Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সল্টলেকে নিজের বিয়ে রুখল কিশোরী

কার্ড ছাপা হয়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বরের গোড়ায় বিয়ে। কিন্তু রুখে দাঁড়াল নাবালিকা। জানিয়ে দিল, ১৮ বছরের আগে বিয়েতে তাঁর মত নেই।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

কার্ড ছাপা হয়ে গিয়েছিল। ডিসেম্বরের গোড়ায় বিয়ে। কিন্তু রুখে দাঁড়াল নাবালিকা। জানিয়ে দিল, ১৮ বছরের আগে বিয়েতে তাঁর মত নেই।

গ্রাম-গঞ্জের দিকের এই ছবি এ বার খাস সল্টলেকেও! সল্টলেকের বাসিন্দা স্নিগ্ধা মজুমদারের বাড়িতে দীর্ঘ দিন ধরে পরিচারিকার কাজ করেন কৃষ্ণা মণ্ডল। কার্যত বাড়ির সদস্য হিসেবেই পরিবার নিয়ে সেখানে থাকেন তিনি। তাঁর বড় মেয়ের যখন ছ’বছর বয়স, তখন থেকে সে-ও সল্টলেকেরই বাসিন্দা।

১৭ বছরের সেই মেয়েরই বিয়ে ঠিক করায় প্রথমে মৌখিক আপত্তি জানায় সে। তাতে কাজ না হওয়ায় সল্টলেক (দক্ষিণ) থানায় বাবা-মায়ের বিরুদ্ধেই সম্প্রতি অভিযোগ দায়ের করে ওই কিশোরী। অনড় বাবা-মা পুলিশের হস্তক্ষেপেও বিয়ে বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায় শেষে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মিনু চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করে সেই মেয়ে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিনুদেবীর হস্তক্ষেপে আপাতত আটকানো গিয়েছে বিয়ে। তিনি ওই কিশোরীর বাড়ি গিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। বুধবার মিনুদেবী বলেন, ‘‘এই কাজে পুলিশ এবং ওই ব্লকের বাসিন্দারা আমাকে সাহায্য না করলে এত সহজে বিষয়টি মিটত না। ওই কিশোরীর বাবা-মাকে বলা হয়েছে, এটা বেআইনি। জোর করলে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।’’

গ্রামে-গঞ্জে এমন বহু নাবালিকারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে চুপিসাড়ে। কোথাও কোথাও হচ্ছে প্রতিবাদ। কখনও নাবালিকা নিজে, কখনও তার স্কুলের সহপাঠী বা দিদিমণি, কখনও পাড়া-প্রতিবেশি রুখে দাঁড়ালে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হচ্ছে সেই বিয়ে।

বুধবার ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সল্টলেকের মতো আধুনিক পরিবেশে বড় হয়ে কাছেই বেলেঘাটার স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পরে বিয়ে করে গ্রামে গিয়ে সংসার করায় তার ঘোরতর আপত্তি। তার উপরে বয়স এখন মাত্রই ১৭ বছর। আরও পড়াশোনা করতে চায় সে। এই অবস্থায় বর্ধমানের কেতুগ্রামে, যেখানে কৃষ্ণার স্বামী সপ্তম মণ্ডলের বাড়ি, সেখানকার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেন বাবা-মা।

যে বাড়িতে ওই কিশোরী থাকে, সেই বাড়ির কর্ত্রী স্নিগ্ধাদেবীও এ দিন বলেন, ‘‘যা হয়েছে, ভালর জন্যই হয়েছে। নাবালিকার বিয়েতে আমারও মত ছিল না।’’ জোর করে কেন মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন?

কিশোরীর মা কৃষ্ণাদেবীর আশঙ্কা অবশ্য অন্যত্র। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ে বড় হচ্ছে। স্কুলে, টিউশনে, গানের ক্লাসে গিয়ে দেরি করে বাড়ি ফিরছে। কার কার সঙ্গে মেলামেশা করছে, আমরা জানতে পারছি না। আমাদের পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। ফলে, আশঙ্কায় কাটছে দিন। এখন তো কত রকম শুনি। নাবালিকাদের পাচার করে দিচ্ছে।’’

সেই আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেতেই পাকাপাকি ভাবে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান মা। কাউন্সিলর মিনুদেবীর কথায়, ‘‘সমাজের গভীরতর এই অসুখ, মায়ের এই আশঙ্কার জন্য আমরাও অনেকাংশে দায়ী। তবে, মেয়েকে ভাল-মন্দ চিনিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও তো বাবা-মাকেই নিতে হবে। সবটাই মন্দ, এমনটাও তো ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor marriage Saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE