বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে পুরসভার বিল্ডিং আইনে নতুন একটি ধারা (৪১২এ) যোগ করা দরকার। মঙ্গলবার পুরসভার মেয়র পারিষদ বৈঠকে রাজ্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া রিপোর্টে এ কথাই বলা হয়েছে। এ দিন বৈঠকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, আপাতত সেটি খসড়া বিল আকারে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে তা আইনে পরিণত হলেই কাজ শুরু করবে পুর-প্রশাসন।
তবে বৈঠকে এই রিপোর্ট অনুমোদিত হলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার কথাও উঠেছে। পুরসভার একাধিক অফিসার ও মেয়র পারিষদের কথায়, রিপোর্টে মামলা-মোকদ্দমার পথ রয়েই গিয়েছে। বিশেষত বাড়ির মালিক হয়েও যাঁরা সেখানে বাস করেন না, সমস্যা হবে তাঁদের নিয়েই। কারণ, নতুন ধারায় ‘অকুপায়ার’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে এবং বিপজ্জনক বাড়িতে যাঁরা থাকবেন, কেবল তাঁরাই অকুপায়ার হিসেবে বিবেচিত হবেন। বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরির সময়ে বাড়ির মালিকের মতো এই ‘অকুপায়ার’ও যতটা জায়গা নিয়ে থাকতেন, ততটাই পাবেন। বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও বাড়ির মালিক অরাজি হলে প্রথমেই প্রস্তাব যাবে অকুপায়ারের কাছে। কিন্তু বাস্তব হল, অনেক বাড়ির শরিক হয়তো বাড়িতে থাকেন না, কিন্তু তাঁরাই মালিক। সে ক্ষেত্রে হিসেব কী ভাবে হবে, তার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে মেয়র অবশ্য বলেন, ‘‘আইন হওয়ার পরে জটিলতা কাটতে পুরসভা পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ করবে। কোনও মামলা হবে না।’’
পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে কলকাতায়। এর মধ্যে বেশিরভাগ উত্তর ও মধ্য কলকাতায়। বিপদের ঝুঁকি নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে ওই সব বাড়ি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নানা সময়ে তা ভেঙে পড়ে হতাহতও হয়েছেন অনেকে। বিল্ডিং দফতরের ব্যাখ্যা ছিল, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙা বা সারানোর মূল প্রতিবন্ধকতা শরিকি বিবাদ এবং বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের আইনি লড়াই। তাই মামলার কারণেও অনেক সময় পিছু হটতে হয়েছে পুরসভাকে। টনক নড়ে ১৩ সেপ্টেম্বর পাথুরিয়াঘাটায় একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায়। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিপজ্জনক বাড়ির স্থায়ী সমাধানে নামে পুর প্রশাসন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর পুরভবনে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আইনজ্ঞদের একটি কমিটি স্থায়ী সমাধানের সূত্র দেবে। মঙ্গলবার মেয়র পারিষদের বৈঠকে সেই রিপোর্টই পেশ করা হয়। বিল্ডিং আইনে যে নতুন ৪১২এ ধারা সংযোজন করার কথা বলা হয়েছে, তাতে ১৩টি উপধারা দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে আলোচনা হতেই শরিকদের প্রসঙ্গ ওঠে। পুরসভার এক আমলা বলেন, ‘‘আইন করা হচ্ছে বটে, তবে জটিলতা কাটবে বলে মনে হয় না।’’
বিল্ডিং আইনে নতুন ধারার সংযোজন ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে পয়লা এপ্রিল থেকে শহরে ইউনিট এরিয়া অ্যাসেসমেন্ট পদ্ধতি লাগু করার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, শহরের মধ্যবিত্ত জমি মালিকদের সুবিধার্থে তিন কাঠা পর্যন্ত জমিতে নির্মাণের উপর বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। তিনি জানান, ওই সব ক্ষেত্রে এত কাল বাড়ি তৈরির সময়ে চারপাশে যে ছাড় দিতে হত, নতুন নিয়মে তা না দিলেও চলবে। প্রসঙ্গত, দুটি বাড়ির মধ্যে ৪ ফুট ছাড় দেওয়ার নিয়ম ছিল। মেয়রের কথায়, এ ক্ষেত্রে ওই সব বাড়ির নির্মাতারা একটু বেশি জায়গা পাবেন। তবে তাতে এক শ্রেণির প্রোমোটারের লাভ হবে বলে মনে করছেন পুরকর্তারাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy