Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘বিপজ্জনক’ স্কুলবাড়িতেই দক্ষিণ কলকাতার দুই বুথ

রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের ‘শিবরতন বিদ্যাভবন’ প্রাইমারি স্কুলের বাড়িটির দোতলার অংশটা প্রায় গোটাটাই ভাঙা।

শিবরতন বিদ্যাভবন স্কুলে চলছে ভোটগ্রহণ। রবিবার, দক্ষিণ কলকাতার চন্দ্র মণ্ডল লেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

শিবরতন বিদ্যাভবন স্কুলে চলছে ভোটগ্রহণ। রবিবার, দক্ষিণ কলকাতার চন্দ্র মণ্ডল লেনে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ০১:২৮
Share: Save:

বাইরে বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে পুরসভা। স্কুলবাড়িটি ‘বিপজ্জনক’। আর সেখানেই দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের ৭৮ এবং ৭৯ নম্বর বুথ!

রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের ‘শিবরতন বিদ্যাভবন’ প্রাইমারি স্কুলের বাড়িটির দোতলার অংশটা প্রায় গোটাটাই ভাঙা। রবিবার সেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, একতলার তিনটি ঘরের মধ্যে একটি একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য। ছাদ ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে গাছ। কার্নিস ভাঙা। চটা উঠে গিয়েছে ছাদ ও দেওয়াল থেকে।

বাকি দু’টির অবস্থাও প্রায় তেমনই। তবে তার মধ্যেই কোনওমতে ভোট হচ্ছে ওই দু’টি ঘরে। স্থানীয়েরা জানান, দক্ষিণ কলকাতার প্রতাপাদিত্য রোড সংলগ্ন চন্দ্র মণ্ডল লেনের এই স্কুলবাড়িটি প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। একতলায় এখনও স্কুল বসে সেখানে। দু’টি ঘর মিলিয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়, রোজ এক বেলা করে।

এ দিন সেখানে গিয়ে জানা গেল, ৭৮ নম্বর বুথে ভোটারের সংখ্যা ৪৫৩। ৭৯ নম্বরে ৭৪৯ জন ভোটার। এই স্কুলবাড়িতে ভোট দিতে এসে তাঁদের অনেকেই জানান, বছরের পর বছর এ ভাবেই ভোট দিতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ কোনও ব্যবস্থা নেন না। ফলে প্রাণ হাতে করেই আসতে হয় ভোট দিতে। স্থানীয় বাসিন্দা কমল দাস বলেন, ‘‘জীর্ণ এই বাড়িতে এ ভাবে রোজ স্কুলও চলে। সেটা আরও চিন্তার।’’

এমন একটি জায়গায় ভোট হচ্ছে কী করে?

দশ জন ভোটকর্মী এবং চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে কাজ করছেন। তাঁরা জানান, মারাত্মক সঙ্কটের মধ্যে শনিবার রাতটা কাটিয়েছেন সকলে। প্রিসাইডিং অফিসার সুজিতকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘এখানে এসে দেখলাম, চূড়ান্ত অব্যবস্থা। একে জল নেই, তার উপরে এত জনের জন্য মাত্র একটি শৌচালয়। এই গরমেও এখানে কেউ স্নান করতে পারেননি।’’ তাঁর অভিযোগ, এই স্কুলবাড়িতে খাওয়ার জলের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। শেষে সেক্টর অফিসারকে অনুরোধ করলে তিনি ২০০ টাকা বরাদ্দ করেন তাঁদের জন্য। তা দিয়ে কয়েকটি খাওয়ার জলের বোতল কেনা হয় বলে জানান প্রিসাইডিং অফিসার। মাথা পিছু এক লিটার করে জল বরাদ্দ হয় কোনওমতে।

বাড়িটির এক জন কেয়ারটেকার আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। তবে তাঁর দেখা পাননি কেউই। ভোটের জন্য তালা বন্ধ করে কোথাও চলে গিয়েছেন তিনি। বাম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের এজেন্ট প্রদীপ দে, তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের এজেন্ট সনৎ প্রামাণিকেরা জানান, এই ভাঙা বাড়িতে কোনও মতে গাদাগাদি করে একটি ঘরে সকলে বসেছিলেন সারা রাত। কেউ ঘুমোতে পারেননি। সেকেন্ড অফিসার সুমিতকুমার মজুমদার বলেন, ‘‘গরম আর মশায় ওই ঘরে বসেই থাকা যাচ্ছিল না। গোটা রাত রাস্তায় বসে কাটিয়েছি।’’

আর এক তৃণমূল এজেন্ট অলক বসু জানান, আগে বাঁদিকের ঘর আর মাঝের ঘর ব্যবহার হত ভোটের জন্য। এখন বাঁ দিকের ঘরটা আর ব্যবহার করা যায় না। এই বাড়িতে কেন যে বুথ তৈরি হল, তা বুঝতে পারছেন না তাঁরাও। দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের নিজের ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই স্কুলবাড়ি। এই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে এসে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি। মালিকেরা খোঁজখবর নেন না বিশেষ। নির্বাচন কমিশন কোনও খোঁজ না নিয়েই বুথ ফেলেছে।’’

ভোটকর্মীদের অভিযোগ জানার পরেও কি কোনও ব্যবস্থা নিতে পারত না কমিশন? প্রিসাইডিং অফিসার জানান, সব শোনার পরে সেক্টর অফিসার বলেছেন, এখন আর কিছু করার নেই। বুথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE