গোপাল পালধি। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির রাস্তায় ঢোকার চেষ্টা করছে একটি ট্যাক্সি। স্বাভাবিক কারণেই সেই ট্যাক্সিকে আটকান পুলিশ কর্মীরা। ট্যাক্সিচালককে জিজ্ঞাসা করায় তিনি পেছনের আসনে শুয়ে থাকা অশীতিপর এক বৃদ্ধকে দেখিয়ে দেন।
ট্যাক্সির আসনে আধশোয়া ওই বৃদ্ধের দাবি, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। পুলিশ কর্মীরা কারণ জিজ্ঞাসা করায় প্রথমে কিছু না বলতে চাইলেও পরে জানান, বাড়িতে তিনি রীতিমতো অত্যাচারের শিকার। তাঁকে খেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযোগ জানাবেন। পুলিশ কর্মীরাই তাঁকে এর পর মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে নিয়ে গিয়ে বসান।
খবর যায় কালীঘাট থানায়। সেখান থেকে অফিসাররা এসে বৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তাঁর নাম গোপাল পালধি। ঠাকুর পুকুরের ব্রজমণি দেব্যা রোডে তাঁর বাড়ি। বৃদ্ধ পুলিশকে জানান, তাঁর বয়স ৭১ বছর। তিন বছর ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে কার্যত চলচ্ছক্তিহীন। গোপালবাবুর অভিযোগ, বাড়িতে তাঁকে ঠিক করে খেতে দেওয়া হয় না। তিনি দাবি করেন, গত ১৫ দিনে তাঁকে এক বারের জন্যও ভাত খেতে দেওয়া হয়নি। শুধু বিস্কুট দেওয়া হয়েছে। তিনি এই অত্যাচারের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে চান।
আরও পড়ুন: অভিযুক্ত ওসি গ্রেফতার না হলে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি ডাক্তারদের
দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলে ওই বৃদ্ধকে পুলিশ কর্মীরা বোঝানোর পর তিনি ঠাকুরপুকুর থানাতে যান। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আমরা ঠাকুরপুকুর থানাকে ফোনে গোটা ঘটনার কথা জানাই। ট্যাক্সিচালককেও বলি সোজা থানাতে যেতে।” ট্যাক্সি চালকের ভাড়াও মিটিয়ে দেন পুলিশ কর্মীরাই।
কী বললেন বৃদ্ধ, দেখুন ভিডিয়ো
বৃদ্ধ ঠাকুরপুকুর থানাতে পৌঁছলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অফিসার ইন চার্জ প্রদীপ ঘোষালের কাছে। তাঁর কাছ থেকে প্রদীপবাবু জানতে পারেন, বৃদ্ধের এক ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে আলাদা থাকেন। স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন বৃদ্ধ গোপালবাবু। আগে তাঁর একটি পান-সিগারেটের দোকান ছিল। গোপালবাবুর অভিযোগ, তাঁকে খেতে দেওয়া হয় না, ঘরে আটকেও রাখা হয়। তাই পাড়ার এক রিকশাচালককে বলে তাঁকে নিয়ে সকালে প্রথমে চলে গিয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবার রোডে। সেখান থেকে সেই রিকশাচালকের সাহায্যেই ট্যাক্সি ধরে সোজা কালীঘাট।
আরও পড়ুন: মশা দমনে এ বার যোগ দিচ্ছে থানাও
সব অভিযোগ শুনতে শুনতে তখন দুপুর। ওসি তখন থানাতেই বৃদ্ধকে খেয়ে যেতে অনুরোধ করেন। গোপালবাবুও রাজি হয়ে যান। তার পর থানাতেই পুলিশের আতিথেয়তায় গুছিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। ডাল, ভাত, শুক্তো, মাছ দিয়ে তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ওঠার পর ডাকা হয় বৃদ্ধের পরিবারকে। পুলিশ তাঁদেরকে বৃদ্ধের অভিযোগের কথা জানায়। পুলিশের তরফে পরিবারকে বলা হয়, বৃদ্ধের ঠিক করে দেখভাল করতে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আমাদের যে আধিকারিক প্রবীণদের প্রণাম প্রকল্প দেখেন, তিনি নিয়মিত এই বৃদ্ধের খোঁজখবর রাখবেন।” পুলিশের উদ্যোগেই তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের লোকজন পুলিশ আধিকারিকদের জানিয়েছেন, বৃদ্ধের শরীরের কথা হিসেব করেই তাঁর খাওয়ার ব্যাপারে কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তবে, বৃদ্ধ বাড়ি যাওয়ার পথে বেজায় খুশি। অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে তিনি বলেন, “অনেক দিন পর খুব ভাল খেলাম। আর থানার বড়বাবু–ছোটবাবু তো দেবতুল্য।”
(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy