Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

নীল আকাশের নীচে-র সেই চিনা ফেরিওয়ালাকে মনে পড়ে? ১৯৩০-এর কলকাতায় ব্রিটিশ পুলিশ আর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংঘর্ষের মধ্যেও ফিরি করত, এমনকী বিপ্লবীদের কাজকর্মেও হাত লাগাত।

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

উৎসবের কেন্দ্রে চিনের ছবি

নীল আকাশের নীচে-র সেই চিনা ফেরিওয়ালাকে মনে পড়ে? ১৯৩০-এর কলকাতায় ব্রিটিশ পুলিশ আর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংঘর্ষের মধ্যেও ফিরি করত, এমনকী বিপ্লবীদের কাজকর্মেও হাত লাগাত। তিরিশের দশকের শেষে যখন জাপান চিন দখল করে নেয়, সে ফিরে যায় চিনের মুক্তির লড়াইয়ে কাঁধ দেবে বলে।’ মৃণাল সেনের পঞ্চাশের দশকের এই ছবিটি আমাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু খুব পছন্দ করতেন। হয়ত দু’দেশের মানুষের সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইয়ে কোথাও ঐক্য খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই মেলবন্ধনের স্মৃতি এ বারের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে, মূল ‘ফোকাস’ চিনের সাম্প্রতিক ছবি। ১৮৯৬-তে সিনেমা ঢুকে পড়ে চিনে, প্রথম চিনা ছবিটি তৈরি হয় এই নভেম্বরেই, ১৯০৫-এ। পিকিং অপেরার ফিল্ম রেকর্ডিং ছিল সেটি। আজ বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রে বিপ্লবোত্তর চিনের মূল ভূখণ্ড সহ হংকং ও তাইওয়ানের ছবি। চেন কাইগে, ঝ্যাং ইমু থেকে সাই মিং-লিয়াং, অ্যাং লি, বা ওং কার-ওয়াই চিনা ছবির গর্বের পরিচালক। সীমান্ত বিরোধ ভুলে ভারত-চিন মৈত্রী অব্যাহত রাখতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। ‘ভাষা বা সংস্কৃতির কোনও পরিধি নেই, আর সংহতি এ বারের উৎসবের মূল থিম, তাই ঐক্যের তাগিদে এই প্রথম ভরকেন্দ্রে চিনের ছবি।’

জানালেন উৎসব-অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। আর উৎসবের চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ মনে করেন ‘একটা আন্তর্জাতিক বাতাবরণ এ উৎসব, বিভিন্ন দেশের সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতির পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করে।’ ১১-১৮ নভেম্বরের এই উৎসবে তাই কান-বার্লিন-ভেনিস ফেস্টিভ্যালের সেরা ছবিগুলির ঠাঁই, যেমন বাঁ দিকে কান-এ শ্রেষ্ঠ সম্মান পাওয়া কেন লোচ-এর ছবি ‘আই, ড্যানিয়েল ব্লেক’-এর স্থির চিত্র। ডান দিকে চিনা ছবিগুলির একটি।

নিবেদিতা উৎসব

১৮৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর। বাগবাজারের ১৬ বোসপাড়া লেনের বাড়িতে বসেছে মঙ্গল ঘট, নিবেদিতার বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্বোধন। বলরাম ভবন থেকে স্বামী ব্রহ্মানন্দ ও স্বামী সারদানন্দকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন স্বামীজি। শ্রীমা প্রদীপ জ্বেলে পূজায় বসে মৃদুস্বরে উচ্চারণ করলেন তাঁর আশীর্বাণী। বোসপাড়ার দুটি বাড়িতে থেকেছেন নিবেদিতা, বাগবাজার পল্লির মানুষের কাছে একান্ত আপনার লোক হয়ে উঠেছিলেন। যে কয়েকটি বাংলা শব্দ জানতেন, তা-ই দিয়ে বাজারে, পথে, গঙ্গা তীরে প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তাঁদের সুখদুঃখের সঙ্গে মিশিয়ে দিতেন নিজেকে। এ বার সেখানেই তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্যোগে ১২ ও ১৩ নভেম্বর দু’দিনের অনুষ্ঠান। প্রথম দিন ‘নিবেদিতা— আত্মোৎসর্গের অন্য নাম’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন জহর সরকার, থাকছে নিবেদিতাকে নিয়ে বিশিষ্টজনের আলোচনা। দ্বিতীয় দিনেও আছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাশাপাশি, নিবেদিতার উজ্জ্বল স্মৃতিকে স্মরণ করতে বাগবাজারের পল্লিবাসীবৃন্দের সহযোগিতায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সূত্রধর বোসপাড়া লেন-এ ১৪ নভেম্বর সারা দিন ‘নিবেদিতা উৎসব’-এর আয়োজন করেছে। এই উৎসবে দেখা যাবে ‘নিবেদিতা-পরিকর’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী। থাকছে আলোচনা। সূত্রধর থেকে প্রকাশিত হবে যদুনাথ সরকার নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় রমা চৌধুরী রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত ও বিশ্বজিৎ রায়ের নিবেদিতা বিষয়ক বই।

গোপাষ্টমী

শহর কলকাতায় আইন অনুযায়ী গোশালা বা খাটাল নেই, তা হলে গোপাষ্টমী (এ বারে ৮ নভেম্বর) পালিত হবে কী করে? কথিত আছে, বালক শ্রীকৃষ্ণ এই দিন প্রথম সুদামা সহ অন্য বন্ধুদের সঙ্গে গো-চারণে গিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই দিনে শুদ্ধ বস্ত্র পরে গরুকে প্রতীকী স্নান করিয়ে তিলক-ফুল-মালায় সাজিয়ে গুড়, ভুষি, শাকসবজি ও টাটকা ঘাস খাওয়ানোর রীতি। কলকাতা পিঁজরাপোল সোসাইটি বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে এ কাজে উদ্যোগী। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পুরুষোত্তম পরশরামপুরিয়া জানালেন, ‘কলকাতায় পঁয়ষট্টিটি ও হাওড়ায় এগারোটি জায়গায় ১/২টি গরু ও তার পালককে এই জন্যই নিয়ে আসা হবে।’ ‘কলকাতায় সব থেকে ভাল বন্দোবস্ত হয় লেক কালীবাড়ির সামনের প্রাঙ্গণে,’ জানালেন সেবায়েত নিতাইচন্দ্র বসু। সঙ্গে তারই ছবি।

স্নেহনীড়

জন্মেছিলেন ১৯৫৪-য়, বাঁকুড়ায়। বেড়ে ওঠা রাঁচিতে। শুক্লা হাজরা দীর্ঘদিন রবীন্দ্রসংগীত শিখেছেন পূরবী মুখোপাধ্যায়ের কাছে। গাইতেনও চমৎকার। হঠাৎ চোখ পড়ে অনাথ পথশিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের উপর। অল্প দিনের মধ্যেই উত্তরপাড়ায় দশ কাঠা জমির ওপর তিনতলা বাড়ি তৈরি করে নাম দেন ‘স্নেহনীড়’। সংস্থা চালু রাখার জন্য প্রায় দিনভর দৌড়াদৌড়ি করতেন। একই সঙ্গে পঁচাত্তর জন প্রতিবন্ধী আর একশোর কাছাকাছি অনাথ পথশিশু বড় হত তাঁর আশ্রয়ে। চলে গেলেন নিতান্ত অসময়ে। পরিবারের পক্ষ থেকে ওঁর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে দেহ দান করা হয়েছে। শুক্লা দেবীর স্বামী সুব্রত হাজরা জানালেন, ‘স্নেহনীড়-এর ছেলেমেয়েদের মা চলে গিয়েছেন, কিন্তু ওঁর অসমাপ্ত কাজ আমরা বয়ে নিয়ে যাব। এর মধ্যেই উনি বেঁচে থাকবেন।

জীবনবৃক্ষ

ষাটের দশকে মাদ্রাজ আর্ট কলেজের প্রাক্তনী এস জি বাসুদেবের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল ম্যাড্রাস আর্ট মুভমেন্ট। চোলমণ্ডলম শিল্পগ্রামের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত এই শিল্পী বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন। তেলরঙের ছবির পাশাপাশি সিল্কের মোটা কাপড়ের ওপর ইউরোপিয়ান আদলে ট্যাপেস্ট্রি আর তামার উপর রিলিফের কাজেও সমান দক্ষ তিনি। বাইপাস সংলগ্ন ইমামি চিজেল আর্ট গ্যালারিতে শুরু হল কর্নাটকের বিশিষ্ট এই শিল্পীর একক প্রদর্শনী। তারই ফাঁকে সত্তরের কাছাকাছি বাসুদেবের সঙ্গে এখানেই দেখা হবে কচিকাঁচাদেরও। তিনি তাদের ছবি আঁকা সামনে থেকে দেখতে চান। প্রদর্শনী চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ‘বৃক্ষ’ বা ‘জীবনবৃক্ষ’ তাঁর প্রিয় বিষয়, সঙ্গে তারই একটি।

দুর্লভ সংকলন

বিবেকানন্দকে নিয়ে গবেষণার সূত্রে দুর্লভ নানা পত্রপত্রিকা থেকে বহু তথ্য আহরণ করেছিলেন শঙ্করীপ্রসাদ বসু। তাঁর বিবেকানন্দ ও সমকালীন ভারতবর্ষ ও নিবেদিতা লোকমাতা গ্রন্থ দুটি এই সব তথ্যের ভিত্তিতেই রচিত, কিন্তু সব তথ্য স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ব্যবহৃত হয়নি। তাই সেই তথ্যকে আকর সূত্র হিসাবে ধরে রাখতে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ ইন কনটেম্পোরারি ইন্ডিয়ান নিউজ (১৮৯৩-১৯০২) উইথ শ্রীরামকৃষ্ণ অ্যান্ড হিজ মিশন গ্রন্থের দুটি খণ্ড। এ বার প্রকাশিত হচ্ছে তৃতীয় খণ্ডটি, যেখানে থাকছে ‘ব্রহ্মবাদিন’ পত্রিকা থেকে সংবাদ-সংকলন। ১৮৯৫-এ মাদ্রাজে এই পত্রিকার সূচনা হয় স্বামীজির তিন শিষ্যের হাতে। বিবেকানন্দের জীবৎকালে তাঁর বার্তা প্রচার এই পত্রিকার মাধ্যমেই শুরু। ৮ নভেম্বর গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের বিবেকানন্দ হলে তৃতীয় খণ্ডটি প্রকাশিত হবে। ইনস্টিটিউট ও শঙ্করীপ্রসাদের পরিবারের যৌথ উদ্যোগে সে দিনই ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে প্রথম শঙ্করীপ্রসাদ বসু স্মারক বক্তৃতা (‘রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের প্রভাব— দেশে ও বিদেশে’), বলবেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ। অন্য দিকে, দেশলাই বাক্সের লেবেলে সারা বিশ্বের জীবজগৎকে তুলে ধরতে চেয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র সৃজন দে সরকার, ৭ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের সংগ্রহশালা প্রদর্শকক্ষে তারই প্রদর্শনী ‘বিশ্বভরা প্রাণ’ উদ্বোধন। প্রদর্শনী চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।

বীরভূমি

রুজির টানে তাঁরা কলকাতায়। কিন্তু শিকড় রাঙামাটির দেশে। শহুরে ‘বীরভূমি’দের সঙ্গে মাটির যোগসূত্রটা ধরে রাখতে ডানা মেলল নতুন সংগঠন— ‘বীরভূমি’। জেলা থেকে শহরে আসা সকলের পাশে থাকার সঙ্গে পাশে থাকতে চান সেই সব বীরভূমবাসীর, যাঁরা প্রয়োজনেও পান না শহুরে সুযোগ-সুবিধে। ‘বীরভূমি’র তরফে পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, জেলার অনেকেই এ শহরে সুপ্রতিষ্ঠিত। অথচ বীরভূমের মফস্‌সল, গাঁ-গঞ্জের ঘরে ঘরে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকেন অনেকে। পড়াশোনায় আরও একটু সুযোগ পাওয়ার জন্য রাত জাগে কত ছোট ছেলেমেয়ে। এদের মধ্যেই সেতু গড়তে চায় ‘বীরভূমি’। জেলার ছেলে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী— সকলেরই প্রতিশ্রুতি, ‘বীরভূমি’ এগিয়ে চলুক, পাশে থাকবে প্রশাসনও। আনুষ্ঠানিক ভাবে পথ চলা শুরু হল গত শনিবার, রবীন্দ্র সদনে। স্মৃতি রোমন্থনের পাশাপাশি ‘বীরভূমি’র প্রথম দিনটা জমে উঠল বাউল গান, নাটকেও।

চিত্রনিভা

তাঁর আঁকা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ নাম রাখলেন চিত্রনিভা (পিতৃদত্ত নাম নিভাননী)। কলাভবন থেকে পাশ করে কবির নির্দেশে এবং নন্দলাল বসুর পরামর্শে প্রথম মহিলা শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। চিত্রশিল্পী চিত্রনিভা চৌধুরীর (১৯১৩-১৯৯৯) জন্ম বাংলাদেশের চাঁদপুরে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিল্প সাধনায় ডুবে ছিলেন। কলকাতায় বিদ্যাসাগর বাণীভবনের শিল্পবিভাগের প্রধান হিসেবে সেলাই, আলপনা, চামড়ার কাজ, বাটিকের কাজ ইত্যাদি শিখিয়ে ছাত্রীদের স্বনির্ভর করেন। এ বার তাঁরই আঁকা ছবি এবং হস্তশিল্প নিয়ে শিল্পী-কন্যা চিত্রলেখা চৌধুরীর সহযোগিতায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ (১১-১৭ নভেম্বর, ৩-৮) প্রদর্শনী। সঙ্গে চিত্রনিভার ছবি।

কুয়েত থেকে

কলকাতায় থাকতেই লেখালেখির শখ। তার পর ডাক্তার হলেন। কাজেকম্মে আটকে গিয়েছিল ইচ্ছেটা। কুয়েতে বসবাসকারী দুই বাংলার লেখকদের দিয়ে পাখনা মেলল ২০০৯ থেকে ‘মেলবন্ধন’ পত্রিকা। সম্প্রতি পত্রিকার এ বছরের সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল কলকাতায়। ব্যস্ত চিকিৎসক অশোক দেব শোনাচ্ছিলেন কুয়েতে পত্রিকাটি চালানোর অভিজ্ঞতার কথা, প্রতি বার পত্রিকা প্রকাশের আগে সেটি পুরো আরবিতে অনুবাদ করতে হয়। তার পর অনুমতির জন্য পাঠাতে হয় কুয়েতের ধর্ম সংক্রান্ত মন্ত্রকে। বই ছাপাতে খরচ হয় গড়ে ১১০০ কুয়েতি দিনার। ভারতীয় টাকায় যা প্রায় আড়াই লাখ!

নিয়মভাঙা

বয়ঃসন্ধিতে বখাটে ছেলেপুলেদের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, অন্ধকার জগৎটা ছেলেবেলা থেকেই চেনা। তাই এত অনায়াসে উদ্দাম জীবনের উচ্ছৃঙ্খলতাকে সিনেমার শিল্পিত শৃঙ্খলায় বেঁধে ফেলতে পারেন এমির কুস্তুরিকা। পূর্বতন যুগোস্লাভিয়ার সারাজেভো-য় পঞ্চাশের দশকের মধ্যপর্বে জন্ম তাঁর। বাবা ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, তাঁর হাতযশেই প্রাগ-এর ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে পাড়ি দেন কুস্তুরিকা, দুঃসাহসী হয়ে ওঠার মতোই বয়স তখন তাঁর— আঠারো। চেক সহ পোল্যান্ড হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশের দিকপাল পরিচালকদের নতুন ভাবনার ছবি দেখে রীতিমতো উদ্বুদ্ধ; তার পর দেশে ফিরেই প্রথম ছবি ‘ডু ইউ রিমেমবার ডলি বেল?’। তখনও তিরিশ পেরোয়নি, ওই প্রথম ছবিতেই ভেনিস ফেস্টিভ্যালের পুরস্কার। কান-এ সেরা-র সম্মান তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘হোয়েন ফাদার ওয়াজ অ্যাওয়ে অন বিজনেস’-এ, দশ বছর পর ১৯৯৫-তে আবার কান-এ একই সম্মান ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ ছবির জন্যে, বার্লিনের সম্মান তাঁর ‘অ্যারিজোনা ড্রিম’ ছবিতে। এ ভাবে নবীন থেকে প্রবীণ হলেন একের পর এক সেরা-র শিরোপা পেতে-পেতে। নিজের দেশ- জাতির সংকটের সঙ্গে তাঁর ছবিতে অবিরত প্রশ্ন রাষ্ট্রের শাসন-শৃঙ্খল, রাজনৈতিক ভাঙন, আর কাঁটাতার নিয়ে। এ বারে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘স্পেশ্যাল ট্রিবিউট’-এ তাঁর নতুন ছবি ‘অন দ্য মিল্কি রোড’।

শতবর্ষে

মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা থেকে ছাড়া পেয়ে এসে আমি তখন উঠেছি অরুণের কাছেই। সমর সে সময় এম এ-র জন্য প্রিপারেশন করছে। এক দিন ওর একটা লেখা পড়ে আমি অবাক, দেখি অসাধারণ ইংরেজি।... প্রতি শনিবার শনিবার সমরের বন্ধুরা আসত বেহালায়। তাদের মধ্যে থাকত অশোক মিত্র (আই সি এস)। ওদের দুজনকেই আমি মার্কসিজম বুঝিয়েছিলাম।... ১৯৩৫-এ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকা বেরুলে তার প্রথম সংখ্যাতেই ছিল সমরের কয়েকটি কবিতা।’ লিখেছিলেন রাধারমণ মিত্র। আবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে মিলিয়েছেন ফরাসি কবি র‌্যাঁবোর সঙ্গে। সমর সেন (১৯১৬-১৯৮৭) যখন কবিতা লেখা শুরু করেন তখন রবীন্দ্রনাথ তো জীবিত বটেই, জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে-র মতো কবিরাও দীপ্যমান। সেই সময়ই তিনি এক নতুন কাব্যরীতি নিয়ে এসে পাঠকচিত্তে ঝড় তুলেছিলেন। তাঁর সাংবাদিক পরিচয়টিও ছিল আপসহীন যোদ্ধার। এ বার তাঁরই জন্মশতবর্ষে দে’জ থেকে প্রকাশিত হতে চলেছে পুলক চন্দ-র সম্পাদনায় কালের দর্পণে সমর সেন/তথ্যে স্মৃতিতে। বইটিতে কালানুক্রমিক প্রেক্ষিতে তিন প্রজন্মের কথা। লেখকের সম্পাদনায় এর আগে অপ্রকাশিত অগ্রন্থিত সমর সেন, অপ্রকাশিত সমর সেন: দিনলিপি ও জুজুকে, এবং বাবুবৃত্তান্ত ও প্রাসঙ্গিক প্রকাশিত হয়েছে। এর প্রথমটির প্রকাশ উপলক্ষে সমাজবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ‘দায়বদ্ধতা’ শিরোনামে যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, এ বার গ্রন্থাকারে প্রকাশ পাচ্ছে তা-ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE