প্রায় দুই দশক পরে আলিপুরে পা রাখতে চলেছেন পশুরাজ। একা নয়, নিজামের শহর থেকে সঙ্গিনীকে নিয়ে উড়ে আসছেন তিনি। পার্ষদ হিসেবে থাকছে এক জাগুয়ার দম্পতি এবং ছয়টি মাউস ডিয়ার।
রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, আগামী শুক্রবার ২৭ অক্টোবর হায়দরাবাদ থেকে সিংহ, জাগুয়ার ও মাউস ডিয়ারগুলি কলকাতায় পৌঁছবে। প্রায় বিশ বছর পরে আলিপুরে নতুন সিংহ আসছে। আগের দিন অর্থাৎ কাল বৃহস্পতিবার সকালে থাকছে আরও এক চমক। জাপানের ইয়োকোহামা চিড়িয়াখানা থেকে কলকাতায় আসছে দুই জোড়া ক্যাঙারু। শীতের শহরে চিড়িয়াখানার দর্শকদের কাছে এ বার নতুন আকর্ষণ হাজির করছেন আলিপুরের কর্তারা।
বিনোদবাবু জানান, সিংহ ও জাগুয়ারের বদলে কলকাতা থেকে পাঠানো হচ্ছে একটি জিরাফ দম্পতি। রাজ্য বন দফতরের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, আলিপুরের মতো প্রজননে সক্ষম এবং উন্নত প্রজাতির জিরাফ গোটা বিশ্বে খুব কম রয়েছে। ফলে পশু লেনদেনে জিরাফই তুরুপের তাস।
বস্তুত, আলিপুরে নানা প্রজাতির পশুপাখি থাকলেও সিংহ (ভারতীয়), জাগুয়ার, ক্যাঙারুর ঘাটতি ছিল। বন দফতর সূত্রের খবর, আলিপুর চিড়িয়াখানায় আফ্রিকার কোনও সিংহ নেই। চারটি সিংহ-সিংহী রয়েছে। তার মধ্যে দুর্গা নামের একটি মাত্র সিংহীর শরীরেই খাঁটি ভারতীয় রক্ত রয়েছে। বাকি দু’টি সিংহী এবং একটি সিংহ— সব ক’টিই আফ্রিকান ও ভারতীয় সিংহের সংকর। ‘‘দুর্গার বয়স বেড়ে গিয়েছে। ফলে ও আর বংশবৃদ্ধিও করতে পারবে না,’’ বলছেন চিড়িয়াখানার এক কর্তা। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, দুর্গা ছাড়া বাকি সিংহীগুলিরও বয়স বেড়েছে। ফলে তাদের দিয়েও সিংহের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় খাঁটি ভারতীয় সিংহ দম্পতির খোঁজ শুরু করেছিলেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। দিদির রাজ্যে সিংহ আনতে প্রথমে মোদীর গুজরাতের জুনাগ়ড় চি়ড়িয়াখানার সঙ্গে কথা হয়। কাজকর্ম এগিয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ নিজামের রাজ্যকেই চূড়ান্ত করা হয়। এই বদল নিয়ে দফতরের অন্দরে জল্পনাও শুরু হয়। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই কি তবে বদলে দিল পশুরাজের বাসা?
রাজ্য জু অথরিটির কর্তারা অবশ্য রাজনীতির গোলমালে ঢুকছেন না। তাঁরা সাফ জানাচ্ছেন, হায়দরাবাদ থেকে এক জো়ড়া সিংহ-সিংহীর সঙ্গে এক জোড়া জাগুয়ারও মিলেছে। তাই হায়দরাবাদকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কালে জুনাগড়ের সিংহ দম্পতিকে আলিপুরে নিয়ে আসতে হলে নতুন করে অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। তাই জুনাগড় পুরোপুরি বাতিল করা হল এমনটা নয়। এই রক্ত কতটা খাঁটি তা নিয়ে জোর ঝাড়াইবাছাইও হয়েছে।
রাজ্য জু অথরিটির সদস্য-সচিব জানান, হায়দরাবাদের সিংহ-সিংহীর শরীরেও খাঁটি ভারতীয় রক্ত বইছে। সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি থেকে রক্ত পরীক্ষা করে শংসাপত্রও নেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর আগে জাগুয়ার মারা যাওয়ায় ওই খাঁচা খালিই পড়ে ছিল। জাগুয়ার আনার কথা শুরু হওয়ায় নতুন এনক্লোজারও তৈরি করা হয়েছে।
একই পরিস্থিতি ছিল ক্যাঙারু নিয়েও। ২০১১ সালে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে চারটি লাল ক্যাঙারু আনা হয়েছিল আনা হয়েছিল আলিপুরে। কিন্তু এক-এক করে সব কটিই মারা যায়। তার পর থেকে বিদেশি পশুর উপরে বিশেষ করে ক্যাঙারু আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানী হয়েছিলেন চিড়িয়াখানা কর্তারা। বিনোদকুমার যাদব জানান, এ বারে ছাই রঙা ক্যাঙারু আনা হচ্ছে।
নবাগত দম্পতিদের সংসারে এ বার কতটা শ্রীবৃদ্ধি হয় সেটাই দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy