কে বলবে দেশের প্রথম মেট্রো শহর কলকাতা! হালফিলের মেট্রো যেন নোয়াপাড়া লোকাল!
ঘড়ির কাঁটা ধরে চলার সাহেবি-সময়ানুবর্তিতা চুকেবুকে গিয়েছে সেই কবেই। এখন ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে নিজের ছন্দে। আর মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থেকেই কেটে যায় সময়। মেট্রোর দেখা মেলে না। নিত্যযাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, মেট্রো আর শিয়ালদহ থেকে শহরতলিগামী লোকাল ট্রেনের মধ্যে তফাত পাচ্ছেন না তাঁরা! ট্রেনের মতো অগুনতি লাইন, জটিল পয়েন্ট বা লেভেল ক্রসিংয়ের ঝক্কি না থাকলেও মেট্রোর সময়ানুবর্তিতা ঠেকেছে তলানিতে।
ব্যস্ত সময়ই হোক বা ভরদুপুর, মেট্রো স্টেশনে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করাই এখন ‘রীতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। কুঁদঘাটের বাসিন্দা, কর্পোরেট চাকুরে শৌনক বসুর অফিস যেতে ভরসা মেট্রো। সম্প্রতি রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নিউ গড়িয়াগামী মেট্রো ধরতে ময়দান স্টেশনে যান তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘১৫ মিনিটেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়। দমদমগামী মেট্রো একের পর এক বেরিয়ে যাচ্ছে অথচ টালিগঞ্জগামী মেট্রোর দেখা নেই।’’ জানাচ্ছেন, সেই মেট্রো যখন এসেছিল, তা ভিড়ে ঠাসা। ফলে শৌনক তো বটেই, মেট্রোয় উঠতে পারেননি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকাংশ যাত্রীই।
সময়ে মেট্রো না-আসার কথা শুনিয়েছেন আর এক যাত্রী মধুমন্তী বিশ্বাস। দুপুর সাড়ে ৩টের মেট্রোয় পার্ক স্ট্রিট যেতে দমদম স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বলছেন, ‘‘ঘড়িতে ট্রেন আসার সময় ছ’মিনিট করে করে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই।’’
গড়িয়ার বাসিন্দা শুভ্র ঘোষরায়ের অভিজ্ঞতা আবার উল্টো! তাঁর কথায়, “সকালে ৯টা নাগাদ দমদমগামী মেট্রো ধরার জন্য দাঁড়িয়েছি। আগেরটা অল্পের জন্য ফস্কেছি। পরের মেট্রো ৫ মিনিটের বদলে এলো ৩ মিনিটের মধ্যে। ট্রেনও তুলনায় ফাঁকা।”
গত জুনে মেট্রোতে পর পর বিভ্রাটের ঘটনা ঘটলেও তার পর থেকে মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। কিন্তু যাত্রীদের দাবি, তার পরেও সময়মতো মেট্রো চলার বালাই নেই। ঠিক কত সেকেন্ড পরে মেট্রো আসছে, তা জানাতে মেট্রো স্টেশনগুলিতে টাইমার বসেছে। সব মেট্রো স্টেশনেই সেই টাইমারের সময় কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকে। ফের গোনা শুরু হয়। কিন্তু মেট্রো আর আসে না।
মেট্রোকর্তাদের দাবি, দমদম, এসপ্ল্যানেড, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাটের মতো কিছু স্টেশনে যাত্রীদের অস্বাভাবিক ভিড় হয়। কখন ওই ভিড় বাড়বে, তা আগাম অনুমান করা অসম্ভব। ফলে স্টেশনগুলিতে ভিড়ের চাপে অনেক সময়ে কামরার দরজা বন্ধ হতে চায় না। সময় বেশি লাগে। এরই প্রভাব পড়ে পিছনের ট্রেনগুলিতে। একটি মেট্রো পর পর দু’তিনটি স্টেশনে দেরি করলেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। আবার ট্রেনে দেরির কারণে ব্যস্ত স্টেশনে লাফিয়ে লাফিয়ে আরও ভিড় বাড়তে থাকে। মেট্রোর এক কর্তার কথায়, “এক বার দেরির প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়লে সারাদিনে তার থেকে বেরোনো শক্ত।” ওই কর্তা আরও জানাচ্ছেন, মেট্রোতে যে হারে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে, তাতে সিগন্যালিং এবং ট্রেন নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তিতে বদল না করলে এই সমস্যা মেটানো শক্ত।
এ প্রসঙ্গে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিছু সমস্যা আছে। কিন্তু তার পরেও কাজের দিনে ৩০০টি ট্রেন চালানো হয়। সংখ্যা কমানো হয়নি। সমস্যা সত্ত্বেও মেট্রোয় যাত্রী প্রতিদিনই বাড়ছে। নতুন রেক চালু হলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy