Advertisement
১৭ জুন ২০২৪

পরিবার বিষ খেল ‘দেনার দায়ে’, মৃত ১

ওই পরিবারের আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, চার জনের সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল না কোনও দিনই। বাবার দেনা মেটাতে বড় ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই পড়া ছেড়ে ব্যবসায় মন দিতে হয়। স্নাতক পাশ করে বিমা সংস্থায় কাজে যোগ দেন ছোট ছেলে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

ভাগ্নের ফোন পেয়ে বুধবার দিদির বাড়ি ছুটে গিয়ে মামা দেখলেন, বিছানায় শুয়ে তাঁর দিদি, মেঝেয় পড়ে বড় ভাগ্নের সংজ্ঞাহীন দেহ! যিনি তাঁকে ফোন করেছিলেন সেই ছোট ভাগ্নেরও কাহিল অবস্থা।

দ্রুত যাদবপুর থানায় খবর দেন তিনি। পুলিশ গিয়ে যাদবপুরের ইব্রাহিমপুর রোডের ফ্ল্যাট থেকে ওই মহিলা এবং তাঁর দুই ছেলেকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে ৩৫ বছর বয়সি বড় ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বাকি দু’জন ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।

পুলিশের দাবি, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কিছুটা স্থিতিশীল ছোট ছেলে তাঁদের জানিয়েছেন, দেনার দায়ে সোমবার রাতে তাঁরা বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বুধবার সকালে জ্ঞান ফিরলে তিনিই মেজো মামাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তবে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই হাসপাতালের ভর্তি তাঁর মা। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, প্রচুর দেনা ছিল ওই পরিবারের। তার জেরেই আত্মহত্যার চেষ্টা।’’ ছোট ছেলে এ দিন জানিয়েছেন, তাঁর বাবাও দেনার দায়েই আত্মহত্যা করেছিলেন। এ দিন দুপুরে ইব্রাহিমপুর রোডের ফ্ল্যাটে যায় কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা। মৃতের মামাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ দিন হাসপাতালে ভর্তি ২৭ বছর বয়সি ছোট ছেলে জানান, সোমবার রাতের খাওয়া সেরে তিন জনে এক সঙ্গে বিষ খান। বিষের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁর দাদা। ভাই বলেন, ‘‘বিষ খেয়ে বমি করে ফেলি। আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরতে হঠাৎ দেখি বিছানায় পাশেই মা পড়ে রয়েছে। দাদা মাটিতে। অনেক কষ্টে ফোন থেকে নম্বর বার করে মেজো মামাকে ফোন করি।’’

ওই যুবক জানান, ২০০২ সালে তাঁদের বাবাও দেনার দায়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। রানিকুঠি মোড়ে তাঁদের একটি দোকান রয়েছে। দোকানের জন্যই প্রচুর টাকা ধার নিয়েছিলেন বাবা। ছোট ছেলের কথায়, ‘‘বাবার মৃত্যুর পরে ওই টাকা শোধ করতে গিয়ে দাদারও দেনা হয়। একটি ব্যাঙ্ক ২৫ লক্ষ টাকা পায়। অত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’’ টাকা না দিলে বাড়ি, দোকান সবই ব্যাঙ্ক নিয়ে নেবে বলে দাবি ছোট ছেলের।

ওই পরিবারের আত্মীয়েরা জানাচ্ছেন, চার জনের সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল না কোনও দিনই। বাবার দেনা মেটাতে বড় ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরেই পড়া ছেড়ে ব্যবসায় মন দিতে হয়। স্নাতক পাশ করে বিমা সংস্থায় কাজে যোগ দেন ছোট ছেলে।

মনোবিদ সত্যব্রত কর বলছেন, ‘‘পারিবারের সম্মানহানির কথা ভেবে এই আত্মহত্যার চেষ্টা। গভীর বিষাদ কাজ করেছে। পরিবারের আত্মীয়েরা কেউ পাশে থাকলে হয়তো এ রকমটা হত না।’’ মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘জিনগত ভাবেই ওঁদের মধ্যে বিষাদের প্রবণতা রয়েছে। লড়াকু মনোভাব নেই।’’
তবে ছোট ছেলের মামাকে ডাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটির বাঁচার ইচ্ছে ছিল। তাই ফোন করেছিল। কারও সঙ্গে আগাম পরামর্শ করলে এমন হত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Unnatural Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE