সকাল ন’টাতেই ওরা হাজির। সঙ্গে মোটরবাইক। এক-একটা মোটরবাইকে তিন জন। কারও মাথায় হেলমেট নেই। চেতলা, রাসবিহারী, কসবা, বালিগঞ্জের ওই চেনা মুখগুলি মাঝেমাঝেই গোটা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ওদের তদারকিতেই দেখতে দেখতে দু’টি ব্যূহ তৈরি হয়ে গেল আলিপুরের ট্রেজারি ভবনের সামনে। একটা পুরুষদের। অন্যটা মহিলাদের।
সকাল দশটাতেই বোঝা গেল, এত প্রস্তুতি কেন। বিরোধী দলের ইচ্ছুক প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা শুরু করতেই সক্রিয় হয়ে গেল ওই বাহিনী। আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের কাছ থেকে ইচ্ছুক প্রার্থীদের পিছু নিল কয়েক জন। ট্রেজারি ভবনের সামনে থেকে কয়েক জন চলে গেল সংশোধনাগারের সামনে। শূন্যস্থান পূরণ করতে।
মনোনয়নপত্র জমা দিতে ইচ্ছুক প্রার্থী কিন্তু ট্রেজারি ভবনের ভিতরেই ঢুকতে পারলেন না। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এক পাশে।
বাবা-বাছা করে হাতের কাগজপত্র নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল প্রথমে। তাতে কাজ না হলে পরের দাওয়াই। ওই ইচ্ছুক প্রার্থীকে প্রায় ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাওয়া হল কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সংলগ্ন মাঠের পাশে বেড়ার ঘরে। সেখানে গিয়ে চলল শাসানি। এক সময়ে ছিনিয়ে নেওয়া হল কাগজপত্র। কাগজপত্র ছিনতাইয়ে বাধা দিলে বেশ কিছু ইচ্ছুক
প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে বলেও উঠেছে অভিযোগ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে
সব জায়গায় এ দিন অতিরিক্ত নজরদারির জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল, তার মধ্যে আলিপুরের ওই ট্রেজারি ভবনও ছিল। তাই পুলিশি ব্যবস্থায় কিন্তু কোনও খামতি ছিল না। বাইক বাহিনী যে এলাকার দখল নিয়েছিল, সেখানে থিক থিক করছিল পুলিশও। আলিপুরের ট্রেজারি ভবনের চত্বর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রাজ্যের ডিজি ও এডিজি-সহ পদস্থ পুলিশকর্তাদের বাসভবন। সেখানেও পুলিশের দুর্ভেদ্য পাহারা। ট্রেজারি ভবনের সদর দরজার বাইরে প্রস্তুত জল কামানও। দিন যত গড়িয়েছে, ততই পরিষ্কার হয়েছে যে, ওই পুলিশকর্তাদের বাড়ি পাহারার জন্যই মোতায়েন করা হয়েছে তাদের।
বিরোধী প্রার্থীদের আটকানোর এই নিখুঁত অপারেশনের খবর যাতে সংবাদমাধ্যমে না যায়, তার প্রস্তুতিও ছিল। তাতে পুলিশও যে সমান ভাবে সঙ্গত করেছে ট্রেজারি ভবনে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকেরা তার সাক্ষী। হেলমেটহীন বাইক বাহিনী বাধাহীন ভাবে ট্রেজারি ভবনে ঢুকছে-বেরোচ্ছে, কিন্তু সাংবাদিকেরা ঢুকতে গেলেই ১৪৪ ধারার দোহাই দিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ওই বাধা অতিক্রম করে যাঁরা ট্রেজারি ভবনের ভিতরে ঢুকতে পেরেছেন, তাঁদেরও ফিরতে হয়েছে মার খেয়ে। মোবাইল খুইয়ে।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের এক জনের মন্তব্য, ‘‘বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারলে তার দায় আমরা নেব কেন? ওরা প্রার্থীই পায়নি।’’ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে লালবাজারের কর্তারাও নীরব। লালবাজারে যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি।