Advertisement
০৭ মে ২০২৪
হরিদেবপুর

কোমর বাঁধার নির্দেশ পেয়ে ধন্দ পুলিশেই

কবরডাঙার বন্দুকবাজি ঘিরে সামনে এসেছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ছবি। যা ঢাকতে এ বার ‘সক্রিয়’ হচ্ছে লালবাজার। পুলিশ-সূত্রের খবর: হরিদেবপুর-কবরডাঙা-ঠাকুরপুকুর এলাকার সব দাগি দুষ্কৃতীকে গারদে পুরতে অফিসারদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে।

হরিদেবপুরে এই সেই বার।—ফাইল চিত্র।

হরিদেবপুরে এই সেই বার।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

কবরডাঙার বন্দুকবাজি ঘিরে সামনে এসেছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ছবি। যা ঢাকতে এ বার ‘সক্রিয়’ হচ্ছে লালবাজার। পুলিশ-সূত্রের খবর: হরিদেবপুর-কবরডাঙা-ঠাকুরপুকুর এলাকার সব দাগি দুষ্কৃতীকে গারদে পুরতে অফিসারদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে। সেই মতো তল্লাশি-অভিযান শুরু হয়েছে। তবে বিজয় ভৌমিক ও গণেশ অধিকারী ছাড়া রবিবার রাত পর্যন্ত নতুন কাউকে জালে ফেলা যায়নি।

বুধবার রাতে হরিদেবপুরের কবরডাঙা মোড়ে একটি পানশালায় নাচা-গানা নিয়ে বচসার জেরে দুষ্কৃতীরা গুলিবৃষ্টি করে। তাতে প্রাণ যায় রাহুল মজুমদার ওরফে রাজা নামে এক যুবকের। পুলিশ-সূত্রের খবর: ওই রাতে নান্টি-বাপ্পা-ভোৎকার মতো সমাজবিরোধীদের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কালী-দুর্গা গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা। নান্টি-বাপ্পাদের পিছনে ডাবলু-ছোটকার মতো কিছু ‘মদতদাতা’র নামও উঠে এসেছে। জড়িত সবাইকে হাজতে পোরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, পানশালাটি পুলিশি অনুমতি ছাড়াই রমরমিয়ে চলছিল। যার প্রেক্ষাপটে বাইপাসের ধারে বেশ কয়েকটি পানশালায় গানের আসর বন্ধ করা হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, সেগুলোয় গানের অনুমতি (ক্রুনার লাইসেন্স) ছিল না।

একই সঙ্গে আইনরক্ষকদের নজর পড়েছে বেআইনি অস্ত্রসম্ভারের দিকে। পুলিশ জানতে পেরেছে, শহরের অপরাধীদের হাতে-হাতে এখন ঘুরছে ৭.২এমএম বা ৯এমএম পিস্তলের মতো মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র। সম্প্রতি লালবাজারের ক্রাইম কনফারেন্সে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ পুলিশ কমিশনার।

হরিদেবপুর-কাণ্ডের পরে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে নতুন করে কোমর বেঁধেছে। কিন্তু এ সব উদ্যোগ কতটা সফল হবে, পুলিশেরই একাংশ সে ব্যাপারে সন্দিহান। অনেক অফিসারের বক্তব্য, একটা ঘটনা ঘটলে কিছু দিন ধরপাক়়ড় চলে। তার পরে ফের যে-কে-সে-ই হয়ে যায়!

এবং এ প্রসঙ্গে গিরিশ পার্ক-কাণ্ডের দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন অনেকে। গত ১৮ এপ্রিল, অর্থাৎ কলকাতা পুরভোটের দিন বিকেলে গিরিশ পার্কের সিংহিবাগানে এক এসআই গুলিবিদ্ধ হওয়ায় মধ্য কলকাতায় কিছু দিন ব্যাপক ধরপাকড় চলেছিল। তার পরে?

লালবাজারের খবর: সম্প্রতি মেছুয়ায় এক দুষ্কৃতী ৯এমএম উঁচিয়ে তোলাবাজি করছে বলে খবর পেয়ে গুন্ডাদমনের অফিসারেরা রওনা দিয়েছিলেন। মাঝপথে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়। বলা হয়, লোকটি শাসকদলের এক কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ, তাই তাকে ধরা যাবে না!

বস্তুত কবরডাঙার ঘটনাতেও অভিযুক্তদের মাথায় শাসকদলের একাংশের ছত্রচ্ছায়া দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। উঠে আসছে জমি-ইমারতি সিন্ডিকেট কারবার ও তা ঘিরে রেষারেষির নানা কাহিনি।

আরও অভিযোগ: রাজনৈতিক প্রতিপত্তির সুবাদে কালী-দুর্গা পুলিশের নাকের ডগায় বেআইনি ভাবে পানশালা চালাচ্ছিল। যদিও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর রঘুনাথ পাত্র দাবি করেছেন, ‘‘ওরা পানশালা বা সিন্ডিকেট-ব্যবসায় যুক্ত নয়।’’ যা শুনে প্রশ্ন উঠেছে, শাসকদলের কাউন্সিলর এ ভাবে ‘পাশে দাঁড়ানোর’ পরে কালী-দুর্গার বিরুদ্ধে পুলিশ কি আদৌ কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে?

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য সংশয়কে আমল দিচ্ছেন না। বরং এ প্রসঙ্গে ওঁরা সেই গিরিশ পার্ক-কাণ্ডেরই উদাহরণ টানছেন। ওঁদের বক্তব্য, শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও গোপাল তিওয়ারির মতো প্রভাবশালী দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়েছে। কবরডাঙার দুষ্কৃতীরাও পার পাবে না।

কিন্তু পুলিশেরই তথ্য বলছে, ঘটনার পরে দু’দিন গোপাল কলকাতাতেই ছিল! অথচ তখন তাকে ধরা যায়নি। লালবাজারের অন্দরের খবর: এক নেতার বাড়িতে গোপাল আছে জেনে তাকে পাকড়াও করতে বাইরে ওত পেতে ছিলেন গোয়েন্দারা। উপরমহলের নির্দেশে তাঁদের হাল ছাড়তে হয়। শেষমেশ নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে সবুজ সঙ্কেত এলে গোপালকে জালে ফেলতে লালবাজার উঠে-পড়ে লাগে। কবরডাঙা-কাণ্ডেও নান্টি-বাপ্পাদের মতো মূল অভিযুক্তেরা পলাতক। পুলিশ-সূত্রের খবর: তাদের খোঁজে লালবাজারের একাধিক দল ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু কারও সন্ধান মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE