছে বলে জানান মেয়র। ক্যাপ-ইনের সুযোগ তাঁদের দেওয়ার প্রশ্ন নেই বলে তিনি জানিয়ে দেন। ক্যাপ-ইনের ছাড় কত শতাংশ হবে, এক মাসের তা ঠিক করা হবে বলে জানান শোভনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy