Advertisement
E-Paper

লিউকেমিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করেই মা হলেন তরুণী

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার তিন মাস পেরোনোর পরে রক্তের ক্যানসার অর্থাৎ, লিউকেমিয়া ধরা পড়েছিল ২৭ বছরের প্রিয়াঙ্কা সামন্তের। ভয় পেয়েছিলেন, জীবনটা বুঝি ওই জায়গাতেই থমকে গেল। যেখানে নিজেরই বাঁচার কোনও নিশ্চয়তা নেই, সেখানে সন্তানের প্রশ্ন তো উঠছে আরও পরে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫২
মেয়ে প্রত্যাশাকে কোলে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা সামন্ত। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

মেয়ে প্রত্যাশাকে কোলে নিয়ে প্রিয়াঙ্কা সামন্ত। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার তিন মাস পেরোনোর পরে রক্তের ক্যানসার অর্থাৎ, লিউকেমিয়া ধরা পড়েছিল ২৭ বছরের প্রিয়াঙ্কা সামন্তের। ভয় পেয়েছিলেন, জীবনটা বুঝি ওই জায়গাতেই থমকে গেল। যেখানে নিজেরই বাঁচার কোনও নিশ্চয়তা নেই, সেখানে সন্তানের প্রশ্ন তো উঠছে আরও পরে। অনেকেই গর্ভপাতের পরামর্শ দিয়েছিলেন। মানতে চাননি প্রিয়াঙ্কা। আপাতত সব ঝ়়ড়ঝাপটা কাটিয়ে কোলে সন্তান নিয়ে ফের স্বাভাবিক ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন এই তরুণী। কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা হাতে হাত মিলিয়ে তাঁর এই স্বপ্ন পূরণের পথ সুগম করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চলতি বছরের মার্চে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন চন্দননগর সাব ডিভিশিন হাসপাতালের নার্স প্রিয়াঙ্কা। আর লিউকেমিয়া ধরা পড়েছিল জুলাইয়ের গোড়ায়। এক মুহূর্তে গোটা পৃথিবীটা যেন ভেঙে পড়েছিল তাঁর সামনে। আত্মীয়-বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছিলেন গর্ভপাত করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করার। প্রিয়াঙ্কা চেয়েছিলেন, একই সঙ্গে দুটোই চলুক। পার্ক স্ট্রিটের একটি ক্যানসার হাসপাতালের চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায় এবং এসএসকেএমের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক চৈতালী দত্তরায় এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর পাশে। সরকারি-বেসরকারি মিলিত চেষ্টায় দিন কয়েক আগে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। আশিসবাবু জানাচ্ছেন, এত দিন সাবধানী হয়ে বেছে কেমোথেরাপি দিতে হয়েছিল। সম্প্রতি পূর্ণ মাত্রায় কেমো চালু হয়েছে। এত দিন মায়ের কোলে সুস্থ সন্তান তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। এ বার সুস্থ সন্তানের কাছে সুস্থ মা-কে ফিরিয়ে দেওয়াটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ।

এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আর একটি অংশ আবার বলছেন, অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দেওয়াটা যথেষ্ট ঝুঁকির। যেমন হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী মনে করেন, সম্ভব হলে গর্ভপাত, আর তা না হলে সন্তানের জন্মের পরে কেমোথেরাপি চালু করার পক্ষে তাঁরা। নয় তো শিশুর উপরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞেরা যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনে করেন গাছ আগে, তার পরে ফল। এ ক্ষেত্রে আমরাও সেটাই মনে করি। আগে মা সুস্থ হয়ে উঠুন, তার পরে সন্তান আসুক।’’

তা হলে এত বড় ঝুঁকিটা তাঁরা কেন নিলেন? আশিসবাবুর ব্যাখ্যা, গর্ভাবস্থার তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরে কিছু কিছু কেমোথেরাপি বা কড়া ওষুধ প্রয়োজনে মা-কে দিলে তা সন্তানের শরীরে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। বেছে বেছে সেই কেমো-ই দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘লিউকেমিয়া ধরা পড়ার পরে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু নজির রয়েছে বিদেশে। আমরা এখানে সেটাই করতে চেয়েছিলাম। ক্যানসার যে জীবনকে থামিয়ে দিতে পারে না, সেটা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

একই কথা বলেছেন এসএসকেএমের চৈতালী দত্তরায়ও। তাঁর বক্তব্য, মা কখন কেমোথেরাপি পাচ্ছেন, তার উপরে ক্ষতির বিষয়টা নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সব দিক বিবেচনা করেই ঠিক করেছিলেন, সন্তানকে রেখেই চিকিৎসা চালানো হবে। তিনি বলেন, ‘‘শিশুর বেশির ভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাধারণ ভাবে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। তার পরে সেগুলি আয়তনে বাড়ে। এ ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের পরেই মায়ের রোগটা ধরা পড়েছে। তার পরে কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে। তাই ক্ষতির ভয় তেমন নেই। তবে বৃদ্ধি কিছুটা কম হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তা-ও ঠিক হয়ে যায়।’’

এসএসকেএম থেকে প্রিয়াঙ্কা সোজা চলে এসেছেন পার্ক স্ট্রিটের ওই ক্যানসার হাসপাতালে। কেমো চলেছে বলে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি, সেই আক্ষেপটুকু রয়েছে। তবে এসএসকেএম হাসপাতালের মাতৃদুগ্ধ ব্যাঙ্ক থেকে অন্য মায়ের দুধের পুষ্টি পেয়েছে তাঁর সন্তান। এ দিন সকালে হাসপাতালে শুয়ে তিনি বললেন, ‘‘পিছনে ফিরে তাকাতে চাই না। মেয়ের নাম রেখেছি ‘প্রত্যাশা’। ও আমাদের জীবনে আসার পরে এ বার সব ঝড়ঝাপটা কেটে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।’’

Leukemia baby
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy