Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতার কড়চা

সদ্য ঘুমভাঙা ভোরে কলকাতা চিরকালই বড় রহস্যময়, অপরিচিত, তায় আবার শীতের কুয়াশায় মোড়া। নতুন বছরে প্রাতঃভ্রমণে বেরলে শহরটাকে মনে হতেই পারে নতুন দেশ। হাঁটতে হাঁটতে, চারপাশ দেখতে দেখতে, চোখে লেগে থাকা শেষ রাতের ঘুমটুকুও উবে যাবে।

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

সবুজ এখনও বাঁচে...

সদ্য ঘুমভাঙা ভোরে কলকাতা চিরকালই বড় রহস্যময়, অপরিচিত, তায় আবার শীতের কুয়াশায় মোড়া। নতুন বছরে প্রাতঃভ্রমণে বেরলে শহরটাকে মনে হতেই পারে নতুন দেশ। হাঁটতে হাঁটতে, চারপাশ দেখতে দেখতে, চোখে লেগে থাকা শেষ রাতের ঘুমটুকুও উবে যাবে। বেলা বাড়লেই নির্জন সেই সুখভ্রমণ শেষ, ব্যস্ত সশব্দ কলকাতা পুরনো চেহারা নিয়ে ফের ঝমঝম করে কানের কাছে বাজতে থাকবে। এই চেনা রুটিনটাই আজকাল যেন একটু নড়েবড়ে, শহরের মানুষের মনে সুখ নেই, স্বস্তিও কি আছে? কুয়াশা কেটে গেলে আর আগের মতো জমকালো ঠান্ডা পড়ে না, রোদে কমলালেবুর রং লাগে না, কেমন মলিন ফ্যাকাশে শহরের মুখ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো স্মৃতিস্থাপত্যের একটু দূরেই ঢ্যাঙা তালগাছ হয়ে বহুতল আকাশ ছেয়ে ফেলছে, বেমানান বিসদৃশ! তার ওপর জলবায়ুর উৎপটাং বদলে তাপমাত্রার অনিয়মে এই শীতেও গা থেকে খুলে ফেলতে হচ্ছে পশমবস্ত্র। মাসপয়লায় নোটের আকাল, সবুজ সবজি থেকে নতুন গুড় সব কিছুর জন্যেই ‘ক্যাশলেস’ সরকারি প্রস্তাব। নাজেহাল নাগরিক। তবু তো বছরের শুরু! কুয়াশা ছাপিয়ে গাছে সবুজ পাতা। শহরের মানুষজন কী ভাবে বর্ষবরণ করে, সেটাই এখন দেখবার... শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

রবিতীর্থ ৭০

দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেটের কাছে পরাশর রোডে ১৯৪৬ সালে দ্বিজেন চৌধুরীর সহযোগিতায় সুচিত্রা মিত্র প্রতিষ্ঠা করেন ‘রবিতীর্থ’, যা ঐতিহ্যবাহী রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বঙ্গে তো বটেই, বহির্বঙ্গেও নন্দিত। প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেছিলেন কালিদাস নাগ। সুচিত্রা মিত্রের ষষ্ঠ প্রয়াণ দিবস ও প্রতিষ্ঠানের সত্তর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি, সন্ধে সাড়ে ৬টায় শিশির মঞ্চে ‘তোমার সুরের ধারা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রবিতীর্থ। অনুষ্ঠানে থাকবে সম্মেলক গান এবং প্রেম, পূজা, প্রকৃতি ও বিচিত্র পর্যায়ের রবীন্দ্রগান সংকলিত একটি সংগীতালেখ্য। পরিবেশন করবেন অনিতা পাল, মন্দিরা মুখোপাধ্যায় ও শুভ্রা সাহা। পৌরোহিত্যে মীনাক্ষি সিংহ।

প্রয়াণ

শিক্ষকতা শুরু করেন মৌলানা আজাদ কলেজে। পরে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড সেন্ট জন্‌স কলেজ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সত্যব্রত রায়চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৫ সালে পূর্ববঙ্গের কুমিল্লায়। পড়াশোনা কুমিল্লা ঈশ্বর পাঠশালা, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ ডি এবং ডি লিট। অবসরের পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এমেরিটাস ফেলো নির্বাচিত হন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব কমনওয়েলথ স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ছিলেন। লেফটিজম ইন ইন্ডিয়া ১৯১৭-১৯৪৭, নিউক্লিয়ার পলিটিক্স প্রভৃতি তাঁর রচিত গ্রন্থ। সম্প্রতি তিনি একাশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন।

পৌষ পার্বণ

দেশ জুড়ে নোট-নৈরাজ্যের মধ্যেও কিন্তু বার বার হাতছানি দিচ্ছে উৎসবের নানান বর্ণিল ঢেউ। আর সেই ‘ঢেউ’ যদি পৌষ উৎসবের হয়, তা হলে তো ভেসে যাওয়ার মানা নেই! হেলো হেরিটেজের উদ্যোগে এবং হিডকো ও আইসিসিআর-এর সহায়তায় ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত (১২টা-সাড়ে ৭টা) পৌষ পার্বণের সাজে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে রবীন্দ্রতীর্থ। পাওয়া যাবে ডোকরা, পটচিত্র, মাদুর, টেরাকোটা, পুতুল থেকে বুটিক শাড়ি, কাঁথা শিল্পের বিচিত্র সম্ভার। থাকবে নলেনগুড়ের সন্দেশ, পিঠেপুলি থেকে বিরিয়ানি, ভেলপুরি, আচার এবং নানা লোভনীয় আহারের বাহার। সঙ্গে গান-কবিতা-আড্ডায় থাকবেন বাংলাদেশের সংগীত শিল্পী লিলি ইসলাম, জোজো, ইন্দ্রাণী হালদার, অগ্নিমিত্রা পল, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস সেন, অনুপ মতিলাল প্রমুখ।

সমানে সমানে

তাঁর বিশেষ মমতা ছিল ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর উপর। এক সময়ে এই সব স্কুল ছিল বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ। বর্তমান শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের নাক-উঁচু দৃষ্টিভঙ্গি এদের প্রায় অপাংক্তেয় করে ফেলেছে— এ তাঁকে বড় পীড়িত করেছে, বহুকাল। হয়তো সেই কারণেই জীবনের শেষ অসমাপ্ত উপন্যাসটিও গড়ে তুলছিলেন এমনই একটি স্কুলের পটভূমিকায়। একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে এই সব স্কুলের ছেলেমেয়েরাও নামী-দামি স্কুলের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারে— এই ছিল তাঁর বিশ্বাস। তাঁর সুপ্ত বাসনাকে সাকার করতে এ রকমই দু’টি স্কুল বেছে নিয়ে সুচিত্রার পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে সুচিত্রা ভট্টাচার্য মেধা বৃত্তি। মাসিক হাজার টাকা করে পাবে ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল আর পরেশনাথ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির মোট আট জন দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রী। ১০ জানুয়ারি, সুচিত্রা ভট্টাচার্যর ৬৮তম জন্মদিনে হবে এই বৃত্তি প্রদানের অনুষ্ঠান, শিশির মঞ্চে, সন্ধে ৬টায়। অনুষ্ঠানে থাকছে সুচিত্রার লেখা অবলম্বনে শ্রুতিনাটক, গল্পপাঠ। তাঁর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করবেন সুতপা ভট্টাচার্য।

আমাদের ধুবড়ি

এক সময় ব্রহ্মপুত্র ও গদাধর নদী দিয়ে তিন দিক ঘেরা এই সুন্দর শহর ধুবড়ি অবিভক্ত বাংলারই অংশ ছিল। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন বঙ্গের গোয়ালপাড়া জেলাকে অসমের অন্তর্ভুক্ত করলে ধুবড়িও চলে যায়। ধুবড়ি আলোকশিল্পী প্রয়াত তাপস সেন, চলচ্চিত্রাভিনেতা প্রয়াত অনিল চট্টোপাধ্যায়, সম্প্রতি ‘মিস ইন্ডিয়া’য় প্রথম স্থানাধিকারী প্রিয়দর্শিনী চট্টোপাধ্যায়দের শৈশবভূমি। ধুবড়ির প্রাক্তন অধিবাসী যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা বা তার কাছাকাছি কর্মসূত্রে বসবাস করছেন, তাঁদের উদ্যোগেই সাত বছর ধরে ‘কলকাতায় ধুবড়ি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বছরের সম্মেলন ৮ জানুয়ারি, মধ্যমগ্রামের ‘দেবদাস গার্ডেন’-এ। সম্মেলনে একটুকরো ধুবড়িকে খুঁজে পেতে সারা দিন সব বয়সিদের স্মৃতিচারণা, আড্ডা, গান, পাত পেড়ে খাওয়া। সম্মেলন উপলক্ষে ‘আমাদের ধুবড়ী’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশিত হয়।

রাজপুত সংহতি

‘সাহস বিস্তৃত বক্ষপট’ নিয়েই ওদের পথচলা। ওঁরা মানে নানা শাখাপ্রশাখায় ছড়িয়ে থাকা বাংলার রাজপুত সম্প্রদায়ের মানুষজন। রাজপুতদের বীরত্ব ভারতের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তাঁদেরই উত্তরসূরি হিসেবে আজকের প্রজন্ম গর্বিত। বাংলার রাজপুত ঘরানার অনেকেই ফেসবুকের কল্যাণে গড়ে তুলেছেন একটি যোগসূত্র। তৈরি হয়েছে একটি কমিউনিটি, ‘উই আর রয়্যাল রাজপুত অব বেঙ্গল’। সম্প্রতি এর সদস্যরা মিলিত হলেন এক আনন্দ উৎসবে, প্রকাশ পেল এঁদের মুখপত্র ‘রাজপুত সংহতি’। গল্প কবিতা বা ভ্রমণ কাহিনির সঙ্গে রাজপুত এবং তাদের ইতিহাস, এই বঙ্গে আগমন ইত্যাদি বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এভারেস্ট জয়ী বসন্ত সিংহরায়, অলিম্পিয়ান সুস্মিতা সিংহরায়, মুর্শিদাবাদের বিধায়ক শাওণী সিংহরায় প্রমুখ।

আত্মপ্রকাশ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ পঞ্চাশ পেরোল। যে সমস্ত তিরিশ বর্ষীয় যুবকদের নিয়ে এই উপন্যাস, তাঁদের এক জন বাদে বাকিরা বিদায় নিয়েছেন। লেখকও। এক সান্ধ্য আড্ডায় সাগরময় ঘোষ সুনীলকে বলেছিলেন, ‘এ বার পুজোয় তোমায় একটা উপন্যাস লিখতে হবে।’ পরেরটুকু সুনীলের বয়ানে: ‘‘একদিন সাগরদা বললেন, তোমার উপন্যাসের নামটা লিখে দাও, বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করতে হবে। আমি প্রায় কিছু না ভেবেই নাম বলে দিলাম ‘আত্মপ্রকাশ’।’’ আর স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, ‘পরের বছরই আমাদের বিয়ে। আত্মীয়দের মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলেছিল, উপন্যাস পড়ে দেখলেই বোঝা যায় পাত্রের নমুনা।’ আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে বোহেমিয়ানা নিয়ে যে বাংলা উপন্যাস লেখা যেতে পারে তা সত্যিই ভাবা কঠিন ছিল।

শিল্পের রসদ

থিয়েটারের নতুন প্রজন্মের জন্যে জাতীয় সেমিনার। আয়োজনে মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার। ‘প্লে টু প্রোডাকশন’... নাটক কী ভাবে সাহিত্য থেকে মঞ্চোপযোগী হয়ে ওঠে, তার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে, হাতে-নগদ অভিজ্ঞতা নিয়ে শিল্পিত আলোচনায় মাতবেন পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের ১১ জন বিশিষ্ট নির্দেশক। মিনার্ভা থিয়েটারে ৬-১০ জানুয়ারি। ‘নতুন ছেলেমেয়েরা যাতে শিল্পের রসদ সংগ্রহের সুযোগ পান, তাই এ উদ্যোগ।’ জানালেন সভাপতি অর্পিতা ঘোষ।

ফটোগ্রাফি ডে

রাজেন্দ্রলাল মিত্র পুরাতত্ত্ব চর্চার পাশাপাশি যে ক্যামেরা চর্চাও করতেন, এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও আজ, ৫টায় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে ‘সি গুহ স্মরণে বই-চিত্র গ্যালারি’তে পালিত হবে বেঙ্গল ফটোগ্রাফি ডে। অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রয়াত ফটোগ্রাফার আমেদ আলিকে নিয়ে আলোচনা করবেন অরুণ গঙ্গোপাধ্যায় ও অরূপ সাধু। এর পর দীপব্রত শূর ও শঙ্কর ঘোষের স্লাইড শো। ৩-১৪ জানুয়ারি (২-৮টা) পর্যন্ত চলবে সলিল বিশ্বাসের ১৯৮০-র দশকে তোলা কালো-সাদা আলোকচিত্রের প্রদর্শনী।

স্বীকৃতি

৮ জানুয়ারি প্রিয়া সিনেমায় সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা ছবির সমাবর্তনের আয়োজন করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন। হালফিল সময়ে তরুণ-তরুণীরা যে ভাবে বাংলা ছবিতে নতুন রক্তস্পন্দন আনার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছেন, তাকে স্বাগত জানাতেই এই অনুষ্ঠান। ‘এই নবীন পরিচালক প্রযোজক অভিনেতা কলাকুশলীদের আন্তরিক কাজগুলির ন্যূনতম স্বীকৃতিদান অত্যন্ত জরুরি।’ বললেন সম্পাদক নির্মল ধর।

সম্মান

পদ্মার ভাঙনে চলে গেল জন্মগ্রাম মিরপুর। বছর দশেক বয়স থেকে ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে রাজানগর গ্রামে বসতি। আলকাপের দলে যোগও সেই ছোট বয়সেই। ‘পদ্মা ধ্বংস করে দিল, আর সৃষ্টি হল নিজের’— বলছিলেন আলকাপ লোকনাট্যের খ্যাতিমান অভিনেতা মাহাতাবউদ্দিন। আদতে ‘ছোকরা’— নারী চরিত্রে অভিনয় করেই কাটিয়ে দিলেন অভিনয়-জীবনের পুরোটাই। অগ্রজ অভিনেতা প্রবাদপ্রতিম ঝাকসু-র সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। মুর্শিদাবাদ রঘুনাথগঞ্জের এই অঞ্চলে তখন আলকাপের জোয়ার। আলকাপ থেকে পঞ্চরস রূপান্তরে দলবল নিয়ে বিহারের পূর্ণিয়া থেকে অসম, কোচবিহার থেকে ওপার বাংলার রংপুর-রাজশাহি-বগুড়ার বিস্তৃত অঞ্চলে তাঁর অভিনয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। রাম-বলরাম, দাতা কর্ণ, বেহুলা সুন্দরী, রাজা হরিশচন্দ্র, নবাব বাদশা, মতিকুকুর— পৌরাণিক-ঐতিহাসিক-সামাজিক নানা পালায় তিনি তখন মশগুল। বললেন— ‘নিজে হারিয়ে যেতাম, অভিনয় করতাম যখন।’ আলকাপ তো আদিতে তুচ্ছতার চোখে দেখা হত— তারপর পাঁচমেশালি নাচ-গান-নাটকে মিশে হল আজকের পঞ্চরস। আশি পেরনো মাহাতাবউদ্দিন লেখা ও পড়া কোনওটাই জানেন না। তাঁর গর্বিত ঘোষণা— ‘গান ছাড়া আমি কিছু জানি না, এটাই আমার সম্পত্তি। আলকাপের নামে কেউ যদি জাহান্নমে ডাকে, আমি যাব।’ সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের উৎসবে সংবর্ধনা নিতে।

শিক্ষাব্রতী

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন আজীবন। রবীন্দ্র অন্বেষা, রবীন্দ্রোত্তর কাল, রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনা, বিশ্বভরা প্রাণ: পরিবেশ ভাবুক রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ: সৃষ্টির উজ্জ্বল স্রোতে— এমনই আরও অনেক বইয়ের লেখক উজ্জ্বলকুমার মজুমদার ছিলেন বঙ্গভাষা ও সাহিত্যের মেধাবী ছাত্র ও বিশিষ্ট অধ্যাপক। ‘বাংলা কাব্যে পাশ্চাত্য প্রভাব’ নিয়ে গবেষণা করেন আচার্য সুকুমার সেনের কাছে। সাহিত্য-সাহিত্যিকদের পাশাপাশি লিখেছেন বাঙালি মনীষীদের নিয়েও। প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা, শিক্ষকতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা বিভাগের প্রধানও ছিলেন। অতিথি অধ্যাপক ছিলেন রবীন্দ্রভারতী ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমন্ত্রিত বক্তা হয়ে গিয়েছেন আমেরিকায়। রবীন্দ্র তত্ত্বাচার্য উপাধি দিয়েছিল টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো, সেখান থেকেই পান সুকুমার সেন স্বর্ণপদক। পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরোজিনী বসু স্বর্ণপদকও। এমন বিবিধ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সারা জীবন, শেষে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’। সংস্কৃত আর ইংরেজিতেও সমান দখল, ‘বিদেশি বইপত্রে ঠাসা বইয়ের আলমারিগুলি। হলিউডের ছবি দেখতে শিখিয়েছিলেন আমাদের। ছড়ার হাত ছিল চমৎকার, স্কুলের জন্যে আমাকে এক বার লিখে দিয়েছিলেন।’ বলছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র কুণাল, ‘খেলাধুলায়ও অসম্ভব ভাল ছিলেন ছাত্রজীবনে, দারুণ হকি খেলতেন, ফুটবলও। ভালবাসতেন নাটক চলচ্চিত্রও। সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।’ নির্মলকান্তি ও সীতা মজুমদারের পুত্র উজ্জ্বলকুমারের জন্ম ভবানীপুরে ১ এপ্রিল, ১৯৩৫। গত ২৪ ডিসেম্বর হঠাৎই চলে গেলেন স্ত্রী মায়া ও দুই পুত্র কুণাল-কুশলকে রেখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkatar Korcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE