Advertisement
E-Paper

কিছু আশঙ্কার ছায়া, তবে সামাজিক লাভই বেশি

বিশ্বজোড়া ঝড় উঠেছে যৌন হিংসা ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে, বিশেষত কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপরে হওয়া হেনস্থার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নতুন নয় মোটেই। কিন্তু এর আগে যৌন হেনস্থা বন্ধের এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবির এমন ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়নি।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪১

বিশ্বজোড়া ঝড় উঠেছে যৌন হিংসা ও নিগ্রহের বিরুদ্ধে, বিশেষত কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপরে হওয়া হেনস্থার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নতুন নয় মোটেই। কিন্তু এর আগে যৌন হেনস্থা বন্ধের এবং অভিযুক্তদের শাস্তির দাবির এমন ব্যাপক বিস্তার দেখা যায়নি।

বেশির ভাগ মানুষ #মিটু আন্দোলনকে স্বাগত জানালেও সামনে আসছে কিছু উদ্বেগও। অভিযোগকারিণীরা বেশির ভাগই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকের মত, সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সহজেই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়, কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই। সেই অভিযোগ কতটা গ্রহণযোগ্য, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এ ছাড়াও অনেকের আশঙ্কা, কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতিতে তৈরি হওয়া কোনও সম্পর্কের পরিণতি প্রত্যাশা মতো না হলে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগের জেরে সম্মানহানি হতে পারে অভিযুক্তের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যার অধ্যাপক শমিতা সেন বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করার বিষয়টি শুধু #মিটু-র ক্ষেত্রে হচ্ছে না। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগও সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয়। রাজনীতিকেরাও বিভিন্ন বক্তব্য রাখতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার করছেন।’’ লেখক বাণী বসুর মতে, #মিটু একটি সামাজিক আন্দোলন, ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ আইনি ভাবে গ্রহণযোগ্য না হলেও সেখানে মেয়েদের নানা অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসবেই। তিনি বলেন, ‘‘শুধু আইনি পথে যৌন হেনস্থা বন্ধ করা যাবে বলে আমি মনে করি না। বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি উঠে এলে মানুষ এ নিয়ে সচেতন হবেন।’’

প্রমাণ না দিয়ে অভিযোগ করার বিষয়টি প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায়ের মত, সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ জানানো তুলনায় সোজা। তবে সেখানে অভিযোগ জানালে কে, কোন অভিযোগকে কতটা গুরুত্ব দেবেন, সেটা আপেক্ষিক। আইনি পথে অভিযোগ না জানালে কোনও সংস্থা অভিযুক্ত কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন, আবার না-ও নিতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগের জেরে অভিযুক্তের তাৎক্ষণিক নিন্দা হতে পারে, সামাজিক সম্মানহানি হতে পারে। আবার কিছু দিন পরে

মানুষ সেটা ভুলেও যেতে পারেন বলে মত প্রশান্তবাবুর।

আইনি পথে অভিযোগ করতে গেলে ভোগান্তির আশঙ্কাতেই কি সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ আছড়ে পড়ছে? আইনজীবী কল্লোল রায় জানান, ‘‘কর্মক্ষেত্রে কাউকে হেনস্থা করা হলে তিনি প্রথমেই সংস্থায় অভিযোগ জানাতে পারেন। সংস্থা ব্যবস্থা না নিলে থানায় বা এসপি-র কাছে যেতে পারেন নির্যাতিতা। কোনও অফিসার অভিযোগ নিতে না চাইলে বা ঠিক অভিযোগ নথিবদ্ধ না করতে চাইলে তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা যায়।’’ এতে নির্যাতিতার হয়রানি কি আরও বাড়বে না? কল্লোলবাবু বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি এ বিষয়ে আগের থেকে অনেক বদলেছে। তা ছাড়া, যৌন হেনস্থার অভিযোগের ক্ষেত্রে নির্যাতিতার বয়ানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ধারাবাহিক,

সঙ্গতিপূর্ণ বয়ানই এ ক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে গণ্য হয়।’’

তবে দু’জন প্রাপ্তবয়স্কের সম্মতিতে হওয়া সম্পর্কের পরিণতির জেরে ব্যক্তিগত কোনও অসন্তুষ্টি বা হতাশাকে #মিটু-র সঙ্গে মিশিয়ে ফেললে চলবে না বলে মনে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক সংযুক্তা দাশগুপ্ত। কোনও অভিযোগ ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হলে তদন্তের আবেদন জানাতে পারেন অভিযুক্তও। তবে তিনি বলেন, ‘‘যিনি অভিযোগ করছেন, তিনি বোকা নন। তাঁর পরিবার আছে, কাজের একটা ক্ষেত্র রয়েছে, তাঁর সামাজিক পরিচয়ও রয়েছে। সম্মানহানি হওয়ার আশঙ্কা তাঁর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’’

শমিতা সেন এবং বাণী বসু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মানুষ মাত্রেই সুযোগসন্ধানী। কাজেই কেউ প্রতিহিংসাবশত অভিযোগ করতে পারেন, এই আশঙ্কা আছে। কিন্তু যে কোনও বিপ্লবের পিছন পিছন এই সব সমস্যা আসে। তাই কয়েক জনের জন্য পুরো আন্দোলনটা নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না। শমিতা সেন পাল্টা প্রশ্ন করছেন, ‘‘পরিস্থিতির সুযোগ তুলতে চাওয়ার মানসিকতা তো #মিটু আন্দোলনে সীমাবদ্ধ নয়। তা হলে শুধু মেয়েদের আন্দোলনের ক্ষেত্রেই এই সব যুক্তির অবতারণা করা হয় কেন?’’

এক জন নারী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলছেন, তা সাহস জোগাচ্ছে আরও অনেককে। কথা বলার এই জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছে #মিটু আন্দোলন। কিছু আশঙ্কার ছায়া পড়লেও লাভের দিকটিই তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শমিতা যেমন বলছেন, ‘‘এই আন্দোলনের আওতায় কী কী আসা উচিত, সেই বিচারে না গিয়ে বলা যায় এতে সামাজিক একটা বিরাট লাভ হল। নারী-পুরুষ সর্ম্পকের অনেক খুঁটিনাটি এতে আলোচিত হচ্ছে। ভুল বোঝাবুঝির জায়গাগুলি সামনে আসছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা সেটা ভাল ভাবে নিতে পারলে আখেরে লাভ সমাজেরই।’’

MeToo Woman Harassment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy