Advertisement
E-Paper

অনিয়মের আউটডোর বহাল তবিয়তেই, উদাসীন হাসপাতাল

গত সপ্তাহের কথা। আট মাসের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে রানাঘাট থেকে সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে বেলেঘাটা বি সি রায় শিশু হাসপাতালের আউটডোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন অসীম বাগ। ধুম জ্বর শিশুর। সঙ্গে বমি। আউটডোর খোলা থাকলেও সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০২:১০

গত সপ্তাহের কথা। আট মাসের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে রানাঘাট থেকে সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে বেলেঘাটা বি সি রায় শিশু হাসপাতালের আউটডোরে পৌঁছে গিয়েছিলেন অসীম বাগ। ধুম জ্বর শিশুর। সঙ্গে বমি। আউটডোর খোলা থাকলেও সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

আবার দিন পনেরো আগে পিজি-র কার্ডিওলজি আউটডোরে বৃদ্ধ, অসুস্থ বাবাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন রত্নাবলী পাণ্ডে। দুপুর পৌনে একটাতেও আউটডোরের দরজা না খোলায় বাধ্য হয়ে তাঁদের ফিরে আসতে হয়েছিল।

এগুলি এক-দু’দিনের কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারি রিপোর্টই বলছে, শহরের সরকারি হাসপাতালগুলিতে বহু আউটডোর সময়ে না খোলায় এবং চিকিৎসকেরা আউটডোরে হাজির হতে দেরি করায় রোগীদের হামেশাই দুর্ভোগ হচ্ছে।

আউটডোরে কাজে ‘ফাঁকিবাজি’ আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনামতো ‘হাসপাতাল ওপিডি ট্র্যাকিং সিস্টেম’ কার্যত পর্বতের মূষিক প্রসব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বছর পয়লা মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত দু’মাসের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে, কলকাতার সব সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ৯৮৩৩টি আউটডোর হওয়ার কথা ছিল। তার মধ্যে ৩৫৪৮টি আউটডোরই ঠিক সময়ে খোলেনি। দেরিতে আউটডোরে বসেছেন ৯৬২ জন চিকিৎসক। দেরিতে আউটডোর খোলায় শীর্ষে এসএসকেএম ও আরজিকর। আর সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় চিকিৎসক দেরিতে এসেছেন বি সি রায় শিশু হাসপাতাল ও এনআরএসে।

সরকারি হাসপাতালে আউটডোর ঠিক সময়ে চালু হয় না, দূর-দূরান্ত থেকে অসুস্থ রোগীরা এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন, অনেকেরই শেষ পর্যন্ত দেখানো হয় না— এই রকম অভিযোগ বাড়ছিল। সেটা আটকাতে ‘ওপিডি ট্র্যাকিং’ চালু করার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঠিক হয়েছিল, কোন বিভাগে আউটডোর খুলতে দেরি হয়েছে, কোন আউটডোরে চিকিত্‌সক আসেননি বা দেরি করে এসেছেন, সব তথ্যই প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালের সুপারেরা প্রতিদিন সকালে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানাবেন। দোষী চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। বাস্তবে কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটেনি।

স্বাস্থ্যকর্তাদেরই একাংশের বক্তব্য, একেই চিকিত্‌সক কম, তার উপরে আউটডোরে দেরির জন্য শাস্তি হলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হবে। যে রাজ্যে এমনিই ডাক্তার এত কম, সেখানে অত শাস্তি দেওয়া মানায় না। ফলে ‘ফাঁকি’তে নজর না দেওয়াই উচিত। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কথায়-কথায় শাস্তি দিতে হলে তো আউটডোরে বসার ডাক্তারই মিলবে না। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। একটু-আধটু দেরি হতে পারে, তাতে এমন কিছু নিয়ম ভাঙা হয় না।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী আবার বলেন, ‘‘ভাল তো, লিখুন না এটা নিয়ে। তাতে যদি কাজ হয়।’’

স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত দু’মাসে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ২৮১২টি আউটডোরের মধ্যে ১৮৪৯টি ঠিক সময়ে খোলেনি। আরজিকরে ২৫৩৭টি আউটডোরের মধ্যে দেরিতে খুলেছে ১৬৫৭টি। এসএসকেএমের সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, তিনি এই রিপোর্টের ব্যাপারে কিছু জানেন না। আরজিকরের সুপার প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের আবার দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট ভুল।

আউটডোরে ডাক্তারদের দেরির তালিকায় শহরের যে দুই হাসপাতাল শীর্ষে, তার মধ্যে নীলরতনে গত দু’মাসে দেরি করেছেন ৩৬৮ জন। সুপার শেখ আলি আমামের বক্তব্য, ‘‘যা চলছে ঠিকই চলছে।’’ অন্য হাসপাতাল বি সি রায়ের আউটডোরে দেরি করে এসেছেন ৬৫ জন। সেখানকার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের ডাক্তারের অভাব দু’বছর ধরে। ইমার্জেন্সি সামলানোর আলাদা চিকিৎসক নেই বলে প্রায়ই আউটডোরে না বসে চিকিৎসকদের ইমার্জেন্সি সামলাতে হয়। সরকার দীর্ঘদিন কোনও নতুন নিয়োগও করছে না।

parijat bandyopadhyay government hospital outdoors hospital opd hospital outdoor patients massive irregularities outdoor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy