Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রং-তুলি-ক্যানভাসে ডানা মেলেই দুনিয়ার দরবারে

জলের পাম্প, লিফ্‌ট, আবর্জনা এবং রিকশার ছবি বারবার আঁকত অভিষেক। বাড়ির লোক প্রথমটা বুঝতে পারেননি এমন জিনিসে তার এত আগ্রহ কেন। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে তাঁরা জানতে পারেন, অভিষেকের ‘অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম’ রয়েছে।

আলাপ: নিজেদের প্রদর্শনীতে বর্ষা ও অভিষেক। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

আলাপ: নিজেদের প্রদর্শনীতে বর্ষা ও অভিষেক। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

সুনীতা কোলে
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

ছোটবেলায় অন্য শিশুদের মতোই আঁকিবুঁকিতে মেতে থাকত অভিষেক। কিন্তু আর-পাঁচটা শিশুর মতো তার আঁকার খাতায় ফুল-পাতা, পাহাড়, নদীর দেখা মিলত না। জলের পাম্প, লিফ্‌ট, আবর্জনা এবং রিকশার ছবি বারবার আঁকত অভিষেক। বাড়ির লোক প্রথমটা বুঝতে পারেননি এমন জিনিসে তার এত আগ্রহ কেন। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে তাঁরা জানতে পারেন, অভিষেকের ‘অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম’ রয়েছে। রিকশায় উঠতে ভয় পায় সে, লিফটে উঠলে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে আসছে, পাম্পের আওয়াজ তার সংবেদনশীল কানে নিতান্তই অসহ্য ঠেকে। অটিজম থাকায় সরাসরি নিজের অসুবিধার কথাটুকু প্রকাশ করতে পারেনি সে। শিশুমনের বিপন্নতা ঠাঁই পেয়েছিল আঁকার খাতায়।

এখন বছর পঁচিশের যুবক অভিষেক। তার মা সোমা সরকার জানান, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ করার পাশাপাশি সপ্তাহে এক দিন তাদের ক্যান্টিনেও কাজ করে সে। আঁকার মাধ্যমেই অভিষেক পেরিয়ে এসেছে অনেক বাধা। তার পৃথিবীটা ঠিক কেমন, তা অন্যদের বোঝাতে সহায় হয়েছে সেই রং-পেনসিল, টুকরো টুকরো কাগজে তৈরি কোলাজ।

অভিষেকের মতোই ‘অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম’ রয়েছে এমন ছ’জন শিল্পীর সৃষ্টি নিয়ে আজ, সোমবার, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল। ‘অ-সাধারণ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনী চলবে চার তারিখ পর্যন্ত।

অটিজম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর তরফে ইন্দ্রাণী বসু জানালেন, অটিস্টিক মানুষেরা দুনিয়াটা অন্য ভাবে দেখেন। তাঁদের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মপদ্ধতি অন্যদের থেকে আলাদা। কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, নিজের পছন্দ-অপছন্দ বুঝিয়ে বলা বা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন তাঁরা। অচেনা মানুষদের কাছে বা অপরিচিত পরিবেশে অসহায় বোধ করেন এঁদের অনেকেই। তবে অটিস্টিক মানুষদের অনেকেরই রয়েছে তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি। ‘স্বাভাবিক’ কারও চোখ এড়িয়ে গিয়েছে, এমন অনেক কিছুই ধরা পড়ে যায় তাঁদের অতি সংবেদনশীল চোখে। রোজকার জীবনের ছোট ছোট জিনিস ধরা দেয় অসাধারণ হয়ে।

তাঁদের সেই অন্য রকম দেখা উদ্‌যাপন করতেই আয়োজন করা হয়েছে এই প্রদর্শনীর। ক্যানভাসে ধরা পড়েছে এই শিল্পীদের আশা, আনন্দ, উৎকণ্ঠার নানা মুহূর্ত। ইন্দ্রাণী জানাচ্ছেন, এই শিল্পীদের সকলেরই আঁকার স্বকীয় ধরন রয়েছে। আঁকার মাধ্যম, পদ্ধতি নিয়ে তাঁদের জানানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে তাঁদের ভাবনাকে বেঁধে ফেলা হয়নি। তাঁদের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পেতে দেওয়া হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। একুশ বছরের বর্ষা দেব যেমন জানাল, উজ্জ্বল রং তার ভালো লাগে। মা দুর্গাই হোক বা পরিচিত কেউ, তার পছন্দের বিষয় নারীরা।

ইন্দ্রাণীর বক্তব্য, অটিজম নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। এমনকী, অটিস্টিক সন্তানের যে আলাদা যত্ন প্রয়োজন, বহু বাবা-মাও মানতে পারেন না। অথচ অভিভাবকদের সহমর্মী সহযোগিতা ভীষণ প্রয়োজন এদের। অস্বাভাবিক নন, তাঁরা তাঁদের মতো— ক্যানভাসে এই বার্তাই দিতে চান ওই শিল্পীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Autism Awareness Day exhibition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE