Advertisement
০২ মে ২০২৪

মন্ত্রীর ফোন অধ্যক্ষকে মিলল হাজিরা খাতা, শো-কজ দুই পড়ুয়াকে

হাজিরা খাতা উদ্ধার-সহ পুরো বিষয়টি জানিয়ে শ্যামপুকুর থানায় চিঠি দিয়েছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। তাতেও শো-কজের উল্লেখ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২৭
Share: Save:

খোদ শিক্ষামন্ত্রী যে ফোন করেছিলেন, অধ্যক্ষ নিজেই তা জানান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু মন্ত্রী ও অধ্যক্ষের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে শিক্ষা দফতরের কড়া নির্দেশেই নড়েচ়ড়ে বসেছেন জয়পুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। অ্যাটেন্ডেন্স বা হাজিরা খাতা লুটের ঘটনায় মঙ্গলবার বেশ কয়েক জন পড়ুয়াকে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা। চিহ্নিত পড়ুয়াদের মধ্যে দু’জনকে শো-কজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। উধাও হাজিরা খাতা উদ্ধার হয়েছে এ দিন সকালে।

দুই পড়ুয়াকে শো-কজের ব্যাপারে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এদের ছাড়া যাবে না। আপাতত শো-কজ করেছি। এর পরে বহিষ্কার করব।’’ হাজিরা খাতা উদ্ধার-সহ পুরো বিষয়টি জানিয়ে শ্যামপুকুর থানায় চিঠি দিয়েছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। তাতেও শো-কজের উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও ওই কলেজেরই শিক্ষক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, অধ্যক্ষ এই ঘটনাকে হাজিরা খাতা লুট বলতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। অধ্যক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন, যেখানে হাজিরা খাতা থাকার কথা ছিল, সেখানে তা ছিল না। ওই শিক্ষকদের প্রশ্ন, যদি হাজিরা খাতা লুট না-হয়ে থাকে, তা হলে সেগুলো উদ্ধার হয়েছে বলে থানায় জানানো হল কেন? কেনই বা দুই পড়ুয়াকে শো-কজ করল কলেজ? এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করা হলেও অধ্যক্ষ ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

লুট হয়ে যাওয়া হাজিরা খাতা কোথায় পাওয়া গেল? এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কলেজের গেটে খাতাগুলো পড়ে ছিল। এ দিন সকালে সেগুলো উদ্ধার করা হয়।’’ ওই শিক্ষকের দাবি, ব্যাপারটা খারাপ দিকে যাচ্ছে বুঝে পড়ুয়ারাই খাতাগুলো ফেলে গিয়েছেন। এ দিন নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পরে অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায়ের ঘরে বৈঠকে বসেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফোন করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে অধ্যক্ষ বৈঠকে জানান। মন্ত্রীর ফোনের পরেই অধ্যক্ষ চাপে পড়েছেন বলে শিক্ষকদের অনুমান। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলে দিয়েছেন, ‘‘কলেজকেই এই ধরনের সমস্যা সামাল দিতে হবে।’’

এই ঘটনায় অধ্যক্ষের সঙ্গে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরোধ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা ছেড়ে দেব না। অধ্যক্ষ যদি কাউকে আড়াল করতে চান, তাঁকে আমাদের সামনে জবাব দিতে হবে। যদি আজ ছেড়ে দিই, তা হলে এই পড়ুয়ারাই এ বার আমাদের ব্যাগ নিয়ে, সম্মান নিয়ে পালাবে!’’ গত শিক্ষাবর্ষে ৬০% হাজিরা না-থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ কয়েক জন পড়ুয়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদে ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা পদত্যাগ করেন। চাপের মুখে অধ্যক্ষ পিছিয়ে যান। ওই পড়ুয়ারা শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে পারেননি। কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অধ্যক্ষ এ বারেও হাজিরার প্রশ্নে কোনও কোনও পড়ুয়াকে আড়াল করতে চাইলে তাঁরা একই রাস্তায় হাঁটবেন।

সিবিসিএস (চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম) চালু হওয়ার পরে হাজিরা নিয়ে কড়াকড়ি চলছে সব কলেজেই। হাজিরা কম থাকায় জয়পুরিয়ায় অন্তত ৬০ জন পড়ুয়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে শনিবার কলেজে বিক্ষোভ দেখান ওই পড়ুয়ারা। তাঁদেরই কয়েক জন দোতলায় টিচার্স রুমে ঢুকে হাজিরা খাতা ব্যাগে ভরে নিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE