—ফাইল চিত্র।
বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে তোলপাড় চলছে দেশ জুড়ে। ঘটনার দিনই মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যাসাগর কলেজে গিয়ে জানিয়েছিলেন, নতুন মূর্তি বানিয়ে দেবে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁরা মূর্তি গড়িয়ে দিতে চান। কেউ বলেছেন, পঞ্চধাতুর মূর্তি বসাবেন, তো কারও আশ্বাস মূর্তি হবে ব্রোঞ্জের। যা শুনে ফাঁপরে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এত মূর্তি এলে কোন মূর্তি কোথায় বসবে, তা ভেবেই এখন জেরবার তাঁরা।
গত মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো থেকে বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হামলাকারীরাই কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে ৫০ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের সঙ্গে বিজেপি-র যোগ রয়েছে বলে পুলিশের দাবি। ওই ঘটনার পরেই রাজনৈতিক তরজা চরমে উঠেছে। বিজেপি-র দাবি, চক্রান্ত করে তৃণমূলই বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে তাদের উপরে দোষ চাপাচ্ছে। তৃণমূলের দাবি, গেরুয়া পোশাক পরা হামলাকারীদেরই মূর্তি ভাঙতে দেখা গিয়েছে। এই আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপ্রদেশের এক সভা থেকে এ দিন বলেন, বিদ্যাসাগর কলেজে পঞ্চধাতুর মূর্তি বসিয়ে দেবেন তিনি। তা বসানো হবে ভাঙা মূর্তিটির জায়গাতেই। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি মোদীর দেওয়া মূর্তি নেবেন না।
বিদ্যাসাগর কলেজ সূত্রের খবর, সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ চিঠি দিয়ে অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ পূর্তির আগেই তাঁরা ক্যাম্পাসে নতুন মূর্তি বসাতে চান নিজেদের খরচে। এ দিকে, সে দিনের ভাঙচুরের ঘটনায় কী কী ক্ষতি হয়েছে, কলেজের কাছে তার তালিকা চেয়েছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে প্রশাসন জানিয়েছে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি তাদের তরফেই গড়ে দেওয়া হবে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মূর্তি গড়ার দাবি ও পাল্টা দাবির পরিবেশ আরও ঘোরালো করে ওই কলেজের প্রাক্তনীরা জানিয়েছেন, মূর্তি গড়তে তাঁদের কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই। নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া মূর্তি কোনও ভাবেই তাঁরা নিতে চান না। বিদ্যাসাগর কলেজের এক প্রাক্তনী শৌভিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কারও সাহায্যের দরকার নেই। যাঁরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁরাই এখন মূর্তি গড়ে দেওয়ার কথা বলছেন! কলেজ আমাদের কাছে মন্দির। সেখানকার দেবতা বিদ্যাসাগরের মূর্তি আমরা নিজেরাই গড়ে নিতে পারি।’’ আর এক প্রাক্তনী সোমা কুন্ডু বছর দশেক আগে কলেজ ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি কলেজের ডাকা মিছিলে গিয়েছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘যা রোজগার করি, তা থেকে আমরা সকলেই একটা মূর্তি গড়িয়ে দিতে পারি। কোনও হামলাকারীর টাকা চাই না। আর যারা হামলার আগে কলেজকে রক্ষা করতে পারেনি, সেই সরকারের দেওয়া মূর্তিও চাই না।’’
নানা পক্ষের মূর্তি গড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাবে অস্বস্তি বেড়েছে বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডুর। ফোনে বললেন, ‘‘মোদীজি আমাকে তো এখনও কিছু বলেননি। সরকারকে আমরা চিঠি দিয়েছি। প্রাক্তনীরাও বলছেন, মূর্তি গড়ে দেবেন। দেখা যাক, কী করা যায়। তবে যাঁর সাহায্যেই বসুক, আগামী সেপ্টেম্বরে বিদ্যাসাগরের জন্ম দ্বিশতবার্ষিকীর আগে ক্যাম্পাসে নতুন মূর্তি বসবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy