Advertisement
E-Paper

মেয়রের ব্লিচিং তোপে অফিসার

পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়র বৈঠকে বলতে থাকেন, তিনি শুধু মেয়র বা মন্ত্রী নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদাধিকারীও।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:০২
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ব্লিচিং বিতর্কে ফের সরগরম কলকাতা পুরসভা। মশা মারার কাজে ব্লিচিংয়ের কোনও ভূমিকা না থাকলেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক সময়ে অনেক কিছুই করতে হয় বলে জানিয়ে দিলেন পুরবোর্ডের কর্তা। বুধবার বিকেলে মেয়র পরিষদের বৈঠক ছিল। সেখানে শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ভর্ৎসনা করেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, কেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর থেকে ব্লিচিংয়ের ব্যবহার নিয়ে ‘টেকনিক্যাল’ ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে?

পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়র বৈঠকে বলতে থাকেন, তিনি শুধু মেয়র বা মন্ত্রী নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদাধিকারীও। রাজনীতিতে এমন অনেক কিছুই করতে হয়, যা ‘প্রতীকী’। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার খাতিরেই তা করা প্রয়োজন বলে বুঝিয়ে দেন তিনি। ওই অফিসারকে লক্ষ করে তিনি প্রশ্ন করেন, অত টেকনিক্যাল বিষয় জানানোর দরকার কী ছিল? মশা মারার কাজে ব্লিচিং ছড়ানো যে বিজ্ঞানসম্মত নয়, এই ঘটনার পরে সেই সংক্রান্ত প্রচারে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মুখে কার্যত কুলুপ এঁটে দেওয়া হল বলেই মনে করছেন অনেকে।

কিন্তু ব্লিচিং ছড়াতে আর মশা মারার ধোঁয়া দিতে কেন ঝুঁকলেন মেয়র-সহ একাধিক কাউন্সিলর?

এর পিছনেও সেই ‘রাজনৈতিক ফায়দা’র তত্ত্ব। শাসক দলের একাধিক কাউন্সিলর (যাঁরা মশা মারার কাজে ব্লিচিং ছড়ানোর বিপক্ষে) জানান, এর সূচনা যাদবপুরে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর উদ্যোগ দেখে। কলকাতা পুরসভার যাদবপুর, টালিগঞ্জ, বাঁশদ্রোণী এলাকায় এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি। মূলত পুরসভার ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর বরোয় আক্রান্তের সংখ্যাও এক সময়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ডেঙ্গি নিয়ে শহরে আতঙ্ক যখন বাড়ছে, সে সময়ে সুজনবাবু পার্টির লোক নিয়ে ব্লিচিং ছড়ানো শুরু করেন। সেই দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে আসতেই শাসক দলের কাউন্সিলরেরাও অস্বস্তিতে পড়েন। তাঁদেরও কিছু একটা করতে হবে, তা না হলে স্থানীয় মানুষ বুঝতেই পারবে না, ডেঙ্গি প্রতিরোধে তাঁদেরও ভূমিকা রয়েছে। কেউ কেউ পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করে জানাতে থাকেন, তাঁরাও ব্লিচিং ছড়াতে চান। দফতর জানিয়ে দেয়, ব্লিচিং দিয়ে মশা মারা যায় না। আর এটা যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হয়।

তখনই সুজনের প্রসঙ্গ তুলে একাধিক কাউন্সিলর মেয়রের কাছে আর্জি জানান। এর পরেই মেয়র বেহালার পর্ণশ্রীতে তাঁর ওয়ার্ডে ব্লিচিং ছড়ান। বাঁধ ভাঙে শাসক দলের অন্য কাউন্সিলরদেরও। মেয়র ব্লিচিং ছড়াচ্ছেন দেখে সতীর্থ একাধিক কাউন্সিলরও উৎসাহিত হয়ে ওঠেন। বেহালার একাধিক ওয়ার্ডে, যাদবপুরেও সেই কাজ চলে। আর রাজাবাজারের কাছে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাস্তার পাশে মশা মারতে ধোঁয়ার যন্ত্র চালান। যা অস্বাস্থ্যকর এবং অবৈজ্ঞানিক। আর এ সবে সামিল হতে হয়েছে সেই পুরকর্মীদেরও, যাঁরা এত দিন তা করেননি অবৈজ্ঞানিক জেনেই। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, এখন মশা মারার বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার কাজ ধাক্কা খাচ্ছে। এক-এক জন কাউন্সিলর নিজেদের খেয়াল মতো কাজ করছেন। তাতে রাজনৈতিক ফায়দা হলেও ডেঙ্গিবাহী মশা নিধনের প্রচেষ্টা থমকে যাচ্ছে।

মেয়রকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমি যা করেছি, তা প্রশাসনের দেখার বিষয় নয়। অত ব্যাখ্যা দেওয়ারই বা কী আছে? ব্লিচিং তো সাফাইয়ের কাজেও লাগে।’’

Bleaching powder Sovan Chatterjee শোভন চট্টোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy