শিপ্রাদেবীকে পুলিশের মারধরের সেই দৃশ্য। ফাইল চিত্র
দুই পুলিশকর্মী সাসপেন্ড হয়েছেন। এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি গিয়েছে। শুক্রবার জগৎপুর বাজারে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে পুলিশের বেধড়ক মারধরের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এটাই। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু পুলিশ নয়, পরিবার-প্রতিবেশীরাও কি তাঁর প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল ছিলেন? এক জন মনোরোগীর প্রতি দায়িত্ব কি ‘কমিউনিটি’-ও এড়িয়ে যেতে পারে?
দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় থাকার জেরে শিপ্রাদেবীর পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়েছে বলে অনুমান মনোবিদদের। চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘মানসিক রোগী নিজে চিকিৎসকের কাছে সচরাচর আসেন না। পরিজনেরা সমস্যার কথা বুঝতে পেরে কেন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাননি? পরিবারের পাশাপাশি ‘কমিউনিটি’রও একটা ভূমিকা থাকে। যদিও আমরা তা ভুলতে বসেছি।’’
পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীনকে নিরস্ত করার প্রশিক্ষণ পুলিশের থাকে। কিন্তু গতকালের ঘটনায় তার ছিটেফোঁটা আভাস পাওয়া যায়নি। তদন্তের পরে প্রয়োজনে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় প্রতিবন্ধীদের একটি সংগঠনের তরফে বাগুইআটি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
বছর দশেক আগে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন স্বামী গোপাল হালদার। তা দেখার পর থেকেই মানসিক সমস্যা শুরু হয়েছিল শিপ্রার। কিন্তু কেউ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। ফেলে রাখা মনোরোগ যে কী চেহারা নিতে পারে, শুক্রবারের ঘটনা তারই প্রমাণ বলে মনে করছেন অনেকে। আপাতত এনআরএস-এর মনোরোগ বিভাগে ভর্তি শিপ্রাদেবী।
শনিবার জগৎপুরের বাসিন্দাদের একাংশ জানালেন, শিপ্রা এলাকার এক ধনী পরিবারের ছোট বৌ। স্বামীর মৃত্যুর পরে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বিবাদ হতো। তাই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন। স্বামীর মাংসের দোকান চালাতেন তিনি। গোপালবাবুর গয়নার দোকানও ছিল। আপাতত তা বন্ধ। এ দিন স্থানীয় বাসিন্দা স্বাতী দত্ত বলেন, ‘‘পাড়ার লোকেরা শ্বশুরবাড়ির লোকদের অনেকবার বলেছে, ওঁকে ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু ওঁরা বলেছেন, পাগলের দায়িত্ব নেবেন না।’’ আর এক বাসিন্দা জিতেন সমাদ্দারের কথায়, ‘‘পরিবার যদি দায়িত্ব না নেয়, তাহলে কে নেবে?’’ শুক্রবার শিপ্রাদেবীর বিরুদ্ধে চপার হাতে যে শিশুটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে, তার মা সুমিত্রা পোদ্দার বলেন, ‘‘বাড়ির লোক চিকিৎসা করায়নি কেন? আমার বাচ্চার কত বড় বিপদ হতে পারত, ভেবে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।’’
শিপ্রাদেবীর বড় ভাসুর বরুণ হালদারের ছেলে বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক নেই। এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’’ বছর খানেক আগে শিপ্রাদেবীর মেয়ে মামণি হালদারের বিয়ে হয়। তিনি কেন মায়ের চিকিৎসা করাননি সেই প্রশ্নও তুলছেন প্রতিবেশীদের একাংশ। যদিও মামণি বলেন, ‘‘ওষুধ দেওয়া হতো। হয়তো ওষুধ খাননি, তাই এমন করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy