Advertisement
E-Paper

বেআইনি বাড়ি, তবু ভাঙবে না পুরসভা

বেআইনি বাড়ি। ভাঙতেও গিয়েছিলেন পুরকর্মীরা। কিন্তু রুখে দাঁড়ালেন খোদ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান। আঙুল উঁচিয়ে পুর-অফিসারদেরই বললেন, ‘‘পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত শূর, অরূপ বিশ্বাসদেরও কলোনিতে বাড়ি রয়েছে। আগে তাঁদের ঘর ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। পরে সাধারণ মানুষের ঘর ভাঙবেন।’’ কাউন্সিলরের এই বক্তব্যে দল বিড়ম্বনায় পড়লেও কলোনির বাড়ি না ভাঙার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন খোদ মেয়র। তাঁর সাফ কথা, ‘‘বাড়িটি ভাঙতে যাওয়া বেআইনি হয়েছে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০০:২৪

বেআইনি বাড়ি। ভাঙতেও গিয়েছিলেন পুরকর্মীরা। কিন্তু রুখে দাঁড়ালেন খোদ স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান। আঙুল উঁচিয়ে পুর-অফিসারদেরই বললেন, ‘‘পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত শূর, অরূপ বিশ্বাসদেরও কলোনিতে বাড়ি রয়েছে। আগে তাঁদের ঘর ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। পরে সাধারণ মানুষের ঘর ভাঙবেন।’’ কাউন্সিলরের এই বক্তব্যে দল বিড়ম্বনায় পড়লেও কলোনির বাড়ি না ভাঙার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন খোদ মেয়র। তাঁর সাফ কথা, ‘‘বাড়িটি ভাঙতে যাওয়া বেআইনি হয়েছে।’’ এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করেন তিনি।

শুক্রবার গল্ফগ্রিন সংলগ্ন কলোনির একটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে যান পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত। তৃণমূল পুরবোর্ডেরই প্রশাসকের এমন কথা শুনে ঘাবড়ে যান ইঞ্জিনিয়ারেরা। তবে নেতা-মন্ত্রীদের কথা তুলে কাউন্সিলরের বক্তব্য অমূলক বলে মনে করলেও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে নির্দেশের ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ারেরা বাড়ি ভাঙতে যান, তা আইনানুগ নয়।

পুরসভা সূত্রের খবর, ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩ অশ্বিনীনগর কলোনিতে চারতলা একটি বাড়ি বেআইনি ভাবে গড়ে উঠেছে বলে পুরসভায় অভিযোগ জমা পড়েছিল বছর দেড়েক আগেই। যদিও টালিগঞ্জ, বেহালা, যাদবপুর-সহ শহরের বহু জায়গাতেই কলোনি এলাকায় বিল্ডিং হয়েছে। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এমন অধিকাংশ বাড়িরই পুরসভার অনুমোদন নেই। তবু অভিযোগের ভিত্তিতে অশ্বিনীনগরের বাড়িটির এক পক্ষকে ডেকে পুরসভায় শুনানি হয়। শুনানি অফিসার বাড়িটি ভাঙার নির্দেশ দেন। গত দেড় বছরে তা কার্যকর হয়নি। মাত্র ১৫ দিন আগে পুর-আইনের ৫৪৪ ধারায় বাড়িটি ভাঙার নোটিস যায়। তা কার্যকর করা না হলে পুরকর্মীরা বাড়িটি ভেঙে দেবেন বলেও জানানো হয়। এ দিন পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা পুলিশ নিয়ে বাড়ি ভাঙতে যান। তপনবাবু বাধা দিলে শুরু হয় তর্কাতর্কি। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস-সহ দুই প্রাক্তন বিধায়কের নাম করে আপত্তি তোলার পাশাপাশি কাউন্সিলর বলেন, ‘‘মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে আমি কীসের পুর-প্রতিনিধি? আগে মানুষের কাজ, পরে পুরসভা।’’

তপনবাবুর বক্তব্য চাউর হতেই চরম অস্বস্তি শুরু হয় তৃণমূলে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস মন্তব্য করেননি। তবে মেয়র বলেন, ‘‘স্থানীয় কাউন্সিলর মন্ত্রীর নাম জড়িয়ে যা বলেছেন, তা অমূলক। এটা ঠিক হয়নি। অরূপ কলোনিতে বাড়ি করেননি। তাঁর বংশের কেউ হয়তো করেছেন। এর সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক নেই।’’ মেয়র জানান, তপনবাবুকে সতর্ক করা হয়েছে।

মেয়র জানান, উদ্বাস্তুদের জন্যই কলোনি গড়া হয়েছিল। তপনবাবুর মতো পুর-বোর্ডও কলোনির বাড়ি ভাঙার বিরোধী। সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি পুর-বোর্ড অত্যন্ত মানবিক এবং সংবেদনশীলও।

তা হলে বিল্ডিং দফতর বাড়িটি ভাঙতে গেল কেন? মেয়র বলেন, ‘‘এটা ঠিক হয়নি। কলোনির বাড়ি পুর-অনুমোদন মেনে হয় না। ৩০ বছর ধরেই এ ভাবে চলছে।’’ তিনি জানান, ১৯৮০ সালের পুর-আইনে পুরসভায় ডেকে শুনানির কথা বলা নেই। গত বছর ওই প্রথা বন্ধ রাখার রায়ও দিয়েছে হাইকোর্ট। তা মেনে পুর-প্রশাসনও হিয়ারিং-এর মাধ্যমে বাড়ির অবস্থান জানার কাজ বন্ধ রেখেছে। তা সত্ত্বেও বিল্ডিং দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা বাড়ি ভাঙতে যাওয়ায় ওঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আপাতত ওই দু’জনকে শোকজ করা হল বলে জানান শোভনবাবু।

তবে স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে তপনবাবুরও বিষয়টি তাঁকে জানানো উচিত ছিল বলে মেয়রের দাবি, ‘‘ঘটনাটি জানতামই না। বিল্ডিং দফতরের এক ডিজি-র থেকে শুনে ওঁদের ফিরে আসতে বলি।’’

মেয়রকে জানানো কি বাধ্যতামূলক? শোভনবাবু জানান, মেয়র, পুর-কমিশনার বা বিল্ডিং দফতরের মেয়র পারিষদের (মেয়রই ওই দফতরের দায়িত্বে) অনুমোদন ছাড়া বাড়ি ভাঙা যায় না। এখানে তা নেওয়া হয়নি। পুরসভার শুনানি অফিসারের নির্দেশ নিয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ওই কাজ হয়েছে। সেটাও বেআইনি।

kmc golf green colony illegal building building demolision
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy