Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গর্ভভাড়া বিলে বঞ্চনা বাড়তে পারে মা-বাবার

আট বছরে বারবার সন্তানের জন্য চেষ্টা করেছেন, অথচ গর্ভপাত আটকাতে পারেননি। আইভিএফ-এর একাধিক চেষ্টাও বিফল হয়েছে। সন্তানের মুখ দেখতে মুম্বইয়ের এই দম্পতির ভরসা সেই গর্ভভাড়া।

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

আট বছরে বারবার সন্তানের জন্য চেষ্টা করেছেন, অথচ গর্ভপাত আটকাতে পারেননি। আইভিএফ-এর একাধিক চেষ্টাও বিফল হয়েছে। সন্তানের মুখ দেখতে মুম্বইয়ের এই দম্পতির ভরসা সেই গর্ভভাড়া। তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘আইনপ্রণেতারা তো সন্তানহীন নন, তাঁরা আমাদের কষ্ট বুঝবেন কী ভাবে?’’ গর্ভভাড়া করতে চেয়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছনো দিল্লির আর এক দম্পতির প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুস্থ হতে অন্যের কিডনি নিতে পারেন, আর আমরা সন্তানের জন্য অন্যের সাহায্য নিলে দোষ?’’ উল্টো দিকে গর্ভভাড়া পদ্ধতিতে একাধিক শিশুর জন্ম দেওয়া স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, ব্যবসা বন্ধে এই বিলের খুবই প্রয়োজন ছিল।

বাণিজ্যিক ভাবে গর্ভভাড়া বন্ধে সম্প্রতি পাশ হওয়া এই বিলে বলা হয়েছে, কোনও দম্পতি (লিভ-ইন যুগল, সমকামী দম্পতি বা একক অভিভাবক বাদে) পাঁচ বছর পরেও সন্তান লাভে অক্ষম হলে গর্ভদাত্রী মায়ের সাহায্য নিতে পারবেন। গর্ভদাত্রী হতে হবে ৩৫ বছরের নীচে কোনও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে। অনেকেরই আশঙ্কা, নিয়মের বেড়াজালে আদতে বাবা-মা হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন অনেক দম্পতি। সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘আইন করে গর্ভভাড়া বন্ধের চেষ্টা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গোটা প্রক্রিয়াটাই হয়তো লুকিয়ে শুরু হবে।’’

একই আশঙ্কা করছেন গুজরাতের আইভিএফ ও সারোগেসি চিকিৎসক নয়না পটেল। দেশে প্রথম সারোগেসি ক্লিনিক তৈরি করা এই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নিঃসন্তান দম্পতিদের মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর পরে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম মহিলাদের উপরে নিগ্রহ বাড়বে। পরিবারের কোনও কমবয়সি মহিলাকে গর্ভদাত্রী হতে চাপও দেওয়া হতে পারে।’’ তবে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর বলছেন, ‘‘পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে সাত শতাংশ দম্পতি সন্তানধারণে অক্ষম। তাঁদের মধ্যে আবার মাত্র এক শতাংশের গর্ভভাড়া পদ্ধতির প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশে অনেককেই অযথা গর্ভভাড়া নিতে বলা হয়। এই বাণিজ্যিকীকরণ আটকানো দরকার। তবে বিলের কিছু সংশোধনেরও প্রয়োজন।’’

গর্ভভাড়া বিলের কারণে দেশে দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বাড়বে বলে আশা সমাজতত্ত্ববিদদের একাংশের। কিন্তু সেখানেও চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য না থাকায় সমস্যায় পড়তে হবে আগ্রহীদের। আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানাচ্ছেন, ‘হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেন্টেন্যান্স অ্যাক্ট’ (১৯৫৩), ‘গার্ডিয়ানশিপ অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট’ (১৮৯০) ও ‘জুভেনাইল জাস্টিস কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ (২০০০)-এর অধীনে দত্তক নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দত্তক সন্তানের সঙ্গে বয়সের ফারাক হতে হবে ২১ বছর। এ ছাড়াও একাধিক নিয়ম রয়েছে, যা দেখার জন্য রয়েছে বেশ কিছু সংস্থা। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’ (কারা) ওই সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ‘কারা’-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-’১৮ সালে ২০ হাজার দম্পতির দত্তক নেওয়ার জন্য ছিল মাত্র ১,৯৯১টি শিশু! ফলে চাহিদা আরও বাড়লে ০-২ বছরের শিশু দত্তক নিতে আরও অনেক বেশি অপেক্ষা করতে হতে পারে।

‘কারা’-র সচিব দীপক কুমারের অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের অধীনে ছাড়াও ‘হিন্দু অ্যাডপশন অ্যান্ড মেন্টেন্যান্স অ্যাক্ট’ (১৯৫৩) অনুযায়ী অনেকে দত্তক নিচ্ছেন। সেই সংখ্যাটা কিছু কম নয়। তবে দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বাড়লেও অপেক্ষার সময় খুব বেশি বাড়বে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surrogacy Surrogacy Bill IVF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE