Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভাঙা হাতের অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে মৃত্যু কিশোরের

এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার দশ বছরের পুত্র হারা পরিবারের কাছে। পেশায় দর্জি বাবা ও মা যেন এখনও বিশ্বাস করতেই পারছেন না যে, ভাঙা হাত জুড়তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে মারাই গেল তাঁদের ছোট ছেলে।

মিজান আলি

মিজান আলি

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

হাড় জুড়তে গিয়েই কি প্রাণ গেল!

এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার দশ বছরের পুত্র হারা পরিবারের কাছে। পেশায় দর্জি বাবা ও মা যেন এখনও বিশ্বাস করতেই পারছেন না যে, ভাঙা হাত জুড়তে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে মারাই গেল তাঁদের ছোট ছেলে।

স্কুলে শীতের ছুটি চলছে। তাই অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বছর দশেকের মিজান আলি। কিন্তু হঠাৎ সাইকেল থেকে পড়েই ঘটে বিপত্তি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাঁ হাতে গুরুতর চোট পায় মিজান। গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মিজানের বাঁ হাত ভেঙে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। তাই মেডিক্যালে রেফার করা হয় তাকে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে তাকে ভর্তি করা হয়। রাত বারোটা নাগাদ অস্থি বিভাগের চিকিৎসক মিজানের অস্ত্রোপচার করেন। বুধবার ভোরে মারা যায় সে।

বৃহস্পতিবার মিজানের পরিবার হাসপাতালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই মিজান মারা গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচার করার সময়ে কোনও গোলমাল হয়েছে। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা না করেই অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের আগে অজ্ঞান করার সময়ে ওষুধের পরিমাণে কোনও গোলমাল হয়েছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিজনেদের।

এ দিন মৃতের দাদা আজাদ আলি বলেন, ‘‘হাত ভেঙে যাওয়ার পরেও ভাই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছে। মেডিক্যালে ভর্তির পরেও সে ঠিক ছিল। সামান্য ভাঙা হাত জুড়তে গিয়ে কী ভাবে ছেলেটা মরে গেল! চিকিৎসায় গাফিলতি না থাকলে এমন হতেই পারে না।’’ পরিবারের আর এক সদস্য নাসিম আলির কথায়, ‘‘অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগে কোনও শারীরিক পরীক্ষা করা হয়নি। হয়তো কোনও গোলমাল হয়েছে।’’

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, যে কোনও অস্ত্রোপচারের আগেই রোগীর হৃদ্‌যন্ত্র পরীক্ষা করা হয়। সেইমতো রোগীকে অজ্ঞান করার ওষুধ দেওয়া হয়। মিজানের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মেনে চলা হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা জরুরি।

এ দিন মৃতের পরিজনদের অভিযোগ, মিজান মারা যাওয়ার পরে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও তাঁদের কিছুই জানাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রোপচারের পরে কর্তব্যরত হাসপাতাল কর্মী জানিয়েছিলেন, মিজান সুস্থ আছে। অস্ত্রোপচারে কোনও রকম জটিলতার কথা তাঁদের জানানো হয়নি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে তাকে আইসিইউ-তে রাখা হয়। বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ বাইরে থেকে মিজানকে দেখার অনুমতি দিলেও কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। এর পরে ন’টা নাগাদ তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। তখন তার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।

হাসপাতালের এক কর্তা এ দিন জানান, দেহের কোনও অঙ্গের হাড় ভেঙে কিংবা বাইরে থেকে আঘাতের জেরে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে পুলিশকে জানানো হয়। মিজানের ক্ষেত্রেও পুলিশকে জানানো হয়েছিল। নিয়ম মেনে তার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই সবটা বোঝা যাবে। শিখাদেবী অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে হাসপাতালের আর এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়েছে। সবটা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজন হলে তদন্ত কমিটি তৈরি করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Surgery Death Mizan Ali Minor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE