Advertisement
E-Paper

ইমার্জেন্সির পথ আটকে বিক্ষোভ

রাত ১০টা ৪০ মিনিটে অবস্থান তুলে নেওয়া হয়। ঘণ্টা দুয়েক কাজকর্ম চলার পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ ফের শুরু হয় বিক্ষোভ-অবস্থান। রোগী ও তাঁদের সঙ্গীরা আবার অসহায় হয়ে পড়েন। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বলতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪৯
প্রতিবাদ: চলছে জুনিয়ার ডাক্তারদের বিক্ষোভ-অবস্থান। সোমবার, এনআরএসে। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: চলছে জুনিয়ার ডাক্তারদের বিক্ষোভ-অবস্থান। সোমবার, এনআরএসে। নিজস্ব চিত্র

পরিষেবা স্তব্ধ করে, রোগী ও পরিজনদের নাকানিচোবানি খাইয়ে ফের আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারেরা। ঘটনাস্থল এ বার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ভবন। শুধু জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীরাই নয়, ওই ভবনে সার্জারি, নিউরোসার্জারি ও চক্ষু বিভাগ-সহ অন্যান্য বিভাগের রোগীও ভর্তি থাকেন। সোমবার শুধু কর্মবিরতি পালন করেই ক্ষান্ত হননি জুনিয়র ডাক্তারেরা, নজিরবিহীন ভাবে ওই ভবনের প্রধান গেটটিও আটকে দেন তাঁরা। ফলে ভিতরের রোগীদের সঙ্গে বাইরের পরিজনদের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, রোগীর জন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আনা রক্তের ব্যাগও পৌঁছে দেওয়া যায়নি ভিতরের ওয়ার্ডে।

রাত ১০টা ৪০ মিনিটে অবস্থান তুলে নেওয়া হয়। ঘণ্টা দুয়েক কাজকর্ম চলার পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ ফের শুরু হয় বিক্ষোভ-অবস্থান। রোগী ও তাঁদের সঙ্গীরা আবার অসহায় হয়ে পড়েন। কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, বলতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।

বিকেলে এনআরএসে গিয়ে দেখা যায়, ইমার্জেন্সি ভবনের একতলায় অফিসার ইনচার্জের ঘরের সামনে ক্ষোভে ফুটছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ডাক্তারদের যখন মান্য করা হচ্ছে না, ডাক্তারেরা যখন এতই খারাপ, তখন আমরা খারাপই হবো। রোজ মার খাব বলে ডাক্তার হয়েছি নাকি! এর বিহিত চাই।’’

পাশেই অন্তত আট জন রোগী কাতরাচ্ছেন। ইমার্জেন্সির সব ওয়ার্ডে থমকে পরিষেবা। জুনিয়র ডাক্তারেরা ধর্না-বিক্ষোভে বসেছেন। অভিযোগ, অজয় মল্লিক নামে এক রোগীর বাড়ির লোক ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত ইন্টার্ন প্রসেনজিৎ বিশ্বাসকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

ইমার্জেন্সির বাইরে তখন আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছেন বছর চল্লিশের তুলসী মল্লিক। মল্লিকবাজারের বাসিন্দা তুলসীর ১৯ বছরের ছেলে অজয় মারা গিয়েছেন। ইমার্জেন্সির সব গেট বন্ধ। ফলে মৃত ছেলেকে দেখতে বা দেহ আনতে পারেননি। গোটা পাড়া এনআরএসে ভেঙে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, জন্ডিসে আক্রান্ত অজয়ের চিকিৎসা না-করেই সোমবার সকাল ৯টা থেকে তাঁকে ফেলে রাখা হয়। অজয়ের নাক দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। হামলার অভিযোগে অজয়ের পিসেমশাই বিজয় সিংহকে জুনিয়র ডাক্তারেরা ভিতরে আটকে রাখেন।

গত সাত দিনে এ নিয়ে এটি তৃতীয় ঘটনা, যেখানে রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে চিকিৎসকদের মারামারি এবং তার জেরে চিকিৎসক-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা হাসপাতালে খোদ ব্লক মেডিক্যাল হেল্থ অফিসারকে শৌচাগারের বিষ্ঠা মাখানোর ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দু’দিন আগেই এ শহরে চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন এ সব নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। অনশনও শুরু করেন এক চিকিৎসক। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য শাখা তাঁকে আশ্বাস দেয়, সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে এ নিয়ে কথা হবে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের ঘটনার দিকে নজর রাখার কথা বলেন স্বাস্থ্যকর্তাদের। সোমবারই নীলরতনে তার পুনরাবৃত্তি হল।

তারকেশ্বরের শীলা সামন্ত গত ২৬ অগস্ট থেকে নীলরতনের ফিমেল সার্জারি বিভাগে ভর্তি। তাঁর জন্য দুই ইউনিট রক্ত আনতে গিয়েছিলেন স্বামী দিলীপ সামন্ত। সেই রক্তের ব্যাগ নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতে পারছিলেন না। আতঙ্কে কাঁপছিলেন প্রৌঢ়।

বীরভূমের শ্রীকৃষ্ণপুরের বৃদ্ধ শঙ্কর দাস সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি। এ দিন তাঁকে স্ক্যান করাতে নিয়ে যান ছেলে। আর ওয়ার্ডে ফিরতে পারছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা বাইরে হুইলচেয়ারে বসে নেতিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। গায়ে ধুম জ্বর। চন্দনা সরকারের শিশুসন্তান ভর্তি। ব্লাড ব্যাঙ্কে ঢুকতে পারছিলেন না। কারণ সেটি ইমার্জেন্সি ভবনে। হাসপাতালে কি এ ভাবে তালা ঝোলানো যায়? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতিদিন একই ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Protest NRS Medical College Junior Doctors Emergency নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy