Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Kolkata Police

কোয়রান্টিনে বহু পুলিশ, লড়াই এ বার ঝড়ের সঙ্গেও

লালবাজারের দাবি, এত দিনে ৩৫ জন পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫ জন সুস্থ হয়েছেন।

এ ভাবেই মানুষকে সতর্ক করে অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার, মানিকতলা থানায়। ছবি: সুমন বল্লভ

এ ভাবেই মানুষকে সতর্ক করে অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার, মানিকতলা থানায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৪:৫৩
Share: Save:

পুলিশকর্মীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে প্রায়ই শোরগোল পড়ছে থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নিয়ে তৈরি লালবাজারের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। মঙ্গলবারই যেমন পড়েছে রিজেন্ট পার্ক থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ও আনন্দপুর থানার পুলিশকর্মীর করোনা সংক্রমণের ঘটনায়। নিয়ম মেনে আক্রান্তদের সঙ্গে গোটা থানাকেই কোয়রান্টিনে চলে যেতে হলে চলবে কী করে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমপানের কলকাতায় আছড়ে পড়ার ভয়!

এ দিনই থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিকদের সঙ্গে একটি ভিডিয়ো বৈঠকে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বলেন, “যে কোনও মূল্যে আমপান সামলাতে প্রস্তুত থাকতে হবে। যা করার করতে হবে করোনা-নিরাপত্তা মেনেই!” দক্ষিণ কলকাতার এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তা অবশ্য বললেন, “চেষ্টা তো করা হবেই। কিন্তু জ্বরের রোগীকে হাসপাতালে পাঠানো থেকে করোনা-আক্রান্তের বাড়ির বাজার করে দেওয়া— সবই তো করতে হচ্ছে পুলিশকে। এর মধ্যেই পুলিশের কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে থানা বা ট্র্যাফিক গার্ডের অর্ধেকেরও বেশি জনকে কোয়রান্টিনে চলে যেতে হচ্ছে। তা হলে কে-ই বা ভেঙে পড়া গাছ সরাবেন, কে-ই বা বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দাদের সতর্ক করবেন?”

গত কয়েক সপ্তাহে এমনই পরিস্থিতি হয়েছিল মানিকতলা থানায়। এক মহিলা এএসআই এবং থানার এক গাড়িচালক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বেশির ভাগ পুলিশকর্মীকেই কোয়রান্টিনে যেতে হয়। মাত্র কয়েক জনকে নিয়ে কাজ সামলেছেন ওসি। সেই সুযোগে একাধিক জায়গায় কন্টেনমেন্ট জ়োনের বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। পুলিশকে বলতে শোনা যায়, “ব্যবস্থা যে নেব, লোক কোথায়?” একই অবস্থা বড়তলা, জোড়াবাগান, বৌবাজার, প্রগতি ময়দান থানায়। অনেককেই ব্যারাকে কোয়রান্টিনে থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ২৪ দিনের যুদ্ধ শেষে করোনাজয়ী একাত্তরের বৃদ্ধ

লালবাজারের দাবি, এত দিনে ৩৫ জন পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫ জন সুস্থ হয়েছেন। তবে আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায় কত জন পুলিশকর্মীকে কোয়রান্টিনে থাকতে হয়েছে বা এই মুহূর্তে কত জন ওই অবস্থায় রয়েছেন, তা প্রকাশ করেনি লালবাজার। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বললেন, “ওসি বা অতিরিক্ত ওসি-রা পালা করে থানায় থাকছেন। সব ধরনের নিরাপত্তাও নিতে বলা হয়েছে।”

এ দিন মানিকতলা থানায় গিয়ে দেখা গেল, মূল গেটের সামনেই কাঠের টেবিল পেতে চলছে কাজ। বাইরের কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। মূল কোল্যাপসিবল গেট অর্ধেক বন্ধ। অভিযোগ জানাতে দাঁড়াতে হচ্ছে ওই গেটের বাইরে। দূরত্ব-বিধি রাখতে সেখানেও গার্ডরেল। কাগজে সই করাতে হলে বাইরের লোকেদের সামনের বেসিনে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হচ্ছে। থানায় মাত্র দু’জন। বাকিরা? এক পুলিশকর্মীর দাবি, “অনেকে ব্যারাকে আছেন। পরিবারের কথা ভেবে বাড়ি ফিরছেন না অনেকেই।”

আরও পড়ুন: মেডিক্যালে একসঙ্গে করোনামুক্তি ৩৯ জনের

শ্যামপুকুর থানায় আবার মূল প্রবেশপথ দিয়ে ঢোকা বারণ। অভিযোগ জানাতে এলে ছোট গেট দিয়ে ঢুকে সামনের চাতালে লোহার জানলার সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। জানলার ও-পারে এক জন মাস্ক-গ্লাভস পরা পুলিশকর্মী থাকছেন।

প্রবেশ নিষিদ্ধ ভবানীপুর, বড়তলা, বেলেঘাটা, ফুলবাগান থানাতেও। বেলতলা মোটর ভেহিক্‌লস অফিসের ফাঁকা চাতালে আবার টেবিল পেতে কাজ সারছেন বালিগঞ্জ থানার আধিকারিকেরা। রবীন্দ্র সরোবর থানায় ঢোকার গলিপথ পেরিয়েই ফাঁকা অংশে পাতা টেবিল। কয়েকটি থানায় আবার বাইরের কাগজ আর থানায় রাখতে হবে, এমন কাগজের জন্য দু’টি আলাদা ‘রিসিভ’ স্ট্যাম্প থাকছে।

যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বললেন, “পর্যাপ্ত বাহিনী তো আছেই, নিরাপত্তার সব বন্দোবস্ত নিয়ে করোনা থেকে ঝড়— সব কিছুর জন্যই আমরা প্রস্তুত।” পূর্ব ডিভিশনের একটি থানার আধিকারিক যদিও বলেন, “থানায় এখন না ঢোকাই

ভাল। বাইরের ডিউটি করে অনেকেই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এত কিছু করেও কী হবে, জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE