বাদল দিনে: মুষলধারে বৃষ্টিতে আটকে অফিস ফেরত যাত্রীরা। শনিবার, রবীন্দ্রসদনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কলকাতা লন্ডন হতে চেয়েছিল। পেরেছে কি না, সে প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু বিলেতের থার্মোমিটার বলছে, তাপমাত্রার দিক থেকে লন্ডন কার্যত কলকাতাই হয়ে উঠেছে!
আচমকা তাপপ্রবাহে লন্ডনের নাগরিকদের হাঁসফাঁস দশা। জ্বালা জুড়োতে কেউ কেউ বা়ড়ি থেকে টেবিল ফ্যান কিংবা পেডেস্টাল ফ্যান নিয়ে রাস্তায় বেরোচ্ছেন। এমনকি, কেউ কেউ টিউব রেলেও সে সব নিয়ে উঠছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
শুধু লন্ডনই বা কেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডেও এ বার গরম মাত্রাছাড়া। কোথাও ৩৭ তো কোথাও ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। ফিনল্যান্ডের বাঙালিদের কেউ কেউ তো আবার পান্তাভাত খাওয়ার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছেন। যা দেখে কলকাতাবাসী এক যুবক তাঁর বান্ধবীকে লিখেছেন, ‘‘এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়!’’ সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন আবহাওয়া রিপোর্টও। ‘‘কলকাতা ৩০ ডিগ্রি। মেঘলা আকাশ, সঙ্গে বৃষ্টি!’’
কেউ কেউ আবার টিপ্পনীও কাটছেন। বলছেন, ‘‘নব্য প্রজন্মের বাঙালিদের কাঁধে চেপে গরমও কি বিলেত পাড়ি দিল নাকি!’’ বিলেত জুড়ে কেন এমন দশা, তা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা বলছেন, এ সবই জলবায়ু বদলের ফল। তাই আবহাওয়ার চরিত্রটাই বদলে যাচ্ছে। সেই কারণেই মেঘলা আকাশ আর ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টির লন্ডনে এখন ভাজাপো়ড়া হওয়ার মতো গরম আবহাওয়া। জুন মাসেই হিথরোয় চার দশকের রেকর্ড ভেঙেছে গরম। এখন আবার ঝড়বৃষ্টিও হচ্ছে বিলেতের কিছু কিছু শহরে।
ব্রিটেনের সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘রয়্যাল নেদারল্যান্ডস মেটেরিয়োলজিক্যাল ইনস্টিটিউট’-এর বিজ্ঞানী গির্ট জঁ ভান ওল্ডেনবার্গ বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী আমরাই। আমাদেরই দূষণ ও পরিবেশ ধ্বংসের পরিণাম এই গরম।’’ আর এক দল বিদেশি পরিবেশবিজ্ঞানীর দাবি, উত্তর গোলার্ধেই জলবায়ু বদল মারাত্মক ভাবে দেখা যাচ্ছে।
কলকাতা কী বলছে?
মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী কলকাতা এখনও লন্ডন হয়ে উঠতে পারেনি। ‘লন্ডন আই’-এর ধাঁচে গঙ্গার ধারে ‘কলকাতা আই’ প্রকল্পও কার্যত বিশ বাঁও জলে। তবু মহানগরীর আবহাওয়ায় বিলিতি গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। কলকাতার হাওয়া এখন ভরপুর স্বস্তিদায়ক। ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ, মৌসুমি অক্ষরেখার মিশেলে মেঘলা আকাশ তো আছেই, সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামছে। কখনও কখনও লন্ডনের মতো ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টিও হচ্ছে। দিনের তাপমাত্রাও মাথাচাড়া দিচ্ছে না। সন্ধ্যা নামলেই পানাহারে ‘বিলিতি’র স্বাদ নিচ্ছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আবহাওয়া এমন থাকলে মন্দ কী?’’
জুলাই মাসে কলকাতায় বৃষ্টি তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু মহানগরের আবহাওয়া যে খামখেয়ালিপনা দেখায়নি, এমনটাও বলা চলে না। এক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘চলতি বছরের
জানুয়ারিতেই তো নাগাড়ে হাড় কাঁপানো শীতে কলকাতা প্রায় লন্ডন হয়ে উঠেছিল! আচমকা সেই পারদপতনও কিন্তু স্বাভাবিক ছিল না।’’ কেউ কেউ এ-ও বলছেন, এ বার গরমেও তো কলকাতা ভোল বদলেছিল। কে বলবে এপ্রিল-মে মাসে এ বার কলকাতায় গরমের জ্বলুনি প্রায় সইতেই হয়নি। ‘‘সেটাও তো ভোলবদল,’’ মন্তব্য এক পরিবেশবিদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy