Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ওষুধ-দুর্নীতির জেরে অন্তর্ঘাতেই কি আগুন মেডিক্যালে

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল ঘোষের অফিসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসে। হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারেরা সেখানেই শর্ট সার্কিটের তত্ত্ব খারিজ করে দেন।

আগুন নেভানোর কাজ করছেন দমকল কর্মীরা। ছবি: এএফপি

আগুন নেভানোর কাজ করছেন দমকল কর্মীরা। ছবি: এএফপি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

আগুন নিভেছে। বন্ধ হয়েছে ধোঁয়াও। আর তার পরেই শুরু হয়েছে নতুন তরজা। প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ওষুধের সঙ্গে পুড়ে গিয়েছে ওষুধ কেনার সমস্ত নথি। নষ্ট হয়েছে সিসি ক্যামেরার বেশ কিছু ফুটেজ। তার মধ্যে জব্বর তরজা চলছে আগুনের উৎস নিয়ে। অন্তর্ঘাতের অভিযোগ উঠছে হাসপাতালের অন্দরেই।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসি বিভাগে আগুন লাগার আগেকার কয়েকটি ঘটনা পরম্পরার ভিত্তিতে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি মেডিক্যালে কয়েক কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। নির্দিষ্ট দু’টি ফার্মাসি কোম্পানিকেই ওষুধের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক বৈঠকে ওষুধ কেনাবেচা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কর্তাদের একাংশ। প্রশ্ন ওঠে, নির্দিষ্ট দু’টি সংস্থাকেই বরাদ্দ দেওয়া হল কেন? অভিযোগ, কেন বিশেষ দু’টি সংস্থার ভাগ্যে বরাতের শিকে ছিঁড়ল, তার জবাব বা যুক্তি তো সেই বৈঠকে দেওয়াই হয়নি। পেশ করা যায়নি ওষুধের কেনার নথিও। প্রশ্ন ওঠে, জবাব বা যুক্তি নেই কেন? কেন নেই নথি? পরবর্তী বৈঠকে ওষুধের হিসেব না-পেলে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতর এবং নবান্নের শীর্ষ স্তরের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব ওঠে। তার পরেই এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আগুন লাগে ফার্মাসি বিভাগে!

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বেলা ১২টায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ আগুন লাগার কারণ হিসেবে শট সার্কিটের কথা বলেন। তার পরেই শুরু হয় বিতর্ক। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল ঘোষের অফিসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক বসে। হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারেরা সেখানেই শর্ট সার্কিটের তত্ত্ব খারিজ করে দেন। তাঁরা হাসপাতালের কর্তাদের জানান, ধোঁয়া বেরোনোর পরেও ওই বিভাগে বিদ্যুৎ-সংযোগ ঠিক ছিল। তার নথি ও প্রমাণ রয়েছে। প্রয়োজনে তাঁরা সেই নথি পাঠাবেন স্বাস্থ্য দফতরে। ওই বৈঠকে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখার দাবিও ওঠে। কর্তাদের একাংশ জানান, ফুটেজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের জেরেই কম্পিউটারের তথ্য হারিয়ে যাওয়ার তত্ত্বে জোর দিচ্ছেন অনেক কর্তা। তার পরেই হাসপাতালের একাংশ অভিযোগ তোলেন, এ দিনের অগ্নিকাণ্ডের পিছনে আছে অন্তর্ঘাত।

সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম-সহ চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠন মেডিক্যালে অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা জানিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন অধ্যক্ষ এবং স্বাস্থ্যসচিবের কাছে। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, হাসপাতালের ওষুধ জোগান নিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে একাধিক বার প্রশ্ন উঠছে। সম্প্রতি ওষুধ জোগানের বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে সদুত্তর না-থাকায় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে রাজি নন। মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মল মাজি বলেন, ‘‘দমকল ও পূর্ত দফতর অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখছে। হাসপাতালের তরফেও পৃথক তদন্ত কমিটি তৈরি করে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখা হবে। এত ব়ড় বিপদ হয়ে গেল। তাই হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ বৈঠক করছেন। পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE