রবি-প্রচার: শিখদের এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। ময়দানের একটি লঙ্গরখানায়। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কেউ তাঁদের নিজের ভোটার। কেউ আবার বিরোধী ঘেঁষা। কিন্তু চৈত্রের শেষ দিনের প্রচারে সকলকে আপন করতেই মরিয়া চেষ্টা চালালেন সব দলের প্রার্থীরা।
ভোট-প্রার্থীদের এ হেন কাজের সঙ্গে অবশ্য এ দিনটার পরোক্ষ ভাবে একটা মিল রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ রবিবার দিনটা ছিল চৈত্র সংক্রান্তির। ভোটপ্রার্থীদের মতে, এ দিনে সমস্ত রকম আনাজ, ডাল দিয়ে পাচন তৈরি করে খাওয়ার রীতি পালন করেন অনেকে। সংক্রান্তির দিনে দুঃখ-দুর্দশাকে ভুলে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি তেতো-টক-মিষ্টি-ঝাল সব রকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে আগামী দিনের চলার পথ তৈরি করতেই না কি এমন খাবার খাওয়ার রীতি।
যদিও চৈত্রের শেষ দিনটাতে ভোট-প্রার্থী থেকে রাজনৈতিক নেতারা সকলে যে এমন খাবার খেয়েছেন তেমনটা নয়। তবে তেতো-টক-মিষ্টি-ঝাল সব সম্পর্ক মেনে নিয়ে ‘ভোট-পাচন’-এ অংশ নিয়েছেন সকলেই। বলছেন, ‘‘ভোট চাওয়ার সময় পুরনো কথা মনে রাখতে নেই।’’ তবে এ দিন সকালে ‘ডান-বাম’ প্রচারের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল ‘রাম’ও। অনেক জায়গাতেই বের হয়েছিল রামনবমীর মিছিল। কোথাও তাতে পা মিলিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রার্থীরা।
এ দিন উত্তর কলকাতায় চরকি পাক খাওয়ার মাঝেই কয়েকটা রাম নবমীর মিছিলে পৌঁছে ছিলেন কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ স্ট্র্যান্ড রোডে আর্মেনিয়ান ঘাটের কাছে রামনবমীর মিছিলে কয়েক পা হাঁটতে দেখা গেল তাঁকে। শোভাযাত্রা থেকে ভেসে আসা স্লোগানের তালেই লম্ফঝম্প করতে দেখা গেল মুখোশ পরা হনুমানকেও। তবে এই মিছিলকে রাজনীতিতে মেলাতে নারাজ রাহুল। বললেন, ‘‘এটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আর রাম হলেন সত্যের প্রতীক। তাই রামনবমী পালন না করলে রাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে কী করে।’’
স্ট্র্যান্ড রোডে রামনবমীর মিছিলে উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ।
সোনালি পাড়ের লাল শাড়ি, কপালে লাল বড় টিপ, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা পরে সকাল থেকে শহরের উত্তরে প্রচার সারলেন সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। মাঝেমধ্যে অবশ্য বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে পালন করলেন বাবাসাহেব অম্বেদকরের জন্মদিন। ‘‘ভারতের ইতিহাসে অম্বেদকরের অবদানও তো ভোলার নয়’’ বললেন কনীনিকা। রানি রাসমণি বাজার সংলগ্ন কলোনিতে তখন চৈত্রের কাঠফাটা রোদ। তা উপেক্ষা করেই কলোনির ছোট ঘরের দরজায় দাঁড়ানো বয়স্ক মানুষদের হাত ধরে চাইলেন ভোট। আর কলোনির তস্য গলি থেকে বেরনোর সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য বল নিয়ে খেলায় মগ্ন শিশুদের সঙ্গীও হলেন তিনি।
৩৬৫ দিন খাবার পাতে যে কোনও রকমের তেতো খেতে অভ্যস্ত তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় অবশ্য এ দিন রামনবমীর কোনও মিছিলে যাননি। তবে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের শিবমন্দির, মুদিয়ালি, আদি লেক পল্লি এলাকা ঘুরে দুপুরে তিনি হাজির হলেন শহিদ মিনার চত্বরে। সেখানে দক্ষিণ কলকাতার শ্রী গুরু সিংহ সভার তিন দিন ধরে চলা অনুষ্ঠানের লঙ্গর খানায় গিয়ে বেলুন চাকিতে রুটি বেললেন। আটা মাখা হাত ধুতে ধুতে বললেন ‘‘বাড়িতে তো রুটি করি। এখানে এক সঙ্গে কত মহিলা রুটি বানাচ্ছেন, তাই ওঁদের সঙ্গে আমিও হাত লাগালাম।’’ অনুষ্ঠানের ক্যাম্পে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময় উদ্যোক্তাদের অনুরোধে একদিন শিখ সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসারও পরিকল্পনা করে নিলেন।
দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য সারা সকালটা এলাকার বিভিন্ন স্তরের খ্যাতনামা প্রবীণ মানুষের সঙ্গে দেখা করে নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা বিনিময় করেই কাটালেন। তবে এ দিন রামনবমীর কোনও মিছিলে যাননি বলেও জানান শমীক।
যদিও ‘রাম কারও একার সম্পত্তি নয়’ বলে দাবি করে সকাল থেকে লিলুয়ার ৬২ নম্বর ওয়ার্ড আয়োজিত রামনবমীর মিছিলে হাঁটলেন হাওড়ার তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী অরূপ রায়। বললেন, ‘‘সবাই রামনবমী পালন করতে পারেন। তবে বিজেপি এখন রামকে নিয়েও রাজনীতি করছে।’’ মিছিলে জয় শ্রীরাম ধ্বজার মতোই পাল্লা দিয়ে ছিল জোড়া ফুল পতাকাও। অরূপবাবু ছাড়াও শ্যামল মিত্র, সৃষ্টিধর ঘোষের মত আরও অনেক তৃণমূল নেতাও মিছিলে পা মিলিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ১৪২৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র সেলের শেষ দিনের মতোই হুড়োহুড়ি করে ভোট প্রচারের দিন কাটালেন প্রার্থী থেকে নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy