সময়ে বিল তৈরি করা যায়নি বলে কলকাতা পুরসভার সিভিক পুলিশকর্মীদের দু’মাসের বেতন বাকি। অথচ ঠিকাদারদের বিল মেটাতে সময় বাড়িয়ে নজির সৃষ্টি করল কলকাতা পুর প্রশাসন। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের শেষ মাসে পুর প্রশাসনের এই ভূমিকা নিয়ে শোরগোল পুর-মহলে।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের উন্নয়নে রাজ্য পুরসভাকে যে আর্থিক অনুদান দেয়, তা জমা হয় পুরসভার লোকাল ফান্ডে (এল এফ)। সরকারি নিয়মেই বলা রয়েছে, ওই ফান্ড থেকে বিল মেটানো বাবদ মাসে ২৫ কোটির বেশি খরচ করা যাবে না। এত কাল সেই নিয়মেই কাজ হয়েছে। ব্যতিক্রম ঘটল গত মাসে। মার্চে সেই পরিমাণের ৫ গুণেরও বেশি টাকার বিল মেটাল পুরসভা। তাতে পুরসভায় নিযুক্ত ঠিকাদারেরা বেজায় খুশি হলেও বেতন না পেয়ে কপালে হাত সিভিক পুলিশের।
পুর প্রশাসনের খবর, ওদের বিল সময়ে জমা না পড়ায় টাকা দেওয়া যায়নি। প্রশাসনের এই ‘দ্বৈত চরিত্র’ অস্বস্তিতে ফেলেছে কিছু অফিসার এবং কাউন্সিলরকেও। মাসে ৩-৪ হাজার টাকা বেতন। তা-ও না মেলায় মুখের হাসি চলে গিয়েছে সিভিক পুলিশের।
অন্য দিকে, ঠিকাদারদের জন্য আর্থিক বিধি ‘ভাঙা’ নিয়ে চরম সমালোচনা শুরু হয়েছে পুর-মহলে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, নিয়মের বেশি টাকা যে বিল বাবদ মেটানো হয়েছে, তার অনুমতিও নেওয়া হয়েছে সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু খরচের পরিমাণ কেন বাড়াতে হল, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের মার্চেও ২৫ কোটি টাকাই বিল বাবদ মেটানো হয়েছিল। অথচ এ বার শুধু মার্চেই এল এফ ফান্ড থেকে ১৩০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ফেব্রুয়ারিতে জমা পড়া সব বিল মেটানো হয়েছিল। তা ২৫ কোটির মধ্যেই ছিল। তার পরেও মার্চে এত টাকার বিল জমা নেওয়া হল কেন? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই।
অর্থ দফতর সূত্রের খবর, পুরসভার দু’টি অ্যাকাউন্ট হেড রয়েছে। একটি রেভিনিউ ফান্ড, অন্যটি লোকাল ফান্ড। রেভিনিউ ফান্ড পুরসভার নিজস্ব। আর লোকাল ফান্ডে টাকা ঢোকে সরকারের অনুদান থেকে। ওই দফতরের এক অফিসার জানান, লোকাল ফান্ডে বিল জমা নেওয়া হয় প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে। এ বার তারিখ বাড়িয়ে মার্চ মাসের শেষ দিকেও বিল জমা নেওয়া হয়েছে। এখানেই ‘অনিয়মের’ অভিযোগ উঠছে পুর-মহলে।
অর্থ দফতরেরই ব্যাখ্যা, লোকাল ফান্ডের টাকা অর্থবর্ষের শেষে খরচ না হলে সরকারের কোষাগারে ফেরত দেওয়াই নিয়ম। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ওভার ড্রাফট করে নেওয়া টাকা উন্নয়নের জন্য কর্পোরেশন, কেএমডিএ-সহ বিভিন্ন ‘লোকাল বডি’কে দেয়। সেই টাকা পুরোটা খরচ না হলে সরকারের কাছে ফেরত আসাই নিয়ম। তাতে টাকাটা অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকে না। সরকার সেই টাকা যথাস্থানে জমা দিয়ে ওভার ড্রাফটের সুদও কমাতে পারে। পরবর্তী বছরের প্রয়োজনে সেই টাকা ফের পুরসভার জন্য বরাদ্দ করতে পারে। তাতে অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াও সচ্ছল থাকে বলে মনে করছেন রাজ্য সরকারের একাধিক অফিসারও।
প্রশ্ন উঠছে, বিল জমা দেওয়ার তারিখ বাড়ানো হল কেন?
এ বিষয়ে পুর কমিশনার খলিল আহমেদকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি কোনও জবাব দেননি। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, লোকাল ফান্ডের অনেক টাকা খরচ না হলে ফেরত পাঠাতে হতো। তাই তারিখ বাড়িয়ে ঠিকাদারদের বিল মেটানো হয়েছে। আসলে খরচ না হওয়া টাকা যতটা সম্ভব কম পরিমাণ ফেরত দেওয়া যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy