Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তিন বছর পরে বাড়িতে তরুণী

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সরকারি চাকুরে বাবার আদুরে মেয়ে ব্যতিকা হাসিখুশি স্বভাবের ছিলেন। ২০১৩ সালে হৃদ্‌রোগে মারা যান বাবা। তার পরেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ওই বছরের ১৯ জুন তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তত দিনে প্রায় সব স্মৃতিই হারিয়ে ফেলেছেন ব্যতিকা।

ব্যাতিকা মণ্ডল

ব্যাতিকা মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

বাবার হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি মেয়ে। আঘাত এতটাই ছিল, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। রাতের অন্ধকারে তাঁকে রেখে যাওয়া হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। তিন বছর ধরে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং করে গত বছর স্বাভাবিক হন তিনি। কিন্তু অভাবের তাড়নায় বাড়ি ফেরাতে চাননি মা। এক বছর ধরে চেষ্টা চালান হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মী, এলাকার মহিলা ও পঞ্চায়েতের সদস্যরা। অবশেষে সোমবার, দেবী পক্ষের সূচনায়, সোদপুরের বিলকান্দার বাড়িতে ফিরলেন তিনি, ৩০ বছরের ব্যতিকা মণ্ডল।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সরকারি চাকুরে বাবার আদুরে মেয়ে ব্যতিকা হাসিখুশি স্বভাবের ছিলেন। ২০১৩ সালে হৃদ্‌রোগে মারা যান বাবা। তার পরেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। ওই বছরের ১৯ জুন তাঁকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তত দিনে প্রায় সব স্মৃতিই হারিয়ে ফেলেছেন ব্যতিকা।

বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসক রীতা সরকার, সুজাতা ভট্টাচার্য এবং মৌমিতা মণ্ডল তিন বছর ধরে ধারাবাহিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং করে সুস্থ করে তোলেন ব্যতিকাকে। ফিরে আসে স্মৃতিও। তার পরেই তাঁকে ঘরে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বছরখানেক আগে বিলকান্দার বাড়িতে যান বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘গিয়ে দেখি ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মা শেফালি মণ্ডল অসুস্থ। মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেন তিনি। সাঁতরাগাছিতে ব্যতিকার মামার বাড়িতেও গেলেও সাড়া মেলেনি।’’

সোমবার সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘সুস্থ হওয়ার পরে বাড়ি ফেরার জন্য প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন ব্যতিকা। কিন্তু ওই অবস্থায় জোর করে বাড়িতে দিয়ে এলে হিতে বিপরীত হতো।’’ এর পরে হাসপাতালেরই ক্যান্টিনে কাজ দেওয়া হয় ব্যতিকাকে। পড়াশোনা করতে চাওয়ায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় দূরশিক্ষা পাঠ্যক্রমে। তাঁর নামে খুলে দেওয়া হয় একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও।

মাসখানেক আগে সুপার ও হাসপাতালের কর্মীরা ফের যান ব্যাতিকার পাড়ায়। সেখানে বিলকান্দা ২ পঞ্চায়েতের প্রধান, গ্রাম সদস্য ও মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। সুস্থ ব্যাতিকার বাড়ি ফেরার আর্জি দেখে এলাকার মহিলারা ঠিক করেন, ‘‘ওকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেই হবে।’’

সোমবার তাঁকে ফিরিয়ে নিতে আসেন এলাকার বহু মানুষ। পঞ্চায়েত সদস্য পরেশচন্দ্র শীল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ওঁদের বাড়ি ঠিক করে দিয়েছে। ওঁকে সুস্থ করে ফিরিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব হাসপাতালের।’’

এ দিন ফেরার সময় কিছু বলতে পারেননি ব্যতিকা। সুপার থেকে চিকিৎসকদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার সময় নিঃশব্দে কেঁদেছেন।

এক বাড়ি ছেড়ে আর এক বাড়ি যেতে হবে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Return House Lady Mentally Disbalanced
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE