টাউন হলের সংস্কার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরসভা। কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি! ওই হেরিটেজ ভবন সংস্কারের জন্য রুরকি আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়েছিল পুরসভা। প্রাথমিক রিপোর্ট জমাও পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই ভবনের কাজ করতে গেলে বেসমেন্টে থাকা মিউজিয়াম বাঁচানো যাবে না। তা নষ্ট করতে হবে। ওই রিপোর্ট পেয়ে মাথায় হাত পুরকর্তাদের! কলকাতার ইতিহাস থেকে শুরু করে পলাশির যুদ্ধ, বিশ্বকবির কণ্ঠ, পুরসভার ইতিবৃত্ত-সহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনা ছবিতে, কাঠামোয়, রেকর্ডে ধরা আছে ওই মিউজিয়ামে। অমূল্য সে সব জিনিস নষ্ট করতে হবে, এমনটা ভাবতেই পারছে না পুর প্রশাসন। কারণ, তা নতুন করে তৈরি করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় বাড়ছে।
টাউন হল কলকাতার অন্যতম পুরনো ও বিখ্যাত সৌধ। ঐতিহ্যবাহী ওই ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। খারাপ হাল হলের অন্য অংশেরও। কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে সভা ও অনুষ্ঠান চালানো হচ্ছিল বলে পুরসভা সূত্রের খবর। ভবনটির সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানায় পুর প্রশাসন। সম্প্রতি এ জন্য রাজ্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কাজ করবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। যে হেতু সেটি হেরিটেজ ভবন, তাই সব কিছু বজায় রেখেই ওই সংস্কারে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। এবং সেই কারণেই রুরকি আইআইটি-র পরামর্শ চাওয়া হয়। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, রুরকির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক কোনও ব্যবস্থা নেই। বাড়িটি অনেক পুরনো। তাই ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তা করতে হলে বেসমেন্টে থাকা মিউজিয়ামকে সরিয়ে দিতে হবে।
কিন্তু মিউজিয়াম সরালেই সংগ্রহগুলি নষ্ট করার প্রশ্ন উঠছে কেন? এ বিষয়ে এক বিশেষজ্ঞ জানান, মিউজিয়াম দু’ধরনের হয়। ‘অবজেক্ট’ এবং ‘থিম’। কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর হল অবজেক্ট মিউজিয়াম। সেখানে মিউজিয়ামের জিনিস অন্য জায়গায় সরানো যায়। কিন্তু টাউন হলের মিউজিয়াম হল থিম। এ ধরনের মিউজিয়ামে রাখা জিনিস সরানো যায় না। ভেঙে বা নষ্ট করে ফেলতে হয়। এখন রুরকি-র বিশেষজ্ঞদের কথামতো ভূমিকম্প-প্রতিরোধক ব্যবস্থা করতে হলে মিউজিয়াম নষ্ট করতেই হবে। এখানেই সমস্যায় পড়েছে পুর প্রশাসন। যদিও পুরসভার একাধিক অফিসার জানান, কলকাতায় ২০০ বছরের পুরনো অনেক বাড়ি রয়েছে। সেগুলিতেও ভূমিকম্প-প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই। তবে টাউন হলে তা করতে হবে কেন? সোমবার এ নিয়ে একটি বৈঠকও হয় পুরসভায়। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, আপাতত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রুরকি-র ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ফের এক প্রস্ত কথা বলবেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy