Advertisement
E-Paper

রক্তদান শিবিরও কি বন্ধ কলেজ স্কোয়ারে

পুরসভা সূত্রে খবর, কলেজ স্কোয়ারে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল বন্ধের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে ‘বাড়তি সতর্ক’ হয়ে গিয়েছেন পুরকর্তারা। তাই আপাতত সেখানে কোনও অনুষ্ঠানের অনুমোদন দিতে চাইছেন না তাঁরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০২:৪১
প্রতিবাদ: ‘অকুপাই কলেজ স্কোয়ার’ ডাক দিয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নাগরিক সমাজের জমায়েত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি বার্তার মাধ্যমে জড়ো হয়েছিলেন সকলে। মঙ্গলবার দুপুরে, কলেজ স্কোয়ারের সামনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রতিবাদ: ‘অকুপাই কলেজ স্কোয়ার’ ডাক দিয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নাগরিক সমাজের জমায়েত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি বার্তার মাধ্যমে জড়ো হয়েছিলেন সকলে। মঙ্গলবার দুপুরে, কলেজ স্কোয়ারের সামনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

কলেজ স্কোয়ারে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল বন্ধ। কিন্তু রক্তদান শিবিরও কি বন্ধ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জেরবার হয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতা পুরসভার কর্তাদের একাংশ।

যেখানে এই তীব্র গরমে রক্তের সঙ্কট ঠেকাতে পুলিশকেও রক্তদান শিবির আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে কলেজ স্কোয়ারে টানা তিন দিন ব্যাপী একটি রক্তদান শিবিরের অনুমোদন আটকে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, কলেজ স্কোয়ারে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল বন্ধের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে ‘বাড়তি সতর্ক’ হয়ে গিয়েছেন পুরকর্তারা। তাই আপাতত সেখানে কোনও অনুষ্ঠানের অনুমোদন দিতে চাইছেন না তাঁরা। যদিও এর পিছনে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, রক্তদান একটি সমাজসেবা মূলক কাজ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই ধরনের কাজ বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। এর অপব্যাখ্যা হচ্ছে। দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে রক্ত নিয়ে হাহাকার চলছে। সাধারণ গ্রুপের রক্তও অমিল। প্রতি দিন বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রোগীর পরিজনেরা খালি হাতে ফিরছেন। এই পরিস্থিতিতে রক্তদান শিবির আয়োজন করার অনুমতি কেন দেওয়া হবে না?’’

১২ বছর ধরে জুন মাসে কলেজ স্কোয়ারে পর পর তিন দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে স্থানীয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতি দিন দু’টি করে অর্থাৎ মোট ছ’টি শিফটে ওই শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহের কাজ করে রাজ্যের দু’টি সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক। কয়েক শো মানুষ ওই শিবিরে রক্ত দেন। চলতি বছরেও ওই সংগঠনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক ও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্ত সংগ্রহে তাদের টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় (৪০ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর স্বপ্না দাসের সুপারিশ-সহ আবেদন পৌঁছেছে পুরসভার কাছেও। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজ স্কোয়ারে রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দিতেই বিপাকে পড়েছেন উদ্যোক্তারা। কারণ, এখনও পর্যন্ত পুরসভার তরফে তাঁদের কাছে অনুমতিপত্র পৌঁছয়নি। গত সপ্তাহের শেষে বা চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই তা মেলার কথা ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পরেই পরিস্থিতি পাল্টায়। কলেজ স্কোয়ারে যে কোনও অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রেই যে তাঁরা ‘অতি সাবধানী’ হয়ে গিয়েছেন তা মেনে নিয়েছেন পুরকর্তাদের একাংশ। তাই কোনও অনুষ্ঠানেই সম্মতির চিঠি পাঠাতে চাইছেন না তাঁরা। কিন্তু রক্তদানের মতো অনুষ্ঠান কি আটকে যাওয়ার কথা? পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ রায় বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে অনুমতি আটকানোর কথা নয়।’’

আরও পড়ুন: অধিকার ফেরাতে প্রতিবাদে পড়ুয়ারা

মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমারও স্পষ্টই জানান, অনুমতি আটকানোর কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ক্ষেত্রেই যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তা হলে ওখানে দুর্গা পুজো হবে কী ভাবে? নিশ্চয় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মিটে যাবে।’’

সমস্যাটা ঠিক কোথায়? উদ্যোক্তাদের দাবি, পুরসভা থেকে তাঁদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী দিন কয়েক আগেই ওই নির্দেশ দিয়েছেন তাই এখনই তাঁদের পক্ষে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়। দিন কয়েক পরে পরিস্থিতি একটু থিতু হলে এ নিয়ে ভাবা হবে। কিন্তু তত দিনে তো শিবিরের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাবে? উদ্যোক্তা সংগঠনের তরফে অচিন্ত্য লাহা জানান, তাঁরা এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে একটি চিঠিও দিয়ে এসেছেন তাঁরা। অচিন্ত্যবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখন বাইরে আছেন। আশা করি ফেরার পরে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন। কারণ রক্তদানের ক্ষেত্রে উনিই তো এখন নানাভাবে উৎসাহিত করছেন। এ ভাবে এত বছরের একটি শিবির আচমকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে না।’’

College square Blood donation camp রক্তদান শিবির কলেজ স্কোয়ার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy