গভীর রাতের কলকাতা যেন বদলে গিয়েছে! মাসখানেক ধরে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গার্ডরেল, রাস্তায় দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন পুলিশ অফিসারেরা। বেপরোয়া গা়ড়ি কিংবা বেসামাল চালক দেখলেই হচ্ছে ধরপাক়়ড়। পুলিশ সূত্রের খবর, সোনিকা-বিক্রম কাণ্ডের পর থেকেই এই কড়াকড়ি চালু করেছে লালবাজার।
যদিও এই কড়াকড়ির স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, মহানগরে কোনও ঘটনা ঘটলেই কড়াক়ড়ি বেড়ে যায়। তার পরে সময় গড়ালে ধীরে ধীরে আলগা হয় প্রশাসনের রাশ। যত দিন না ফের কিছু ঘটছে, তত দিন রাশ শক্ত হয় না। তাই বিক্রম-কাণ্ডের রেশ কাটলেই রাতের শহরে ফের বেপরোয়া গা়ড়ি চালানোর হুজুগ বাড়বে কি না, সেই আশঙ্কা থাকছেই।
এই প্রসঙ্গেই পুলিশের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি রেড রোডে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে পিষে দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া। তার পরে কিছুটা ক়়ড়া হয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কড়াকড়ি উধাও হয়েছিল।
২৯ এপ্রিল অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যান তাঁর পাশের আসনে বসে থাকা মডেল সোনিকা সিংহ চৌহান। পুলিশের দাবি, বিক্রম মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই লালবাজার রাতের শহরে বেপরোয়া গাড়ি রুখতে নতুন ফরমান জারি করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গুরুত্বপূর্ণ সব মোড়ে রাত এগারোটার পর থেকে গার্ডরেল বসছে। তার ফলে গাড়ির গতি ধীরে করতে হবে চালককে। সারা রাত সিগন্যাল চালু থাকছে। কেউ তা না মানলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মামলা করা হচ্ছে। লালবাজারের নির্দেশে, থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি, অতিরিক্ত ওসি-রা রাতে পালা করে রাস্তায় থাকছেন। বাহিনীর সঙ্গে থাকছে ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’। মত্ত চালক ধরা প়ড়লেই মামলা হচ্ছে। রাতে সার্জেন্টরাও পথে নামছেন। বিভিন্ন পানশালার সামনেও থাকে পুলিশ। মত্ত খদ্দেরদের উপরে লাগাম টানতে পানশালাগুলিকেও সতর্ক করেছিল কলকাতা পুলিশ।
পুলিশের দাবি, বেপরোয়া গাড়ি কতটা ক্ষতি করল, তা দেখে মামলা হয়। গাড়ি ফুটপাথে ধাক্কা দিলে যে ধারায় মামলা হবে, পথচারীকে ধাক্কা দিলে তার চেয়ে গুরুতর ধারায় মামলা হয়। ‘‘রে়ড রোডে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে বায়ুসেনা অফিসারকে পিষে দেওয়ায় প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়ার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছিল। তিনি এখনও জেলবন্দি,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা। রাতে বেপরোয়া গা়ড়ি রোখার এই কাজ সব সময়েই চলবে বলেও আশ্বাস পুলিশকর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy