Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দুই হাসপাতাল ফেরাল, ট্রলিতে মৃত্যু শিশুর

ন্যাশনাল মেডিক্যাল এবং এনআরএস— দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এর পরে পুলিশের দ্বারস্থ হয় মেহনাজের পরিবার।

অসহায়: তখনও বেঁচে মেহনাজ। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: তখনও বেঁচে মেহনাজ। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

রক্তে ভেসে যাচ্ছে স্ট্রেচার! দুই তরুণ চিকিৎসক স্ট্রেচারের উপরে ঝুঁকে একটি শিশুর চোখের পাতা দুই আঙুলে ফাঁক করে দেখার চেষ্টা করছেন। তবে আঙুল সরিয়ে নিলেই বুজে যাচ্ছে শিশুটির চোখ। স্ট্রেচার ঘিরে থাকা শিশুটির পরিজনেরা সকলেই কেঁদে চলেছেন!

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে এই দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল শুক্রবার দুপুরে। পুলিশ সূত্রের খবর, শিশুটির বাঁ পায়ের উপর দিয়ে লরির চাকা চলে গিয়েছে। তাই বসিরহাটের মিনাখাঁ গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে তাকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। শনিবার ভোরে পুলিশ জানায়, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তাকে শেষে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পরিবারের অভিযোগ, একের পর এক হাসপাতাল ভর্তি নিতে না চাওয়ায় শিশুটিকে নিয়ে তাদের সরকারি হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরতে হয়েছে। শিশুটির কাকা জাহাঙ্গির মোল্লার অভিযোগ, ‘‘ন্যাশনাল মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা আমাদের মেয়ের পায়ের রক্তাক্ত ব্যান্ডেজটায় হাতও লাগাতে চাননি। আমাদেরই ব্যান্ডেজ খুলে দেখাতে বলা হয়।’’

সাড়ে তিন বছরের ওই শিশুটির নাম মেহনাজ তবসুম। শুক্রবার সকালে দাদুর সঙ্গে স্কুল থেকে ফিরছিল সে। বাড়ির কাছে নাতনিকে ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় চায়ের দোকানে গিয়ে বসেন দাদু। তখনই রাস্তার উপরে চলে আসা মেহনাজের বাঁ পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় লরির চাকা। বাড়ির কাছেই একটি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মেহনাজকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাবা শরিফুল ইসলাম মোল্লার অভিযোগ, ন্যাশনাল মেডিক্যালেও মেহনাজকে ফেলে রাখা হয়। তার পরে বলা হয় এনআরএসে নিয়ে যেতে। জাহাঙ্গিরের কথায়, ‘‘এনআরএসে গিয়েও একই অবস্থা হয়। এক বিল্ডিং থেকে আর এক বিল্ডিংয়ে ঘোরানো হয়। একটা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের সামনের বড় রাস্তা পার করে অন্য দিকে যেতে হয়। তখন মেয়েটার পা থেকে সমানে রক্ত ঝরছে। মেয়েটার ওই অবস্থা দেখেও ভর্তি নিতে চাইছিল না ওরা।’’ অনেক অনুরোধের পরে রাতের মতো এনআরএসে একটি ট্রলিতে মেহনাজকে রাখার ব্যবস্থা হয় বলে দাবি তার পরিবারের। ভোরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল এবং এনআরএস— দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে এর পরে পুলিশের দ্বারস্থ হয় মেহনাজের পরিবার। তাদের দাবি, পুলিশের তরফে বলা হয়, আগে অন্ত্যেষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। তার পরে অভিযোগ নেওয়া হবে। জাহাঙ্গির বলেন, ‘‘পুলিশদাদারা বলেছেন, শেষ কাজ মেটার পরে তাদের কাছে গিয়ে জানালে ব্যবস্থা নেবেন।’’

হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরে আগেও বহু রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ছ’টি হাসপাতাল ঘুরে গোবরডাঙার অগ্নিদগ্ধ শিশুকন্যা রিয়া দাসের মৃত্যুর পরে ‘রেফার’ করা আটকাতে নির্দেশিকাও জারি করে স্বাস্থ্য ভবন। তার পরেও কেন পরিস্থিতি বদলায়নি? ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার সন্দীপ ঘোষকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এনআরএসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শয্যা ফাঁকা না থাকলে অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে ট্রলিতেই রোগীদের ভর্তি নিতে হয়।’’ কিন্তু রোগী আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকলেও কি অন্য ব্যবস্থা নেই? সৌরভবাবু অবশ্য এ প্রশ্নের জবাব দেননি।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য বললেন, ‘‘হাসপাতালগুলিকে এ ভাবে রেফার না করার কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বস্তরে সেই নির্দেশ পৌঁছেছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা-ও দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

National Medical College Death Child NRS Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE