Advertisement
১০ মে ২০২৪

যত্রতত্র ঝুপড়ি কেন, সরকারকে দুষলেন মন্ত্রীই

শহরের যত্রতত্র ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। এ বার একই প্রশ্ন তুললেন খোদ রাজ্যের এক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এ নিয়ে বিঁধেছেন রাজ্য সরকারকেই। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগের তির পুলিশের দিকেও। বুধবার রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয় ই এম বাইপাস সংলগ্ন ফুলবাগানের একটি ঝুপড়ি-বস্তি। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাধনবাবু বলেন, “এখান দিয়ে মেট্রো যাবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পরপর ঝুপড়ি বসানো হচ্ছে। কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।

অগ্নিকাণ্ডের পরে। বৃহস্পতিবার, ই এম বাইপাসের ফুলবাগানে। —নিজস্ব চিত্র

অগ্নিকাণ্ডের পরে। বৃহস্পতিবার, ই এম বাইপাসের ফুলবাগানে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

শহরের যত্রতত্র ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। এ বার একই প্রশ্ন তুললেন খোদ রাজ্যের এক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে এ নিয়ে বিঁধেছেন রাজ্য সরকারকেই। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগের তির পুলিশের দিকেও।

বুধবার রাতে আগুনে ভস্মীভূত হয় ই এম বাইপাস সংলগ্ন ফুলবাগানের একটি ঝুপড়ি-বস্তি। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাধনবাবু বলেন, “এখান দিয়ে মেট্রো যাবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পরপর ঝুপড়ি বসানো হচ্ছে। কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা কী হচ্ছে!” পাশেই তখন দাঁড়িয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুনন্দা গুহ।

কলকাতার রাস্তার পাশে ঝুপড়ি উচ্ছেদ পুরসভার দায়িত্ব। অনেকেই বলছেন, এ দিন ঝুপড়ি বসানো নিয়ে কলকাতা পুরসভাকেই কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “ঝুপড়ি বসানোয় কে বা কারা মদত দিচ্ছে, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে পুলিশ-প্রশাসনের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা উচিত।” পুর-ভোটের আগে সাধনবাবুর এমন মন্তব্য রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যান। তিনি বলেন, “মন্ত্রীর মন্তব্য আমার শোনা হয়নি। তাই কিছু বলতে পারছি না।” তবে লালবাজারের একাধিক পুলিশকর্তা বলেন, পুরসভার অনুমতি বা মদত ছাড়া শহরে দীর্ঘদিন কোনও ঝুপড়ি থাকতে পারে না। নিয়মানুযায়ী, এ বিষয়ে পুরসভা অভিযোগ জানালে তখন পুলিশ ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতে পারে। কিন্তু পুলিশ সেধে কিছু করতে গেলে তাকে রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়।

মন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে কী বলছে কলকাতা পুরসভা? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এক দিনেই তা মিটে যাবে, এমন মনে করার কারণ নেই।” পুরসভা সূত্রের খবর, পূর্ব ও দক্ষিণ কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় পরপর ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। এই ঝুপড়িবাসীদের অধিকাংশই দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দা। ছোটখাটো কাজের সূত্রে এখানে থাকেন। পুরসভার বিরোধী নেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “আগুনে পুড়ে যখন কিছু মানুষ সর্বস্বান্ত, সেই সময়ে তাঁদের উচ্ছেদের কথা বলা মানবিক নয়।”

এ দিন সাধনবাবুকে ঝুপড়িবাসীরা জানান, তাঁদের কারও বাড়ি পাথরপ্রতিমা, কারও ক্যানিংয়ে। তা শুনে মন্ত্রী বলেন, “তোমাদের এখানে ভোটার কার্ড নেই। অথচ এ ভাবে থাকছ! ঝুপড়িতে কাগজ-প্লাস্টিকের মতো দাহ্য পদার্থ জমা করছ!” এতেই ক্ষেপে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ঝুপড়িবাসীরা। পরে তাঁদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে শান্ত করেন মন্ত্রী।

যদিও পুনর্বাসন এই সমস্যার সমাধান নয় বলেই সাধনবাবু মনে করেন। বছর কয়েক আগে উল্টোডাঙার বাসন্তী কলোনিতে আগুন লাগে। সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। এ দিন সাধনবাবু বলেন, “এ বারও ৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া নিয়ে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। তার পরেও যে ওই ফাঁকা জায়গায় ঝুপড়ি গজিয়ে উঠবে না, তা কে বলতে পারে! এই ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠা বন্ধ করতে হবে।”

বস্তুত, শহরের ফাঁকা জায়গায় ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলিই ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠায় মদত দেয় বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের ভোটার ও রেশন কার্ডেরও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এ দিন পোড়া ঝুপড়ির বাসিন্দারা অনেকেই দাবি করেছেন, তাঁদের কলকাতার ভোটার ও রেশন কার্ড আছে।

ঝুপড়িবাসীদের নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই দেখা গিয়েছে এ দিনও। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটনাস্থলে যান বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। বিজেপি নেতা অশোক সরকারের নেতৃত্বে সকাল থেকেই খিচুড়ি-লাবড়ার লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল ওই এলাকায়। শহরে পরপর ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠা নিয়ে শমীকবাবু মন্তব্য না করলেও আগুনের পিছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আগুন লাগার পিছনে কোনও সংস্থার হাত আছে কি না, তার তদন্ত হোক।” সাড়ে ১১টা নাগাদ হাজির হন মন্ত্রী সাধনবাবু। বিজেপিকে টেক্কা দিতে স্থানীয় তৃণমূলও ঝুপড়িবাসীদের জন্য ভাত-ডাল-তরকারির আয়োজন করে। খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবিরও। রাতের আগুনে গোটা ঝুপড়িটাই পুড়ে গিয়েছে। বাসিন্দারা বলছেন, বাসনও গলে গিয়েছে। তাই পেটের দায়ে এখন এ সব শিবিরই ভরসা তাঁদের।

সকাল থেকেই পোড়া ঝুপড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন সিপিএমের বস্তি ফেডারেশনের নেতারা। তৃণমূল-বিজেপির পরে ঝুপড়িবাসীদের আশ্বস্ত করেন তাঁরা। কয়েক জন নেতা বলেন, “এখন যে যা বলছেন, তোমরা মেনে নাও। পরে বোঝা যাবে।” বস্তি ফেডারেশনের নেতা শৈলেন্দ্রনাথ ঝা বলেন, “কী ভাবে আগুন লাগল, আমরা খতিয়ে দেখছি।” তবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধ ঝুপড়ি গজিয়ে ওঠা নিয়ে মন্তব্য করেননি তিনি।

রাজনৈতিক দলগুলির আনাগোনা নিয়ে পুনম হালদার নামে এক ঝুপড়িবাসী বলেন, “রাতে যখন ঘরগুলো পুড়ছিল, তখন তো কোনও নেতা আসেননি। সকালে এসে পোড়া ঘরের উপরেই নিজেদের পতাকা লাগাতে শুরু করেন।” নেতাদের টানাপড়েনের পাশাপাশি দমকলের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ঝুপড়িবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আগুন লাগলেও দমকল আসতে দেরি করেছে। গাড়িতে পর্যাপ্ত জলও ছিল না। দমকল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE