Advertisement
E-Paper

শয্যা ভরাতে গিয়ে রোগীরা একত্রে, ছড়াচ্ছে ‘সংক্রমণ’

একই ওয়ার্ডে পাশাপাশি শয্যায় সদ্য বন্ধ্যকরণের রোগী, স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী, গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়া রোগী, আবার পুড়ে যাওয়া রোগীও! শয্যা ভরাতে গিয়ে এ ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীকে একই ওয়ার্ডে নিয়ে আসায় সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:১৭
একই ওয়ার্ডে ভাগাভাগি। — নিজস্ব চিত্র

একই ওয়ার্ডে ভাগাভাগি। — নিজস্ব চিত্র

একই ওয়ার্ডে পাশাপাশি শয্যায় সদ্য বন্ধ্যকরণের রোগী, স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী, গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়া রোগী, আবার পুড়ে যাওয়া রোগীও! শয্যা ভরাতে গিয়ে এ ভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীকে একই ওয়ার্ডে নিয়ে আসায় সংক্রমণ ছড়ানোর হার বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। অভিযোগ তুলেছেন নার্স ও রোগীদের একাংশই। নার্সরা মৌখিক ভাবে সুপারের কাছে অভিযোগ করেছেন। অন্য দিকে, সংক্রমণ রুখতে অন্তত গ্যাংগ্রিন হওয়া ও পুড়ে যাওয়া রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে সরানোর দাবি তুলে সুপারকে চিঠি দিয়েছেন গাইনি-১ ওয়ার্ডের রোগীরা।

অভিযোগের কেন্দ্রে এই ওয়ার্ডই। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, এসএসকেএমের ‘স্যাটেলাইট’ হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও শম্ভুনাথে বেশ কিছু বিভাগে (যার মধ্যে রয়েছে স্ত্রী-রোগ বিভাগও) রোগী কম আসছেন। এসএসকেএমে যেখানে স্ত্রী-রোগ বিভাগে ভর্তি হওয়া নিয়ে কার্যত মারামারি হয়,
সেখানে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শম্ভুনাথের স্ত্রী-রোগ বিভাগে ৪৪টি শয্যার মধ্যে ২০-২৫টি খালিই থাকত। অথচ, ওই হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন।

৮ ডিসেম্বর রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বিষয়টি ওঠে। শম্ভুনাথের দায়িত্বে রয়েছেন এসএসকেএমের অধ্যক্ষা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তিনিই প্রস্তাব দেন, শুধু মেয়েলি রোগের জন্য ৪৪টি শয্যা একটি ওয়ার্ডে না-রেখে সেখানে ফিমেল সার্জারি ও ব্রেস্ট ক্লিনিকের রোগী মিলিয়ে রাখা হোক। তা হলে সব শয্যারই যথাযথ ব্যবহার হবে। অন্য সদস্যেরা মঞ্জুদেবীর প্রস্তাব সমর্থন করেন। ঠিক দু’দিনের মাথায় ‘গাইনি-১’ নাম দিয়ে যে ওয়ার্ড তৈরি হয়, সেখানে ৪৪টি শয্যাকে তিন ভাগ করা হয়— মেয়েলি রোগের জন্য ২০টি, ফিমেল সার্জারির জন্য ২০টি ও ব্রেস্ট সার্জারির ৪টি।

সমস্যার শুরু তার পরেই। নার্সদের বড় অংশের অভিযোগ, নতুন ব্যবস্থায় জরায়ু বাদ দেওয়া রোগী বা ডিম্বাশয়-জরায়ুতে টিউমার হওয়া রোগীদের পাশেই রাখা হচ্ছে অন্য অসুখে আক্রান্তদেরও। এক নার্সের কথায়, ‘‘এতে ভয়ঙ্কর ক্রস-ইনফেকশন ছড়াচ্ছে। যে রোগীদের পাঁচ দিনে বাড়ি যাওয়ার কথা, তাঁরা সংক্রমণে ভুগে ১৫ দিনে বাড়ি যাচ্ছেন। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানালেও লাভ হয়নি।’’

অথচ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকও বলছেন, ‘‘গ্যাংগ্রিনের রোগী, এবং পোস্ট-অপারেটিভ রোগীদের আলাদা রাখা উচিত। একসঙ্গে রাখলে এঁদের শয্যার মধ্যে অনেক দূরত্ব রাখতে হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের কিছু বিধি-নিষেধও মানতে হয়। দেখতে হবে সরকারি হাসপাতালে সেগুলি মানা সম্ভব হচ্ছে কি না।’’

নার্সদের দাবি, গত দু’সপ্তাহে গাইনি-১ ওয়ার্ডে অন্তত ৯ জন রোগিণীর ক্রস-ইনফেকশনের জেরে সংক্রমণ হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগিণী বলেন, ‘‘কিছু দিন আগেই পুলিশ এক রোগিণীকে ভর্তি করে গিয়েছিল। তাঁর এমন গ্যাংগ্রিন হয়েছিল যে পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সবাই সই করে সুপারকে চিঠি দেওয়ায় ওই রোগিণীকে সরানো হয়েছে। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।’’ এ ব্যাপারে মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি তো সমিতির মালিক নই। এই পরিকল্পনায় অসুবিধা হলে নতুন পরিকল্পনা হবে। শম্ভুনাথকে নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’

কিন্তু সেটা করার আগেই যদি সংক্রমণের ফলে রোগীর প্রাণসংশয় হয়, তা হলে? তাঁরা নিজেরা চিকিৎসক হয়ে কী ভাবে একসঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ডের রোগীকে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন? মঞ্জুদেবী বলেন, ‘‘আপনাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলব না’’। শম্ভুনাথের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাসের এ ব্যাপারে উক্তি, ‘‘এ সব ডাক্তারি সিদ্ধান্ত। আমার কিছু
বলার নেই।’’

গত ৩ জানুয়ারি ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, সদ্য স্তনের অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন তিন রোগিণীর পাশের শয্যাতেই শুয়ে আছেন গ্যাংগ্রিন হওয়া দু’জন। শম্ভুনাথের সুপার সৌমাভ দত্তের কথায়, ‘‘আমি নার্সদের বলে দিয়েছিলাম গ্যাংগ্রিন, বেডসোর বা পোড়া রোগীদের তিন তলায় পাঠাতে। সেখানে পাঁচটি শয্যা আলাদা রাখতে বলেছিলাম। ওঁরা কথা না শুনলে কী করব?’’ আর নার্সদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এমন কিছুই এত দিন আমাদের জানানো হয়নি। তা ছাড়া, তিনতলায় ৫টা শয্যায় তো ফিমেল অর্থোপেডিক্সের রোগীরা ভর্তি। সুপার বোধহয় তা ভুলে গিয়েছেন।’’

infection same ward hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy