Advertisement
E-Paper

প্লাস্টিক দূর হটো, বলছে পুরসভাই

পুর কর্তৃপক্ষ তাতে বিশেষ কর্ণপাত করেননি। মহানগরীতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এত দিন কোনও ভাবেই উদ্যোগী হয়নি কলকাতা পুরসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০২:১৫
রুদ্ধ: প্লাস্টিকের ভিড়ে এ ভাবেই বুজে গিয়েছে নিকাশি। মঙ্গলবার বেলগাছিয়ার সেন্ট্রাল ডেয়ারিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

রুদ্ধ: প্লাস্টিকের ভিড়ে এ ভাবেই বুজে গিয়েছে নিকাশি। মঙ্গলবার বেলগাছিয়ার সেন্ট্রাল ডেয়ারিতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কলকাতার জল থইথই চেহারাই শেষ পর্যন্ত চোখ খুলে দিল কলকাতা পুরসভার।

মহানগরীতে জল না নামার অন্যতম কারণ যে গালিপিট প্লাস্টিকে আটকে যাওয়া, তা নিয়ে পরিবেশবিদ ও পরিবেশ-কর্মীরা সরব হয়েছেন বহু দিন ধরেই। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষ তাতে বিশেষ কর্ণপাত করেননি। মহানগরীতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে এত দিন কোনও ভাবেই উদ্যোগী হয়নি কলকাতা পুরসভা। সোমবার ও মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন অংশ জলবন্দি হয়ে পড়ার পরেই পুরসভা খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করল প্লাস্টিককে।

মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ঘোষণা, ‘‘ব্যবসায়ীদের বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছেই। এ বার আরও কড়া হতে হবে। প্লাস্টিক বন্ধে পুলিশকেও কাজে লাগানো হবে।’’ ৫০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বহু বছর ধরে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে কী হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু লেখা নেই পুর আইনে। এ বার সেই আইন সংশোধন করার কথা ভাবছে পুরসভা।

মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার জানান, সংশোধিত আইনের খসড়াও তৈরি হয়েছে। তাতে প্লাস্টিক উৎপাদন সংস্থা এবং যে ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করবেন, তাঁদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জরিমানা হবে ক্রেতাদেরও। সেই জরিমানার মাত্রা এখনও ঠিক হয়নি। জরিমানা অনাদায়ে কারাবাসের সংস্থানও রাখা হচ্ছে।

শুধু পুরসভার অকর্মণ্যতাই নয়, নাগরিকদের সচেতনতার অভাবেও প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কোলে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘শহরের বিভিন্ন দোকান এক সময়ে প্লাস্টিক ব্যাগের বদলে কাগজের ঠোঙা কিংবা চটের ব্যাগে জিনিসপত্র নিতে ক্রেতাদের বাধ্য করছিল। কিন্তু আশপাশের অন্য দোকান সেই নিয়ম কার্যকর না করায় ওই ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।’’ বাজারে জঞ্জালের বড় একটা অংশই যে প্লাস্টিক, তা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী সমিতির ওই সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘ক্রেতারা যদি ঠিক করে নেন যে, তাঁরা পাতলা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করবেন না, তা হলে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়।’’

দিন কয়েক আগে উত্তর ও মধ্য কলকাতার কিছু এলাকায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়। তাতে ডুবে যায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া, বেলেঘাটা, পার্ক সার্কাস, শেক্সপিয়র সরণি-সহ আরও অনেক রাস্তা। সে দিন অবশ্য মেয়র ভিলেন বানিয়েছিলেন গঙ্গার জোয়ারকে। এ দিন মেয়রের গলায় অন্য সুর। গঙ্গায় জোয়ার ছিল না বৃষ্টির সময়ে। মেয়রের মন্তব্য, ‘‘পাম্পিং স্টেশনের মুখ থেকে গালিপিট— সর্বত্রই শুধু প্লাস্টিক আর প্লাস্টিক। জল সরবে কোথা থেকে?’’

ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকেরা যে ভাবে যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যাগ ফেলে নিকাশি ব্যবস্থার উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন, তাতে ক্ষুব্ধ মেয়র বলেন, ‘‘বছরে ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে জঞ্জাল অপসারণে। তা সত্ত্বেও রাস্তার উপরে প্লাস্টিকের জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে। এখানে-ওখানে তা ছড়িয়ে পড়ছে।’’

মেয়র নিজে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রীও। তাই কলকাতায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ না-হওয়ায় তাঁকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বারবার। এখন তাই প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার কাজটাও তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Plastic Kolkata water logging
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy