Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৩
কলকাতা পুরসভা

ভোট ভাঙন রোধে ভাড়াটে-তোয়াজ

ভোটের কথা মাথায় রেখে এ বার শহরের ভাড়াটেদের ‘তোষণ’ শুরু করছে পুর-প্রশাসন। ভাড়াটের ‘নো অবজেকশন’ ছাড়া মালিকপক্ষ নতুন করে বাড়ি করতে পারবেন না— এমনই এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে তারা। সোমবার পুরসভার মেয়র পারিষদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নিয়ে অবশ্য সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্যও হয়। তবে ওই সিদ্ধান্ত যে পাকা, তা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই নিয়ম লাগু হলে মালিকপক্ষ পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে বাড়ি করতে গিয়ে যে অসুবিধায় পড়বেন, সে কথাও তোলা হয় বৈঠকে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

ভোটের কথা মাথায় রেখে এ বার শহরের ভাড়াটেদের ‘তোষণ’ শুরু করছে পুর-প্রশাসন। ভাড়াটের ‘নো অবজেকশন’ ছাড়া মালিকপক্ষ নতুন করে বাড়ি করতে পারবেন না— এমনই এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে তারা। সোমবার পুরসভার মেয়র পারিষদের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা নিয়ে অবশ্য সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্যও হয়। তবে ওই সিদ্ধান্ত যে পাকা, তা এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এই নিয়ম লাগু হলে মালিকপক্ষ পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে বাড়ি করতে গিয়ে যে অসুবিধায় পড়বেন, সে কথাও তোলা হয় বৈঠকে। এ বিষয়ে মেয়র বলেন, “কে বিপদে পড়বেন, না পড়বেন তা আমাদের বিষয় নয়।” তিনি জানান, এক সময়ে ওই নিয়ম ছিল। পরে তা কখন উঠে যায়, জানা ছিল না। ফের ওই নিয়ম চালু হবে।

এই সিদ্ধান্তের পিছনে ভোটের রাজনীতি কী ভাবে কাজ করছে, সেই আলোচনায় সরব পুরসভার অন্দরমহল। সহজ ব্যাখায় সবাই বুঝেেছেন ভাড়াটেকুল ভোটব্যাঙ্কের এক বড় শরিক। শহর কলকাতায় ভাড়াটের সংখ্যা বাড়ির মালিকের সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, আনুমানিক হিসেবে শহরে বাড়িওয়ালা বা বাড়ির মালিক যদি এক তৃতীয়াংশ হয়, ভাড়াটে তবে দুই-তৃতীয়াংশ। যার অর্থ ভাড়াটে যে দিকে, ভোটের সিংহভাগ সে দিকে। ভোটের লাভ-লোকসান দেখতে গেলে ভাড়াটেদের মন জয় করাটা জরুরি। সেই লক্ষ্যেই ভাড়াটেদের স্বার্থে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

পাশাপাশি, আরও একটি যুক্তিও ‘ভাড়াটে তোয়াজের’ বড় কারণ হিসেবে সামনে আসছে। সেটি হল, কলকাতায় অবাঙালিদের সংখ্যাবৃদ্ধি। বিকাশবাবু বলেন, “আমার আমলে একটি সমীক্ষা করিয়ে দেখেছিলাম, খাস কলকাতায় বঙ্গভাষীরা ক্রমে সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে।”

এখানেই ভাড়াটে-রাজনীতির অঙ্ক কষছে তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকে দলের অন্দরে এই সতর্কবার্তা পৌঁছেছে যে, শহরের ভোটে বিজেপি রীতিমতো থাবা বসাচ্ছে। অবাঙালি অর্থাৎ হিন্দিভাষী ভোটে একটি বড় অংশ বিজেপির দিকে সরে যাচ্ছে বলে ‘কম্পিত’ তৃণমূল। পুর-ভোটে সেই ভাঙন আটকানোর কৌশল হিসেবেই তাই বাঙালি ভাড়াটেদের কাছে টানার এই মরিয়া চেষ্টা।

ভোটের রাজনীতি যা-ই হোক না কেন, এই সিদ্ধান্ত শহরের পুরনো বাড়ি মালিকদের পক্ষে ভয়ানক বলে মন্তব্য করেন একাধিক মেয়র পারিষদ। তাঁদের মতে, পুরনো কলকাতার অনেক বাড়িতে এখনও মাসে মাত্র ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় অনেকে বাস করেন। তাঁদের ‘নো অবজেকশন’ নিয়ে বাড়ি করতে গেলে চরম অসুবিধায় পড়তে হবে মালিককে। আর তাতে ওই সব বাড়ি ক্রমশই নষ্ট হবে। ওই মেয়র পারিষদেরা জানান, এমনিতেই শহরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। ভাড়াটে-মালিক দ্বন্দ্বে সেগুলি ভেঙে নতুন বাড়ি করা যাচ্ছে না। নতুন নিয়মে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে।

মেয়র শোভনবাবু এ দিন জানান, আগেও পুরসভায় ওই নিয়ম ছিল। এ বিষয়ে পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিক জানান, আগে ওই নিয়ম হয়তো মানা হতো। কিন্তু পুর-আইনের কোথাও বলা নেই, ভাড়াটের অনুমতি ছাড়া বাড়ির মালিক তাঁর বাড়ি নতুন করে তৈরি করতে পারবেন না। তবে পুর-বিল্ডিং আইনের ১৪২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়াটে রয়েছে এমন কোনও বাড়ি ভেঙে মালিক যদি সেখানে নতুন বাড়ি করেন, তা হলে তিনি একটি তলায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর)-তে ছাড় পাবেন। তবে সে ক্ষেত্রে ভাড়াটের অংশ ছেড়ে তাঁকে বাড়ি করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE