Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Group D Rally

নির্বিঘ্নে অভিষেকের অফিস এলাকা পেরোল শুভেন্দুদের মিছিল, জমায়েতে ‘ইন্ডিয়া’র পোস্টার, রইল না বাম

শেক্সপিয়র সরণি এবং ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে বুধবার দুপুরে মিছিল শুরু হয়। তার আগেই শুরু হয়েছিল জমায়েত। মিছিলের সামনে হাঁটেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেসের কৌস্তভ বাগচী।

March of Group D job seekers went smoothly through Camac Street and in front of the office of Abhishek Banerjee

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২৮
Share: Save:

ক্যামাক স্ট্রিট ধরে গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল হল নির্বিঘ্নেই। আদালত অনুমতি দিয়েছিল মিছিল করার। সেই মিছিল যখন বুধবার দুপুরে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস এলাকা পেরোল, তখন স্লোগানের স্বর চড়া থাকলেও তার বেশি কিছু হয়নি। ঘটনাচক্রে, মিছিলের একেবারে সামনে পাশাপাশি হাঁটলেন দুই মেরুর দুই রাজনীতিক— বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী ও কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচী। তবে কৌস্তভ ইদানীং কংগ্রেসের অন্দরে কোণঠাসা। শোনা যাচ্ছে, তিনি বিজেপিতে যোগ দিলেও দিতে পারেন। প্রসঙ্গত, আদালতে আইনি লড়াইয়ে গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করেছিলেন কৌস্তভ। সেই সূত্রেই তাঁর এই মিছিলে যোগদান।

‘অরাজনৈতিক’ এবং রাজনৈতিক দলের ঝান্ডাবিহীন মিছিল হলেও শুভেন্দু-কৌস্তভের পাশাপাশি হাঁটা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন ফ্রেম তৈরি করল। চাকরির দাবিকে সমর্থন জানিয়ে পাশাপাশি হাঁটলেন এনডিএ (বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট) ও ‘ইন্ডিয়া’ (বিজেপি বিরোধী জোট)-র দুই নেতা। চাকরিপ্রার্থীদের গায়ে স্লোগান লেখা অ্যাপ্রনেও হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়া’ লেখা দেখা গিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’র কানেও তাঁদের যন্ত্রণার কথা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক তৃণমূল। তার সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য বাংলার শাসকদলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

March of Group D job seekers went smoothly through Camac Street and in front of the office of Abhishek Banerjee

ক্যামাক স্ট্রিটে গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।

তবে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে বুধবারের মিছিল এড়িয়ে গিয়েছেন বামনেতৃত্ব। বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সিপিএমের তরফে সমন্বয় রাখেন ইন্দ্রজিৎ ঘোষ। মূলত সেই কারণেই ‘পুরস্কার’ হিসাবে তাঁকে কয়েক মাস আগে রাজ্য কমিটিতেও জায়গা দিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বুধবার তাঁকেও মিছিলে দেখা যায়নি। প্রশ্ন করায় আনন্দবাজার অনলাইনকে ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কাজের কারণে যেতে পারিনি।’’ বিজেপির শুভেন্দুর পাশে হাঁটবেন না বলেই কি যাননি? এই প্রশ্নে খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করেই তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু গিয়েছেন নাকি? জানি না তো!’’ শুভেন্দু অবশ্য মঙ্গলবারই প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ‘‘কাল (বুধবার) ক্যামাক স্ট্রিটে দেখা হবে।’’ সে কথা গোটা রাজ্যই জানত।

March of Group D job seekers went smoothly through Camac Street and in front of the office of Abhishek Banerjee

গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলে কৌস্তভ বাগচী ও শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

শেক্সপিয়র সরণি এবং ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থল থেকে বুধবার দুপুর সওয়া ২টো নাগাদ মিছিল শুরু হয়। তার অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল জমায়েত। মিছিলের সামনে হাঁটেন শুভেন্দু এবং কৌস্তভ। ক্যামাক স্ট্রিট এলাকা পেরিয়ে নিজাম প্যালেস পর্যন্ত মিছিলে ছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে সাংবাদিকদের অভিষেক সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, ‘‘আমি ওই দিকে (অভিষেকের অফিসের দিকে) তাকাইনি। কেন তাকাতে যাব? ও কে হরিদাস পাল?’’ সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্যামাক স্ট্রিট ভারতের রাস্তা। কারও বাপের সম্পত্তি নয়। আমি আন্দোলনকারীদের সেলাম জানাই।’’ দলমত নির্বিশেষে এক লক্ষ মানুষ নিয়ে নবান্ন অভিযানেরও ডাক দেওয়ার কথা বলেছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আমি আন্দোলনকারীদের ১০টি সংগঠনকে বলব, আপনারা নবান্ন যাওয়ার ডাক দিন। সবাইকে ডাকুন। আমি আপনাদের পাশে রাস্তায় থাকব।’’ যার পাল্টা তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘শহিদ মিনার, ধর্মতলা— অনেক জায়গা আছে তো মিছিল করার! ক্যামাক স্ট্রিট কেন? আসলে সেই ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেওয়া। তাঁর পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।’’

March of Group D job seekers went smoothly through Camac Street and in front of the office of Abhishek Banerjee

গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের গায়ে জড়ানো ফ্লেক্সে ‘ইন্ডিয়া’র উল্লেখ। —নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র উদ্দেশে চাকরিপ্রার্থীদের বার্তা নিয়ে শুভেন্দু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করব না।’’ হতে পারে কংগ্রেসের কৌস্তভকে ‘অস্বস্তি’তে ফেলতে চাননি বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু এবং কৌস্তভের হাতে ছিল একই প্ল্যাকার্ড। যার এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসিমুখের ছবি। তার পাশে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের গ্রেফতার হওয়া মুখ। মমতার ছবির উপর লেখা ‘আই লাফ’ (আমি হাসছি)। ডান দিকে চাকরিপ্রার্থীর মুখের পাশে লেখা, ‘ইউ ডাই’ (তুমি মরো)।

ক্যামাক স্ট্রিটে মিছিল করার অনুমতি আদালত থেকে আদায় করেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু তা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আদালতে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার আদালত সরকার পক্ষকে বলে, ‘‘ক্যামাক স্ট্রিটে মিছিল হলে অসুবিধা কোথায়? আপনাদের আবেদনমতো কালীঘাট এলাকায় মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার পরে নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে না আদালত।’’ তবে শান্তিপূর্ণ মিছিল করার নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। মিছিলে শান্তি বজায় থেকেছে। মিছিলের জন্য গার্ড রেল দিয়ে রাস্তার একটি পাশ ঘিরে চিহ্নিত করে দিয়েছিল পুলিশ। মিছিল সেই পথেই গিয়েছে। ব্যারিকেড ভাঙার কোনও চেষ্টা হয়নি। বুধবারের মিছিলে চাকরিপ্রার্থীদের অনেক অভিভাবকও হাজির ছিলেন। প্রতিবাদীদের কেউ হাঁটেন ‌খালি গায়ে স্লোগান লিখে, আবার কারও হাতে ছিল মশাল। তবে স্লোগানে সুর চড়লেও মিছিল হয়েছে একেবারে নির্বিঘ্নেই। আদালতের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE