Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

না ন্দীকার-এর পাশেই থানা, মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ, সারাদিন কাজ করতে-করতে কিছু কাল আগেও প্রতিবাদের মিছিল দেখতে পেতাম, ছাত্রছাত্রীদের, সাধারণ মানুষের।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

নাট্যমঞ্চে তারুণ্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি

না ন্দীকার-এর পাশেই থানা, মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ, সারাদিন কাজ করতে-করতে কিছু কাল আগেও প্রতিবাদের মিছিল দেখতে পেতাম, ছাত্রছাত্রীদের, সাধারণ মানুষের। এখন সে সব মিছিল দেখতে পাই না, বলা ভাল যে প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর আর শুনতে পাচ্ছি না। থিয়েটারের কর্মী তো, আমার কাছে থিয়েটার মানেই প্রতিবাদ, বোধহয় সে প্রতিবাদ... ’, একটু থামেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, নান্দীকার-এর কর্ণধার, তার পর বলেন ‘কাকতালীয়বৎ হয়তো, আমাদের ৩৩ তম জাতীয় নাট্যোৎসবে প্রদর্শনী— সারা পৃথিবীতে নাটক আর নাট্যকর্মীদের উপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ হচ্ছে তা নিয়ে— করছেন এক তরুণ, রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায়।’ অ্যাকাডেমিতে ১৬-২৫ ডিসেম্বরের এ উৎসবে তারুণ্যেরই দীপ্তি। মণিপুরের তরুণ হেইস্নাম তোম্বা, সাবিত্রী আর কানহাইয়ালালের পুত্র, তাঁর নির্দেশনায় কলাক্ষেত্র নাট্যগোষ্ঠী রবীন্দ্রনাথ অবলম্বনে মঞ্চস্থ করবে ‘হাংরি স্টোন’। তেমনই অসমের পাকিজা বেগম, বিহারের রণধীর কুমার, কিংবা কলকাতার অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখের নির্দেশিত নাটক। সোহিনী সেনগুপ্ত নির্দেশিত নান্দীকার-এর ‘পাঞ্চজন্য’ (বাঁ দিকের ছবি) উৎসবের শেষ নাটক, আর উদ্বোধনে পৌলমী চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত মুখোমুখি-র ‘ফেরা’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সম্মাননা জ্ঞাপন সেই উদ্বোধনী সন্ধ্যায়। নান্দীকার-এর এই ভারত আবিষ্কারের পাশাপাশি ১৭, ১৮ ও ২৪ ডিসেম্বর সন্ধেয় জ্ঞান মঞ্চে স্পেক্টঅ্যাক্টর্স-এর নাট্যোৎসব ‘স্পেক্টঅ্যাক্টিং’। ‘দু’বছর পূর্ণ হচ্ছে আমাদের’ জানালেন নাট্যগোষ্ঠীর শৈল্পিক নির্দেশক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব প্রযোজনা আর্থার মিলার অবলম্বনে ‘আগশুদ্ধি’তে শুরু।

শেষ দিনে মার্কিন মুলুকের ECTA-র প্রযোজনা ‘কোল্ড ফিউশন’। মাঝে সুদীপ্ত রচিত ও অভিনীত ‘ম্যান অব দ্য হার্ট’ (ডান দিকের ছবি), বললেন ‘লালনকে নিয়ে তৃতীয় সূত্র-এর প্রযোজনার নব সংস্করণ করেছেন নির্দেশক সুমন মুখোপাধ্যায়। যাঁরা নতুন দেখবেন তাঁরা দশক ব্যাপী এই প্রযোজনার বিবর্তনজনিত এক ইতিহাস-সমৃদ্ধ পাঠ পাবেন।’ অভিনয়ের আগে অংশুমান ভৌমিকের সঞ্চালনায় সুমনের সঙ্গে কথোপকথনে অরুণ মুখোপাধ্যায়।

শতবর্ষে

৯ অক্টোবর শতবর্ষ পেরোলেন ক্ষুদিরাম দাস (১৯১৬-২০০২)। প্রায় বিস্মৃত এই আদর্শ শিক্ষক ও মেধাবী গবেষক বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড়ের প্রান্তবর্গীয় পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন। প্রথম শ্রেণিতে সংস্কৃত অনার্স, এম এ-তে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, পাঁচটি স্বর্ণপদক প্রাপ্তি। ১৯৪২ থেকে চার দশক শিক্ষকতা, শেষ পর্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজ্য পুস্তক পর্ষদ-এর ‘বেঙ্গলি লিঙ্গুইস্টিক ডিকশনারি ফর বোথ বেঙ্গলিজ অ্যান্ড নন-বেঙ্গলিজ’ নামে একটি ত্রিভাষিক অভিধান (বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত) রচনার কাজ শেষ করেন, যদিও তা আজও আলোর মুখ দেখেনি। রবীন্দ্র প্রতিভার পরিচয়-এর জন্য ১৯৬২-তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম ডি-লিট। বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্র পুরস্কার সহ নানা সম্মান পেয়েছেন। লিখেছেন বহু উল্লেখ্য গ্রন্থ। তাঁর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টেয় মহাবোধি সোসাইটি হলে। শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ মনীষয়া দীপ্যতি প্রকাশ করবেন তাঁরই ছাত্র শঙ্খ ঘোষ। স্মারক বক্তৃতা দেবেন আর এক ছাত্র মানস মজুমদার। এ ছাড়াও উজ্জ্বল মজুমদার থাকবেন বক্তা হিসেবে।

মিলেমিশে

শুধু চিকিৎসাশাস্ত্রে নয়, তাঁর অবাধ গতি ছিল সাহিত্য, সংগীত, চারুকলা নানা বিষয়ে। রবীন্দ্রসংগীত তাঁর চিত্তের প্রশান্তি। ভালবাসতেন ওয়েস্টার্ন মিউজিক থেকে বাংলার লোকগান ও কীর্তন। শল্যচিকিৎসক ও লেখক সমীরকুমার গুপ্তর জন্ম কলকাতায় হলেও ছেলেবেলা কেটেছে মায়ানমারে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ। উচ্চ শিক্ষা লন্ডন ও লিভারপুলে। খেলাধুলোতেও কৃতী মানুষটি একাধিক গ্রন্থের লেখক। এক আকাশের ওপার এপার বইটির জন্য পেয়েছেন বাংলা আকাদেমির সুপ্রভা মজুমদার স্মারক পুরস্কার। সলিল চৌধুরী’জ ফার্স্ট লাইফ অ্যান্ড মাস সংস বইয়ের জন্য পান মুজফ্ফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার। এত সব বিচিত্র কাজের মধ্যেও তিনি মিলেমিশে মাসিক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘ দিন। চলে গেলেন সম্প্রতি।

ফিরে পাওয়া

সেরামিকে আদিম মুখের প্রতিকৃতি করেছেন, যেন বা বাস্তবতাকে পেরিয়ে। তাতে উল্লাস বেদনার দ্রবণ, আধুনিক জীবনের আর্তি। লাইন ড্রয়িংও করতেন, যার অধিকাংশই নিসর্গধর্মী। শিল্পী বাঁধন দাসের জন্ম পূর্ববঙ্গে, স্বাধীনতার পর কলকাতায়। সরকারি আর্ট কলেজে ছাত্রজীবন ষাটের দশকে, তখন বাম আন্দোলনের সঙ্গেও যোগ। রাজনৈতিক পোস্টার কিংবা নাট্যমঞ্চ তৈরির কাজও করেছেন। গ্রামীণ আর আদিবাসী জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত সংযোগ তাঁর শিল্পরীতিতেও ছাপ ফেলেছে। এক মুক্ত ভারতীয়তার চিহ্ন ফুটে ওঠে যেন তাঁর শিল্পকর্মে। সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করলেও শান্তিনিকেতনের নিসর্গই ছিল তাঁর মনের খোরাক। সব ছেড়ে চলে গিয়েছেন চোদ্দো বছর। অ্যাকাডেমিতে এ বার তাঁর শিল্পের পূর্বাপর, ১৩-১৯ ডিসেম্বর। প্রকাশিত হচ্ছে একটি বইও।

প্রথম নাটক

তাঁর উদ্যোগেই দুশো একুশ বছর আগে ডোমটোলায় (এখন এজরা স্ট্রিটে) অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বাংলা ভাষায় মঞ্চ নাটক। ভারতে ছিলেন বারো বছর। এর মধ্যে দশ বছর কলকাতায়। রুশ নাগরিক গেরাসিম স্তেপানোভিচ লেবেদেভ এসেছিলেন প্রতিষ্ঠিত সংগীতকার হিসেবে। শিখে নেন সংস্কৃত, তামিল, বাংলা ও প্রচলিত হিন্দুস্থানি ভাষাও। রুশ ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন বিদ্যাসুন্দর। আগামী বছর তাঁর ২০০তম মৃত্যুবার্ষিকী। তারই প্রস্তুতি এবং সূত্রপাতে নানা নাট্যগোষ্ঠী ও রুশ দূতাবাসের বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক দফতরের যৌথ উদ্যোগে ১৬ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় গোর্কি সদনে অনুষ্ঠিত হবে এক স্মরণসভা। মঞ্চায়ন হবে ইস্ক্রা নাট্যগোষ্ঠীর ‘আদাব’ ও স্পন্দন নাট্যগোষ্ঠীর ‘সম্রাট ও ভিক্ষু’। থিয়েটারের গান পরিবেশন করবে কলাকার গোষ্ঠী। থাকবে লেবেদেভের জীবন ও কর্ম বিষয়ক প্রদর্শনী এবং তাঁর নামাঙ্কিত বক্তৃতা।

নাট্যোৎসব

কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের বাইশতম নাট্যোৎসব (১৬-২৭ ডিসেম্বর) শুরু ঋত্বিক সদনে, ব্রাত্য বসু নির্দেশিত ‘অদ্য শেষ রজনী’ মঞ্চায়নে। শেষ হবে নান্দীকারের ‘পাঞ্চজন্য’ মঞ্চায়নের পরে রুদ্রপ্রসাদের সমাপ্তি ভাষণ দিয়ে। সতেরোটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের সঙ্গে দুটি ছোটদের নাটকও— ২৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে দশটায়। ওই দিনই সন্ধে ৬-৪৫-এ সম্প্রতি প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের নাটক ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ (সঙ্গের ছবি) মঞ্চায়নের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন কল্যাণী নাট্যচর্চা-র। অন্য দিকে, নবব্যারাকপুরের প্রবাহ-র দশম বর্ষের নাট্যোৎসব শুরু হয়েছে কৃষ্টি অডিটোরিয়ামে, চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ ডিসেম্বর অন্য থিয়েটার-এর ‘নটী কিরণশশী’, ১৬-য় বহুরূপীর ‘কথা নালন্দা’, ১৭-য় অযান্ত্রিকের ‘প্রথম পাঠ’। উৎসব শেষ হবে চার্বাক-এর ‘চিটেগুড়’ মঞ্চায়নে। এ বছরও কলাক্রান্তি নাট্য সংস্থার ২৩তম ছোট নাটক প্রতিযোগিতা মুক্তাঙ্গনে, ১৭-১৮ ডিসেম্বর, উদ্বোধন সন্ধে ৬টায়। থাকছে অসমিয়া, মালয়ালম, হিন্দি, ইংরেজি ও বাংলা নাটক। সঙ্গে বহুরূপী-র গীতা চক্রবর্তীকে সম্মাননা।

মুক্তির স্বাদ

‘লভিব মুক্তির স্বাদ’ কথাটার মানে এখনকার শিশুরা নিশ্চয় বুঝবে না, তাদের কাছে মুক্তিই বা কী, তার স্বাদই বা কোথায়! এর মধ্যে চিলড্রেনস লিটল থিয়েটার (সিএলটি) যে প্রচেষ্টা করে চলেছে, সেটা দেখে অবাক মানতে হয়। এখনও এঁরা শিশুদের নিজের মতো করে বেড়ে ওঠার অবকাশ তৈরি করতে চান, অনেক কিছু শেখান, কিন্তু শেখানোর মতো করে না শিখিয়ে সকলে মিলে শেখার মতো করে শেখান। ফলে নাচ, গান, আঁকা, খেলার (দাবা, স্কেটিং, টেবিলটেনিস) ফাঁকে ফাঁকে কী করে যেন আরও কিছু শেখা হয়ে যায়— সততা, নিয়মানুবর্তিতা, আচারব্যবহার, নিজস্ব রুচি ইত্যাদি। সমর চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১৯৫২ সালের এই প্রতিষ্ঠান শিশু রংমহল নামে এখনও পালন করছে বাৎসরিক উৎসব, ছোট্ট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এবং দিয়ে। এ বছরের অনুষ্ঠান ১৬-১৮ ডিসেম্বর, ওদের নিজস্ব সভাগৃহ অবনমহলে।

গুরু গোবিন্দ

শিখ সম্প্রদায়ের শেষ তথা দশম গুরু গোবিন্দ সিংেহর তিনশো পঞ্চাশতম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেআইএস গ্রুপ এডুকেশনাল ইনিশিয়েটিভস এবং দ্য শিখ কালচারাল সেন্টার-এর (দ্য শিখ রিভিউ) যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি নজরুল মঞ্চে ছিল এক অনুষ্ঠান। সূচনায় অবতার সিংহের বক্তৃতা ও শিখ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গুরবাণী কীর্তনের পর গুরুজির ‘কর্মজীবন, সংস্কার ও বাণী’ বিষয়ে আলোচনা করলেন হরজিন্দর সিংহ মাঝি, সুখপ্রীত সিংহ উধোক, রুপ সিংহ প্রমুখ। কবিতা পড়ে শোনান পঞ্জাব সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি গুরভজন সিংহ গিল সহ অনেকে। পঞ্জাবি গানের পর ছিল বীর খালসা দলের ‘গাটকা’ বা শিখ মার্শাল আর্ট প্রদর্শন।

স্মারক বক্তৃতা

একদা শহরের ক্ষয়, ক্লান্তি, দ্বিচারিতার মধ্যেও স্বপ্ন দেখাত সমর সেনের কবিতা, তাঁর চিন্তার কেন্দ্রে থাকত মানুষের সার্বিক কল্যাণের কথা। আজ বিশ্বায়ন, প্রযুক্তি, জনসংখ্যা ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে শুধু মানবজগতেই নয়, প্রাণিজগতেও গভীর সংকটের ছায়া, ফলে মানবকেন্দ্রিক চিন্তার গণ্ডি ছাড়িয়ে আরও বৃহত্তর চিন্তার অবকাশ তৈরি হয়েছে। সেই চিন্তার সূত্রে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষিতে ‘সমর সেন শতবর্ষ স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপেশ চক্রবর্তী: ‘মানবিকতা, অ-মানবিকতা’। ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় ভারতীয় সংগ্রহশালার আশুতোষ শতবার্ষিকী সভাগৃহে। সভামুখ্য তপতী গুহঠাকুরতা। বিশেষ অতিথি শঙ্খ ঘোষ। আয়োজনে ভারতীয় সংগ্রহশালা ও অনুষ্টুপ।

ছিন্নমূল

জাতিদাঙ্গায় বিধ্বস্ত আরাকান থেকে রোহিঙ্গিয়ারা আসছেন বাঁচার তাগিদে, বৌদ্ধপ্রধান দেশে তাঁদের স্বীকৃতি নেই। সংখ্যালঘু ছিন্নমূল এই রোহিঙ্গিয়াদের নিয়ে দশ বছর ধরে কাজ করে চলেছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী সইফুল হক ওমি। তাঁর তোলা ষাটটি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী আইসিসিআর-এ, ১৩-১৯ ডিসেম্বর (৩-৮টা)। উদ্বোধন করবেন প্রণবরঞ্জন রায়। অন্য দিকে, কলকাতার সাত জনের দল ‘সপ্তক’, তাঁদের প্রথম আলোকচিত্রের প্রদর্শনী দেখা যাবে ১৭-১৮ ডিসেম্বর (৪-৮টা) বেহালার ‘অভিসার’ চিত্রশালায়।

বিকাশ-স্মরণ

তিনি কর্মজীবন শুরু করেন অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর নাটক বিভাগে। এখানে কাজ করার সময় ‘অভিযাত্রী’ ছবিতে প্রথম অভিনয়। চলচ্চিত্র ও মঞ্চাভিনেতা বিকাশ রায় ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক ও প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি এ ও এবং বি এল পাশ করে ওকালতি শুরু করেন। পরে ওকালতিতে মন না বসায়, রেডিয়ো ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন। উত্তমকুমারকে শিল্পী সংসদ তৈরি করায় আইনি সাহায্য করেছিলেন। এই অসাধারণ চরিত্রাভিনেতার আরও অনেক অজানা কথা জানা যাবে ১৮ ডিসেম্বর সন্ধে ৬ টায় নন্দন ২ প্রেক্ষাগৃহে। বিকাশ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী সংসদের নিবেদন একটি তথ্যচিত্র ও আলোচনা সভা। বলবেন জহর সরকার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও জগন্নাথ বসু।

অভিনেত্রী

ছোটবেলায় সবার মতোই তাঁরও স্বপ্ন ছিল আইসক্রিমওলা হওয়া বা কল্পনা চাওলার মতো আকাশে পাড়ি জমানো তবে, এর সঙ্গে গান গাওয়া, ছবি আঁকা ও অভিনয় করার ইচ্ছেটাও যে ছিল না, তা নয়। ক্লাসিকাল সংগীতে পারদর্শী ছোট্ট মেয়েটি অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে গানও গেয়েছিল কিছু দিন। কিন্তু পরে পুরোপুরি অ্যাক্টর বনে যাবেন, এটা তখনও ভাবেননি। ‘ইলেভেন-টুয়েলভ পড়ার সময় পোর্টফোলিয়ো বানিয়ে সার্কুলেট করছিলাম। আমার ছবি মেক-আপ শিল্পী প্রবীরকুমার দে-র হাতে পড়ে। এর পর আমার ছবি দেখাই সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, কিরণ উত্তম ঘোষকে। একই সপ্তাহে বড় দুই ডিজাইনারের জন্য শুট করি। তার পর থেকেই মডেল হয়ে গেলাম’, বলছিলেন মুম্বইবাসী বিদিতা বাগ। সাঁতরাগাছিতে জন্ম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক বিদিতা মুম্বইয়ে গিয়ে প্রদীপ সরকার, সুজিত সরকার প্রমুখের বেশ কিছু টিভি কমার্শিয়ালে কাজ করেন। মডেল হিসেবেও তাঁর কাজ সমাদৃত। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ও করে ফেলেছেন— যেমন শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘ইচ্ছে’, গৌতম হালদারের ‘মুক্তি’, পার্থসারথি জোয়ারদারের ‘কাগজের নৌকো’, প্রতীক চক্রবর্তীর ‘ফ্রম সিডনি উইথ লাভ’ ইত্যাদি। মুক্তির অপেক্ষায় ‘টি ফর তাজমহল’, ‘ওয়ান্স এগেন’, ‘ইয়ে ক্যায়সা খিলাড়ি’, ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বীথিন দাসের ‘তিনাঙ্ক’ ছবিতে নলিনীর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের।

প্রয়াণ

রতনকুঠির একপ্রান্তের একটা ঘরে রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যেই এই সে দিনও বাঁচতেন অরুণকুমার বসু। বিশ্বভারতী-তে তখন সদ্য শুরু হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষণা কেন্দ্র। তারই গবেষক হিসেবে বেশ কয়েক বছর তাঁর শান্তিনিকেতন-বাস। বিশ্বভারতী আয়োজিত নানা আলেখ্য-র পরিকল্পনা করতেন তিনি। গানের ভিতর দিয়েই জীবনের পূর্ণতা খুঁজেছেন। জন্ম ১৯৩৩-এ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন পঞ্চাশ বছরেরও বেশি। বঙ্গবাসী কলেজে শুরু। রবীন্দ্রভারতী, কলকাতা, বর্ধমান, যাদবপুর, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা সময়ে পড়িয়েছেন। রবীন্দ্রভারতী-র রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রের প্রথম নির্দেশক অধ্যাপক। লিখেছেন বাংলা কাব্যসংগীত ও রবীন্দ্রসংগীত, আমার আপন গান, ক্ষণিকের বাণীশিল্পী, রবীন্দ্রবিচিন্তা, সলিল থেকে সুমন ও তার পর সহ নানা বই। সদ্য প্রকাশ পেল নজরুল জীবনী (আনন্দ)। তবু, নিজেকে নিছক শিক্ষক আর, জনান্তিকে গীতিকার এই পরিচয়েই দেখতে ভালবাসতেন। ভাস্কর বসু ছদ্মনামে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন অরুণবাবু। তাঁর লেখা ‘সোনার হাতে সোনার কাঁকন কে কার অলংকার’-এর মতো বেশ কিছু গান আজও স্মরণীয়। জীবনের শেষ কয়েক বছর গলার অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার মধ্যেও চলছিল রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর গান নিয়ে নতুন লেখালেখি, বইয়ের কাজও। পুরনো-নতুন ছাত্রছাত্রীরা যোগাযোগ রেখেছিলেন। তাঁদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেন লিখে লিখে। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন কলকাতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE