Advertisement
E-Paper

না বলে ফুল তোলায় বৃদ্ধা শাশুড়িকে বেদম মার বৌমার, ফেসবুক সূত্রে ধৃত বৌমা

পুলিশ জানিয়েছে, যশোদা পাল নামে বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধা ‘অ্যামনেশিয়া’য় আক্রান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০২:২৫
শাশুড়ি যশোদা পালকে এবং বৌমা স্বপ্না পালকে। নিজস্ব চিত্র

শাশুড়ি যশোদা পালকে এবং বৌমা স্বপ্না পালকে। নিজস্ব চিত্র

ফেসবুক ঘাঁটার সময়ে ভিডিয়োটি দেখে চমকে উঠেছিলেন পুলিশ অফিসার। আড়াল থেকে তোলা সেই ভি়ডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, এক বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করছেন এক মহিলা। ফেসবুকে লেখা, ঘটনাটি গড়িয়া এলাকার। সূত্র বলতে এটুকুই। সেই সূত্র ধরেই বুধবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বৃদ্ধাকে খুঁজে বার করল পুলিশ। তাঁকে মারধরের অভিযোগে পুত্রবধূকে গ্রেফতারও করেছে বাঁশদ্রোণী থানা। এটাই অবশ্য প্রথম নয়। সম্প্রতি বাসে স্বমেহন করার ঘটনায় ফেসবুকের ভি়ডিয়ো দেখেই তদন্তে নেমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অসিত রাই নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, যশোদা পাল নামে বছর পঁচাত্তরের ওই বৃদ্ধা ‘অ্যামনেশিয়া’য় আক্রান্ত। তাঁর পুত্রবধূ স্বপ্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাছ থেকে ফুল তোলার ‘অপরাধে’ বৃদ্ধাকে নির্মম ভাবে মারধর করেছিলেন তিনি। যা দেখে স্বপ্নার স্বামী, অর্থাৎ যশোদাদেবীর ছেলে রঞ্জিত পালও মুখ খোলেননি। বৃদ্ধা অসমর্থ হওয়ায় নিজে পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেননি। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নানা অজুহাতে প্রায়ই যশোদাদেবীকে মারধর করা হত। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধা এতটাই অসুস্থ যে, নিজের ছেলেকে মাঝেমধ্যে ‘দাদা’ বলে ডাকেন। এমন মানুষকে যে এ ভাবে মারধর করা যায়, তা ভাবলেও কষ্ট হয়।’’

কী হয়েছিল এ দিন? পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বাঁশদ্রোণী থানার সার্জেন্ট শুভ্র চক্রবর্তী ফেসবুকে ওই ভি়ডিয়োটি পান। তিনি দেখেন, কয়েক হাজার মানুষ সেটি ‘লাইক’ ও ‘শেয়ার’ করেছেন। ঘটনাস্থল হিসেবে গড়িয়া এলাকার কথা লেখা। এর পরেই তিনি স্থানীয় থানার ওসি অমিতশঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে ঘটনাটির কথা জানান। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে ভিডিওটি যিনি ছড়িয়েছেন, তাঁর খোঁজ শুরু হয়। রুন্টু সেনগুপ্ত বলে এক জনের নাম জানা যায়। তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে মেসেজ পাঠান তদন্তকারীরা। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এর পরে রুন্টুর ফেসবুকের ছবি ঘেঁটে তাঁর মোটরবাইকের নম্বর মেলে। পরিবহণ দফতরের সাহায্যে সেই নম্বর থেকেই ঠিকানা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। রুন্টুর বা়ড়ি গিয়ে তাঁকে বুঝিয়ে ঘটনাটি জানার চেষ্টা হয়।

পোস্ট করা একটি ভিডিয়ো থেকে জানা যায় ঘটনাটি।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ওই ভিডিয়োটি ক্যানিংয়ের এক চিকিৎসকের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে রুন্টু তদন্তকারীদের জানান। এর পরে তরুণ চক্রবর্তী নামে সেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তরুণবাবু তদন্তকারীদের জানান, তিনি সুমন নামে এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের থেকে ভিডিয়োটি পেয়েছিলেন। তিনি তদন্তকারীদের ওই যুবকের নম্বরও দেন। এ-ও জানান, সুমন গড়িয়ার কাছে পঞ্চাননতলা এলাকার ঘটনা বলে জানিয়েছেন। ‘‘আমরা সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য চাই। কিন্তু উনি ঘটনা শুনে ফোন কেটে দেন। তার পর থেকে মোবাইল বন্ধ রেখেছিলেন,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

দেখুন ভিডিয়ো

লালবাজার সূত্রে খবর, সুমনকে আর খোঁজার চেষ্টা না করে তদন্তকারীরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পঞ্চাননতলা এলাকায় ঘোরাঘুরি শুরু করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যে যশোদাদেবীর বাড়ির ঠিকানাও পেয়ে যান। সেই মতো গিয়ে ছবি মিলিয়ে দেখেন, ছবির বৃদ্ধা ও মহিলার সঙ্গে যশোদাদেবী ও তাঁর পুত্রবধূর মিল রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে সত্যি ঘটনা বেরিয়ে পড়ে। তার পরেই স্বপ্নাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ২৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বৃদ্ধার খোঁজ মেলে।

এই ঘটনা সম্পর্কে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি অনীহা আর অবহেলা দিনদিনই বা়ড়ছে। এই ধরনের আচরণ তারই বহিঃপ্রকাশ।’’

Lynching Crime Facebook Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy