Advertisement
০৭ মে ২০২৪

থানায় প্রতারণার নালিশ জানাতেই কাবার ১০ দিন

সংস্থার তরফে চেক লেখা হলেও দু’বার তা বাউন্স করেছে। তার পরেই প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে সংস্থার অফিসে গিয়ে সনাতন দেখেন, ঘর তালাবন্ধ। নিখোঁজ মালিক সাগর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

অভিযোগটা গাড়ি হাতিয়ে প্রতারণার। সেই অভিযোগ নেবে কোন থানা, এই টানাপড়েনেই পেরিয়ে গেল ১০ দিন!

খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে যাদবপুর থানার সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছিল প্রতারিতকে। কিন্তু সেখানে গিয়েও সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ বরাহনগরের ওই বাসিন্দা সনাতন দাসের। তিনি বলেন, ‘‘২৭ জুন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অফিস থেকে যাদবপুর থানায় অভিযোগ করতে পাঠানো হয়। বিষয়টি ফেলে রেখে ৫ জুলাই ওই থানা জানায়, ব্যাপারটা লেক থানার দেখার কথা। সেখানে যান। প্রথম দিন কেন সে কথা বলা হল না?’’ সনাতনের আরও দাবি, ‘‘লেক থানায় অভিযোগ করার পরেও কেটেছে দেড় মাস। পুলিশ কিছু তো করেইনি, উল্টে জানিয়েছে আরও ১০০টি এমন অভিযোগ জমা পড়েছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, পুরনো জিনিস কেনাবেচার এক ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখে গত বছরের শেষে নিজের গাড়ি ভাড়া দিতে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের এক সংস্থায় যোগাযোগ করেন সনাতন। ৩ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে এক বছরের চুক্তি হয় সংস্থার। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, গাড়ির ভাড়া বাবদ মাসিক ২৯ হাজার টাকা করে সনাতনকে দেওয়ার কথা সংস্থার মালিক সাগর রাজের। এ ছাড়া গাড়ির কিস্তির ১৩ হাজার টাকা প্রতি মাসে, বাকিটা চার মাস অন্তর সনাতনের পাওয়ার কথা। প্রতি মাসে এক বার গাড়িটি সনাতনকে দেখানোরও কথা ছিল চুক্তিতে।

ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তিনি গাড়ি দেখতে পাননি। এমনকি, গাড়ি দেওয়ার পরের প্রথম মাসে টাকাও দেওয়া হয়নি। সংস্থার তরফে এর পরে সনাতনকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ভুয়ো স্লিপের ছবি হোয়াটসঅ্যাপ করা হয় বলে অভিযোগ। বারবার ঘুরে শেষে গত ৪ এবং ৬ ফেব্রুয়ারি দু’দফায় যথাক্রমে ১৮ এবং ১৬ হাজার টাকা পান সনাতন। অভিযোগ, তার পরে আরও কোনও টাকা তিনি পাননি। সংস্থার তরফে চেক লেখা হলেও দু’বার তা বাউন্স করেছে। তার পরেই প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে সংস্থার অফিসে গিয়ে সনাতন দেখেন, ঘর তালাবন্ধ। নিখোঁজ মালিক সাগর।

সনাতনের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অফিস থেকে যাদবপুর থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে এক দিন গেলে আমাকে বলে পরের দিন আসতে।’’ কয়েক বার ঘোরানোর পরে ন’দিনের মাথায় যাদবপুর থানা তাঁকে লেক থানায় যেতে বলে। সনাতনের কথায়, ‘‘গাড়ির কিস্তির টাকা মেটাতে বাড়ি এসে তাগাদা দিচ্ছে ব্যাঙ্কের লোক। এই অবস্থায় ১০ দিন এক থানা থেকে আর এক থানায় ঘুরতে হল!’’

অভিযোগকারীকে ঘোরানোর প্রসঙ্গে যাদবপুর থানার বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বিষয়টি আসায় গুরুত্ব দিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েই লেক থানায় পাঠানো হয়েছে। তাতেই সময় লেগেছে। যাদবপুর থানা দক্ষিণ সাবার্বান ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি সুদীপ সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। অভিযোগকারী আমার অফিসে যোগাযোগ করুন।’’ লেক ‌থানার আবার দাবি, তদন্ত চলছে। তাদের পাশাপাশি অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কলকাতা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখাও। লেক থানা কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানকার ডিসি অজয় প্রসাদ বললেন, ‘‘অভিযোগকারী আমার অফিসে এসে সব জানাতে পারেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Fraud Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE