Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩

‘কাজ তো করতে চাই, রাতে ফিরব কী করে’

মেট্রো সূত্রের খবর, সাধারণত ৯.৪৫ মিনিটে শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পরে কাউন্টার বন্ধ করে বেরোন ওঁরা। তাতেই যথেষ্ট অসুবিধা হয় বাড়ি ফিরতে।

মেট্রো স্টেশন সামলাচ্ছেন মহিলারাই। নেতাজি ভবনে। ফাইল চিত্র

মেট্রো স্টেশন সামলাচ্ছেন মহিলারাই। নেতাজি ভবনে। ফাইল চিত্র

ফিরোজ ইসলাম
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

ঘটা করে সম্পূর্ণ মহিলা চালিত মেট্রো স্টেশন হিসেবে ঘোষিত হয়েছে নেতাজি ভবন। সেখানে এখন একশো শতাংশ কর্মীই নারী। কাজ চলছে জোরকদমে। স্টেশন মাস্টার ও তাঁর সহকারীর পাশাপাশি, সিগন্যাল, পয়েন্ট, বুকিং কাউন্টার, স্টেশনের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা— সব দায়িত্বেই রয়েছেন মহিলারা। সব মিলিয়ে মোট ৩০ জন মহিলা কর্মী সেই স্টেশনে। সব দায়িত্বই সামলাচ্ছেন তাঁরা সুষ্ঠু ভাবে। শুধু ঘরে ফেরা নিয়েই যত গন্ডগোল!

Advertisement

মেট্রো সূত্রের খবর, সাধারণত ৯.৪৫ মিনিটে শেষ মেট্রো চলে যাওয়ার পরে কাউন্টার বন্ধ করে বেরোন ওঁরা। তাতেই যথেষ্ট অসুবিধা হয় বাড়ি ফিরতে। তা ছাড়া, এই এক মাসে ঝড়-ঝাপ্টা তো কম আসেনি। কখনও রেক বিকল হয়ে শেষ মেট্রো স্টেশন ছেড়েছে আধ ঘণ্টারও বেশি দেরিতে। কাজ শেষ হতে হতে ঘড়ির কাঁটা প্রায়ই পেরিয়েছে ১১টা।

অভিযোগ, এমন সব ক্ষেত্রে বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। বাস, অটো, ট্যাক্সি খুঁজতে গিয়ে নাকাল হতে হচ্ছে দূর থেকে আসা মহিলাদের। সমস্যা বেশি হয় দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি থেকে যাতায়াত করা কর্মীদের। তাঁদের বক্তব্য, রাত হলে বাড়ি ফেরা নিয়ে যে কোনও কর্মীরই সমস্যা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে তার উপরে থাকছে নিরাপত্তার সঙ্কট। ফলে এ জন্য প্রায়ই রাতে স্টেশনে থেকে যেতে হচ্ছে অনেক কর্মীকে। কিন্তু অভিযোগ, রাত কাটাতেও হয় খুবই কষ্ট করে। কারণ, স্টেশনে থাকার ব্যবস্থাও নেই বললেই চলে।

মেট্রোয় যাত্রী পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মূলত দু’টি শিফ্‌ট রয়েছে। সকাল ছ’টা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত ও দুপুর দু’টো থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত। কাজের ফাঁকেই হাসিমুখে এক মহিলাকর্মী বলেন, “বাড়ি ফেরার সমস্যার কথা ভেবে আগে সকালে ডিউটি করতাম। কিন্তু গত এক মাস ধরে সব দায়িত্বটাই তো আমরা পালন করছি। ফলে এখন সব শিফ্‌টই ঘুরে ফিরে করতে হচ্ছে। নতুন দায়িত্বে কাজ করতে ভালই লাগছে। শুধু বাড়ি ফেরা নিয়েই একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”

Advertisement

সেখানকার আর এক কর্মীর কথায়, ‘‘রাত পর্যন্ত কাজের শিফ‌্‌ট থাকে। কাজ তো হল, কিন্তু রাতে ফিরব কী করে? সেই ব্যবস্থা তো করার কথা কর্তৃপক্ষেরই। আর মহিলারা থাকলে তো নিরাপত্তার বাড়তি ব্যবস্থাই করা হয়ে থাকে অনেক অফিসে।’’ তাঁদের জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই? কয়েক জন কর্মীর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা তো দূরের কথা, স্টেশনে বিশ্রাম নেওয়ার মতোও কোনও জায়গা নেই।

ওই স্টেশনেরই কয়েক জন কর্মী জানালেন, চলতি সপ্তাহে পরপর মেট্রো-বিভ্রাটের কারণে বেশ কয়েক দিন বাড়িই ফিরতে পারেননি তাঁদের কেউ কেউ। রাতে থেকে যেতে হয়েছে স্টেশনেই। এ দিকে, সেখানে থাকার কোনও জায়গা নেই। ফলে কোনওমতে স্টেশনের ভেন্টিলেশন চালু রেখে রাত কাটাতে হচ্ছে তাঁদের।

দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে, অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তাঁরা। ওই কর্মীদের বক্তব্য, অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কুফলও পড়বে যাত্রী পরিষেবায়। তবে মেট্রো-কর্মীদের আর একাংশের বক্তব্য, শুধু মহিলা নয়, রাতে বাড়ি ফেরা নিয়ে সমস্যা কম নয় পুরুষ কর্মীদেরও।

মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কর্মীরা আটকে পড়লে কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানালে সাহায্য করা হয়। যদিও কর্মীদের অভিযোগ, তেমন কোনও সাহায্য এখনও পাননি তাঁরা।

কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, মহিলাদের অসুবিধার কথা ভেবেই ইডেনে আইপিএলের দিনগুলোয় রাতের অতিরিক্ত যাত্রী পরিষেবা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। রাত ১২টা ১৫ মিনিটে এসপ্ল্যানেড থেকে ছেড়ে যাওয়া ওই বিশেষ মেট্রোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন জনা চার পুরুষ কর্মী।

তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, নেতাজি ভবনের কর্মীদের জন্য বিশ্রামকক্ষ চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি, মেট্রোয় রাতে মহিলাদের জন্য বিশেষ পরিবহণ ব্যবস্থা শুরু করার চেষ্টা চলছে। যদি সেটা না করা যায়, তবে মেট্রোর মুকুট থেকে খোয়া যাবে মহিলা পরিচালিত নেতাজি ভবন স্টেশনের পালক। এমনটাই আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.