বালিতে দূষণ বেশি। তাই রং করার আগে পুরনো মরচে তোলার জন্য বাদ পড়েছে বালি। পরিবর্তে ‘বন্দুক’ ব্যবহার করবে কলকাতা পুরসভা।
সম্প্রতি শুরু হয়েছে টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজ। সংস্কারের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ট্যাঙ্ক রং করা হবে। সে জন্য ট্যাঙ্কের ভিতরে একশো বছর ধরে জমে থাকা মরচে, আবর্জনা এবং পুরনো রং তোলা প্রয়োজন। এ সব ক্ষেত্রে পুরনো মরচে তোলার জন্য সাধারণত ‘স্যান্ড ব্লাস্টিং’ বা বালির ব্যবহার করা হয়। এতে খরচও কম। কিন্তু টালা ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তেমনটা করতে চাইছে না পুরসভা। কারণ, বালির ব্যবহার পরিবেশবান্ধব নয়। আশপাশের লোকালয়ে দূষণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে ‘কপার ব্লাস্টিং’ করা হবে। এ জন্য ইতিমধ্যেই কেনা হয়েছে শটগান।
আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এক ফুট দূরত্ব থেকে দেওয়ালের দিকে তাক করা হবে ওই শটগান। ওই যন্ত্র থেকে তামার ছোট ছোট দানা প্রচন্ড গতিতে মরচে পড়া দেওয়ালে গিয়ে আঘাত করবে। এর জেরে খসে পড়াবে জমে থাকা আবর্জনা, মরচে-সহ পুরনো রং। তার পরে পড়বে নতুন রঙের প্রলেপ। পুরসভা সূত্রের খবর, টালা ট্যাঙ্কের ভিতরে রং করার জন্য ফুড-গ্রেড, মরচে নিরোধক (অ্যান্টি-করোশন) রং নির্বাচন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তামিলনাড়ুর ‘সেন্ট্রাল ইলেকট্রো কেমিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তারা। ট্যাঙ্কের ভিতরের ধাতব পাতে ৩২০ মিলিমিটার পুরু রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘বালি ব্যবহার করলে দূষণ বেশি হয়। আশপাশে লোকালয় থাকার কারণে আমরা ঝুঁকি নিচ্ছি না। ব্যয়সাপেক্ষ হলেও কপার ব্লাস্টিংই করাচ্ছি। তাতে সমস্ত মরচে ঝরে পড়বে।’’
প্রসঙ্গত, টালা ট্যাঙ্কে জল রাখার জন্য মোট চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। একটি প্রকোষ্ঠ সংস্কারের কাজ চলছে আপাতত। সেটিতেই আগামী দশ দিনের মধ্যে রঙের কাজ শুরু হবে। তবে তার আগে ওই প্রকোষ্ঠে কোনও ছিদ্র রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য মঙ্গলবার জল ভরা হয়েছে। আপাতত ২৪ ঘণ্টা সেটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনও জায়গায় যদি ছিদ্র থাকে, তা হলে সেগুলি আগে মেরামত করা হবে। তার পরে শুরু হবে রং করার প্রক্রিয়া। পুরসভার হিসেব বলছে, টালা ট্যাঙ্ক রং করতে প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার লিটার রং লাগবে।
পুর কর্তারা জানাচ্ছেন, টালা ট্যাঙ্কের বাইরের অংশে অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে। প্রায় ৮৫০০ টন লোহা দিয়ে এই বিশাল ট্যাঙ্ক তৈরির সময়ে যে রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল তা অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক ছিল না। এই প্রথম ওই ধরনের রঙের প্রলেপ পড়তে চলেছে। যদিও বাইরে রং করার কাজ শুরু হতে এখনও দেরি আছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।